Advertisement
E-Paper

বাড়ি, মজুরি, রাস্তার পর পরিচয়পত্রেরও বঙ্গ মডেল! আধার নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতেই পাল্টা চাল মমতার

মতুয়া এলাকায় আধার কার্ড সংক্রান্ত ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে গত ৭২ ঘণ্টায়। মতুয়াদের একাধিক সঙ্ঘাধিপতিও ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁদের উদ্বেগের কথা গোপন করেননি। এ নিয়ে চাপে বিজেপিও।

Mamata Banerjee gives message of Bengal model of Identity Card in Aadhar controversy

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০০
Share
Save

‘মাদার ডেয়ারি’ হয়েছে ‘বাংলার ডেয়ারি’। ‘আবাস যোজনা’ হয়েছে ‘বাংলার বাড়ি’। এ বার কি তবে ‘বাংলার আধার’?

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তিনটি প্রকল্প নিয়ে গত দু’বছর ধরে বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কেন্দ্র বকেয়া না মেটানোয় সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা রাজ্যের টাকাতেই বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। এই প্রেক্ষাপটেই অভিন্ন পরিচয়পত্রেরও বঙ্গ মডেল করার কথা জানিয়ে দিলেন মমতা। যা লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ভাবে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন অনেকে।

আধার কার্ড বাতিল নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষের কাছে চিঠি পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন মমতা। যে সমস্ত মানুষের কাছে এই চিঠি আসছে, তাঁদের অভিযোগ শোনার জন্য নতুন পোর্টালও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁদের আধার বাতিল হয়েছে, তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। ব্যাঙ্ক বা অন্য কাজে কারও সমস্যা হবে না।’’

আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারির পাশাপাশি, কার্ড বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি দিয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতার অভিযোগ, আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিধি না মেনেই অনেকের আধার বাতিল করছে। যাঁদের মধ্যে তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষ রয়েছেন। মানুষের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানো এবং তাঁদের নানা পরিষেবা থেকে ‘বঞ্চিত’ করাই এর লক্ষ্য কি না, চিঠিতে তা-ও জানতে চেয়েছেন মমতা।

যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘অফিসিয়াল ত্রুটির জন্য কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে কথা বলেছি। আজ (সোমবার) রাতের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ সুকান্তের আরও দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে চাইছেন। আমি বলব, আপনারা কেউ ভয় পাবেন না।’’

সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনা করেই আধার নিষ্ক্রিয় করেছে। গরিব মতুয়াদের ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে। আসলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের লক্ষ্যেই এ সব করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে কোনও ভাবেই তা হতে দেব না।’’ বস্তুত, মতুয়া এলাকায় এই ঘটনায় গত ৭২ ঘণ্টায় তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মতুয়াদের একাধিক সঙ্ঘাধিপতিও ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁদের উদ্বেগের কথা গোপন করেননি। এমনিতে গত কয়েক বছর ধরেই মতুয়া মহলে বিজেপির প্রভাব অনেক বেশি। তবে কিছু কিছু জায়গায় তৃণমূলেরও প্রভাব রয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূলেরই প্রভাব ছিল সর্বত্র। কিন্তু ২০১৯ সালের আগে তাতে থাবা বসায় বিজেপি। মতুয়া মহলে উদ্বেগ তৈরি হওয়া বিজেপির মধ্যেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যে কারণে সুকান্ত থেকে শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তুনু ঠাকুরদের রাতারাতি ময়দানে নামতে হয়।

এই যখন পরিস্থিতি, তখম মমতাও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মতো পরিচয়পত্রেও রাজ্যের সিলমোহর দিতে চাইলেন। তা প্রশাসনিক ভাবে কতটা সম্ভব তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, মমতার এই বাংলার আধার কার্ডের কথা প্রাক ভোট পর্বে অর্থবহ। ইতিমধ্যেই ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি রাজ্য সরকার দেবে বলে ঘোষণা করেছেন মমতা। তার জন্য সরকার ও দল সমান্তরাল ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। ‘দূরত্ব’ ঘুচিয়ে তৃণমূল ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘সক্রিয়’ হয়েছেন। কেন্দ্র না-দিলে এপ্রিল মাসে ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি তৈরির টাকাও রাজ্য সরকার দেবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। সড়ক যোজনার বিকল্প হিসাবে ‘পথশ্রী’ প্রকল্প শুরু করেছিলেন মমতা। এ বারের রাজ্য বাজেটে ‘পথশ্রী-৩’ হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। এগুলির পাশাপাশি পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রেও মমতা বোঝাতে চাইলেন, ‘তোমরা বাতিল করলে, আমরা আমাদেরটা করে নেব।’

Mamata Banerjee Aadhar card

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}