অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালের ‘অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের’ বিরুদ্ধে আশু আলোচনা প্রয়োজন। তার জন্য সমস্ত বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এক জোট হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি টুইট করে এমনই জানালেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, মমতা তাঁকে ফোন করেছিলেন। স্ট্যালিন জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের ‘অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে’র বিরুদ্ধে সরব হয়ে যে পদক্ষেপ করেছেন, তার প্রশংসা করেছেন মমতা। পাশাপাশি, তাঁদের কথোপকথনের সময় ওই বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনা করতে সকল অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট হয়ে আলোচনায় বসার পরামর্শও দিয়েছেন।
স্ট্যালিন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ফোন করেছিলেন। অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমাদের উদ্যোগের তিনি প্রশংসা করেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সমস্ত বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীকে এক জোট হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।’’
দীর্ঘ দিন ধরেই সরকারের সব কাজে ‘হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ তুলে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবির বিরুদ্ধে সরব স্ট্যালিন। রাজ্যপাল এবং তামিলনাড়ু সরকারের মধ্যে নানা বিষয়ে সংঘাতও প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি, রাজ্যপালকে ‘বিজেপির দ্বিতীয় রাজ্য সভাপতি’ বলে বিদ্রুপও করতে শোনা গিয়েছে ক্ষমতাসীন ডিএমকে সরকারকে। রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও সে রাজ্যের সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি রাজ্যের বিলগুলিতে রাজ্যপালের সই করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাব এনেছে তামিলনাড়ু বিধানসভা। সব বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের রাজ্যের বিধানসভায় একই প্রস্তাব আনার জন্য চিঠি লিখেছিলেন স্ট্যালিন। সেই নিয়েই মমতা তাঁর প্রশংসা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
Hon WB CM @MamataOfficial spoke to me over phone to express her solidarity & admiration for our initiatives against the undemocratic functioning of Governors in non-BJP ruled states & suggested that all the Opposition CMs meet to decide the next course of action.#தீ_பரவட்டும்!
— M.K.Stalin (@mkstalin) April 19, 2023
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গেও সম্প্রতি রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। শাসকদল সূত্রে খবর, প্রথম দিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সরকারের মেলবন্ধন হলেও সম্প্রতি ‘আনন্দসুর’ বদলানোয় সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে ভবিষ্যতে কে বসবেন, তা নিয়েও রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি, রাজ্যে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অনেকগুলি ঘটনায় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ শাসকদল ভাল ভাবে নেয়নি বলেও সূত্রের দাবি। রাজ্যপাল বোসকে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তুলনা করতে শোনা গিয়েছে শাসকদলের অনেক নেতা-মন্ত্রীকে। তাঁদের বক্তব্য, ধনখড়ের দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছেন বোস। তামিলনাড়ু সরকারের মতোই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন কাজে ‘হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ এনেছেন পশ্চিমবঙ্গের নেতা-মন্ত্রীদের একাংশও।
সেই আবহেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের ‘অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ’ নিয়ে কথোপকথন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মমতার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও স্ট্যালিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এখন দেখার, সমস্ত অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজোট হয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হন কি না।