Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bhabanipur Bypoll

Bhabanipur Bypoll: তৈরি আধাসেনা, নৌকাও

রাজনৈতিক লড়াইয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, প্রধান বিরোধী বিজেপি ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য দল।

ভোটের আগে জলমগ্ন ভবানীপুরের রাস্তায় আধাসেনার টহল। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ভোটের আগে জলমগ্ন ভবানীপুরের রাস্তায় আধাসেনার টহল। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

সব ভোটই রাজনৈতিক। তবে দুই লক্ষাধিক ভোটদাতার ভবানীপুরে আজ, বৃহস্পতিবারের ভোটযুদ্ধ যেন একই সঙ্গে ত্রিস্তরীয় চ্যালেঞ্জ— রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আর প্রাকৃতিক! রাজনৈতিক লড়াইয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, প্রধান বিরোধী বিজেপি ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য দল। প্রশাসনিক প্রস্তুতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থাকছে ৩৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কলকাতা পুলিশ। প্রাকৃতিক লড়াইয়ে নৌকা, বর্ষাতি আর ছাউনি নিয়ে চলেছে সাজসজ্জা। ভবানীপুরের তুলনায় মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে আজকের ভোটের জন্য আধাসেনা থাকছে প্রায় অর্ধেক।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোট-প্রস্তুতির শুরুতে ভবানীপুরে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কথা থাকলেও শেষ লগ্নে আরও ২০ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সঙ্গে থাকছেন কলকাতা পুলিশের অন্তত আড়াই হাজার কর্মী-অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে নিরাপত্তার দায়িত্বও তাদেরই সামলানোর কথা। অতিরিক্ত আধাসেনা প্রধানত টহলদারির দায়িত্বে থাকবে। ১৪৪ ধারা বলবৎ সব বুথেই।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) কার্যালয় জানিয়েছে, শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের ভোটার-সংখ্যা ভবানীপুরের থেকেও বেশি। ভোটকেন্দ্র ভবানীপুরে কম। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটে কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদের আইনশৃঙ্খলায় বাড়তি নজর রেখেছে কমিশন। অথচ শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা ভবানীপুর উপনির্বাচনে এত নিরাপত্তা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে। সিইও দফতর সূত্রের খবর, সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি ভবানীপুরের সব ভোট-চত্বরে নজর থাকবে মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের। সিসি ক্যামেরার সঙ্গে সব ভোটকেন্দ্রেই ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। অর্থাৎ ভোটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ভোটকেন্দ্রের ভোট-প্রক্রিয়ায় সরাসরি নজর রাখতে পারবেন কমিশনের কর্তারা।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকের ধারণা, এর অন্যতম কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরে প্রার্থী। গত বিধানসভা ভোটের দিন নন্দীগ্রামে গুরুতর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সুষ্ঠু ভোট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। সেই সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছে না কমিশন। এ বার ভবানীপুরেও প্রচারের শেষ লগ্নে বড় ধরনের গোলমালের উপক্রম হয়েছিল। তার পরে বিজেপি গোটা বিধানসভা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করার দাবি তোলে। সেই পথে কমিশন না-হাঁটলেও গত মঙ্গলবার থেকে ভবানীপুরের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ভোটারের থেকে বাহিনী বেশি রাখার অর্থ এখানকার ভোটারদের অপমান করা। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার মানুষ ভোট দিতে জানে। নিজের ভোট নিজেই দেয়। যোগ্য প্রার্থীকে জেতায়। বন্দুকধারী চারটে লোক দাঁড় করালে সেই ঐতিহ্য মুছে যাবে না। বরং মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। যারা এ ভাবে ভবানীপুরের ভোটারদের অপমান করছে, মানুষের রায়ে তারা তার যোগ্য জবাব পাবে। মমতা বিপুল ভোটে জিতবে।’’ উত্তরপ্রদেশে বাহিনী দরকার এবং সেখানে বাহিনীর ব্যবস্থা হোক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাজনৈতিক উত্তাপের প্রেক্ষিতে ভবানীপুরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় বাড়তি প্রস্তুতি রাখছে প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন। সেই অতিরিক্ত বন্দোবস্তের মধ্যে থাকছে নৌকা, রেনকোট বা বর্ষাতি, ছাউনিও।
বুধবার ভোটযন্ত্র গ্রহণ এবং ভোটকর্মীদের চূড়ান্ত প্রস্তুতির ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে হয়েছে কমিশনকে। বৃহস্পতিবার, নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ এবং ভোটারদের গতিবিধি বাধাহীন রাখতে পুলিশ, পুরসভা, বিদ্যুৎ বিভাগের পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকেও সক্রিয় রাখা হচ্ছে।
জেলা নির্বাচনী অফিসারের (ডিইও সাউথ) দফতর জানিয়েছে, এ দিন সকাল থেকেই ভোটের নানাবিধ উপকরণের পাশাপাশি বৃষ্টি থেকে ভোটযন্ত্র বাঁচাতে সুরক্ষার বাড়তি বন্দোবস্ত করা হয়। প্রত্যেক ভোটকর্মীর জন্য রেনকোট বরাদ্দ করা ছাড়াও বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সম্ভাব্য লাইনের মাথায় আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথায় কোথায় জল জমতে পারে, কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে তা খতিয়ে দেখেছেন সেক্টর অফিসারেরা। জল জমা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির নিকাশি পথ পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে। পাম্পিং স্টেশনগুলি সর্বক্ষণ চালু রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে পুরসভাকে। বেশি জল জমার প্রবণতা আছে, এমন এলাকাগুলিতে বাড়তি পাম্পেরও ব্যবস্থা করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
জোর বৃষ্টি হলে যে-সব এলাকায় তিন ফুটের বেশি জল জমতে পারে, সেখানকার ভোটারদের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চারটি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে দু’টি গাড়িও রাখা হচ্ছে। ডিইও সাউথের কার্যালয় জানিয়েছে, ভবানীপুরের ৯৮টি ভোটকেন্দ্র এলাকাকে জলমুক্ত রাখতে পুরসভাকে সব দিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জল জমায় কোনও এলাকার ভোটারেরা বুথে পৌঁছতে না-পারলে তাঁদের সহযোগিতা করা হবে। জল জমার আশঙ্কায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিইএসসি-কে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে অরক্ষিত বিদ্যুতের তার থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যাতে তৈরি না-হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছে প্রশাসন। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নিয়ে পুলিশ-সহ সব কর্তৃপক্ষকে প্রতি মুহূর্তের রিপোর্ট দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকছে।
ভবানীপুরে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কোভিডের সুরক্ষা বিধি মেনে চলার উপরে বাড়তি জোর দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটকর্মীদের ভোট-উপকরণ জোগাড় করার জন্য আলাদা চারটি সময় ধার্য করা হয়েছিল। তাতে ভিড় এড়ানো গিয়েছে বলে কমিশনের দাবি।
বৃষ্টির মধ্যেই শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের ৬৯২টি বুথে রওনা দিয়েছেন ভোটকর্মীরা। প্রশাসন জানিয়েছে বিকেলে কর্মীরা প্রতি বুথেই পৌঁছেছেন নিরাপদেই। শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে স্থগিত হওয়া নির্বাচন আজ হচ্ছে। তবে ওই দুই কেন্দ্রেরও সামগ্রিক আবহাওয়া উপনির্বাচনের মতো। জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানান, ১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে। আর ১৮ কোম্পানি আধাসেনা থাকছে শমসেরগঞ্জে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy