মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর অব্যাহত। কেন্দ্র চায়, কলকাতা বিমানবন্দরের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে দ্বিতীয় বিকল্প বিমানবন্দর তৈরি করা হোক। রাজ্য চায়, বর্ধমানের অন্ডালে এখন যে বিমানবন্দর রয়েছে, সেটিকেই বিকল্প বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে। এখনও এর কোনও সুরাহা মেলেনি।
তবে, কোথাও গিয়ে রাজ্যের মনে হয়েছে, অন্ডাল বিমানবন্দর তথা বেঙ্গল অ্যারোট্রপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল)-এর পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়লে হয়তো কেন্দ্র অনেকটা ভরসা পাবে। তখন হয়তো অন্ডালকেই বিকল্প বিমানবন্দর হিসেবে মেনে নিতে পারবে। এমনিতেই অন্ডালের সূচনা লগ্ন থেকে তার অংশীদারি ছিল রাজ্য সরকারের। সেই অংশীদারির পরিমাণ এখন অনেকটাই বেড়েছে। এ বার রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিএপিএল-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ নিয়ে চাঙ্গি-সহ বিএপিএল-এর বেসরকারি অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আলোচনা চালাচ্ছিল রাজ্য। সরকারের অন্দরের খবর, মুখ্যসচিবকে বিএপিএল-এর চেয়ারম্যান করতে প্রত্যেকে সম্মতি দেওয়ায় প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিলমোহর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া বিএপিএল-এর পরিচালন পর্ষদে রাজ্যের অর্থ তথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার সচিব মনোজ পন্থ এবং শিল্পসচিব বন্দনা যাদবকেও রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর ডিরেক্টর পদের জন্য লোক খোঁজাও শুরু করেছে সরকার। প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এই নতুন ব্যবস্থায় বিএপিএল-এর পরিচালনায় রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। তাতে আখেরে উপকার হবে পরিকাঠামোর। বিকল্প বিমানবন্দর হিসেবে সরকারি নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
অন্ডালের সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ১৮৭ কিলোমিটার। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, বিকল্প বিমানবন্দর বর্তমান বিমানবন্দরের কাছাকাছি থাকা জরুরি। না হলে সংযোগকারী বিমান ধরতে সমস্যা হবে। বিদেশ ও দেশের অন্যত্র বিকল্প সব বিমানবন্দরই বর্তমান বিমানবন্দরের কাছে। অনেক ক্ষেত্রে একটি বিমানবন্দরে নেমে যাত্রীকে পরের উড়ান ধরতে বিকল্প বিমানবন্দরে যেতে হয়। উড়ান সংস্থার ক্ষেত্রেও পাশাপাশি দুই বিমানবন্দরের পরিকাঠামো তৈরিতে সুবিধা। ফলে অন্ডালের দূরত্ব এর অন্তরায়।
বিকল্প বিমানবন্দরের প্রস্তাব পেয়ে রাজ্যের তরফে প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনায় জমি খোঁজা শুরু হয়েছিল। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এক লপ্তে ১০০০ একর জমি কলকাতার কাছাকাছি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় রাজ্য নতুন করে কেন্দ্রকে জানাচ্ছে, সহজ সড়ক এবং রেল পরিকাঠামো থাকায় কলকাতা ও অন্ডালের মাঝের দূরত্ব নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। রাজ্যের দাবি, ঝাড়খন্ড, বর্ধমান এবং আশেপাশের জেলাগুলি থেকে বহু যাত্রী পাবে বিমানবন্দর। আবার পণ্য এবং যাত্রী বিমান পরিষেবা ভাগ করে দিলেও অন্ডালের পরিকাঠামো কার্যকর হবে। এখন সেখান থেকে স্পাইসজেটের উড়ান সপ্তাহে তিন দিন করে চেন্নাই ও মুম্বই যাচ্ছে। সপ্তাহে সাতদিন যাচ্ছে দিল্লি। গ্রীষ্মকালীন সূচিতে সেখান থেকে উড়ান শুরুর কথা ইন্ডিগোর।
মোট ১৮০০ একরের উপরে রয়েছে বিএপিএল। তার মধ্যে ৭০০ একরের উপর রয়েছে বিমানবন্দর। ১১০০ একর রয়েছে নাগরিক পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে। এই ১১০০ একরের মধ্যে ৬০০ একর এখনও অব্যবহৃত রয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘অন্ডাল নিয়ে বেসরকারি উড়ান সংস্থাগুলির মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। একদিকে কলকাতা বিমানবন্দর, আরেক দিকে দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান এলাকায় অন্ডাল, আবার উত্তরবঙ্গে বাগডোগরা—এই ত্রিমুখী পরিকাঠামো কেন্দ্রের কাছে যেমন ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে, তেমনই রাজ্যের বাণিজ্যিক এবং আর্থিক বিকাশে তা কার্যকর হবে। কেন্দ্রকে জানানো হচ্ছে, অন্ডালকে দ্বিতীয় বিমানবন্দর হিসাবে বিবেচনা করলে লোকসান হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy