Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Akhil Giri

মহিলা রেঞ্জারকে কুকথায় রুষ্ট মমতা! মন্ত্রিত্ব থেকে অখিল গিরির ইস্তফা দলের নির্দেশে, বার্তা ঘরে-বাইরে

শনিবার কাঁথির মহিলা বন আধিকারিককে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অখিল। সূত্রের খবর, সেই ঘটনার পর তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয় দল। তার পর অখিল ইস্তফা দিয়েছেন।

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহিলা বন আধিকারিক এবং অখিল গিরি।

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহিলা বন আধিকারিক এবং অখিল গিরি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ১৪:৫৫
Share: Save:

দলের নির্দেশে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেন অখিল গিরি। ইস্তফাপত্র লিখে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার লিখিত ভাবে তা জমা দেবেন। রবিবার সকালে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী টেলিফোনে অখিলকে জানিয়ে দেন, যে মহিলাকে তিনি অপমান করেছিলেন, তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দলের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে হবে। এর আগে দলের নির্দেশে অখিল ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে শুধুই দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়নি দল। তার পরেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, অখিলের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপে দল এবং প্রশাসন, সর্ব স্তরেই বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিকে যেমন, দলের মধ্যে নেত্রীর বার্তা: বেয়াদপি করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। অন্য দিকে তেমন, প্রশাসনেও গেল মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা: আধিকারিকেরা নির্ভয়ে কাজ করুন, সরকার এবং শাসকদল পাশে আছে।

মহিলা বন আধিকারিককে কুকথা বলায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে, এমনই নির্দেশ দিয়েছিল তৃণমূল। অখিলকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন সুব্রত। বলা হয়েছিল, ওই আধিকারিকের কাছে ব্যক্তিগত ভাবেও ক্ষমা চাইতে হবে অখিলকে। ক্ষমা না চাইলে তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। এই নির্দেশের পরে অখিল সে দিনের ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। যদিও ঘটনার দায় তিনি চাপান বন আধিকারিকের উপরেই। দুঃখপ্রকাশ করলেও অখিল কিন্তু ক্ষমা চাননি। আর তাতেই অখুশি দল মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে বলেছে অখিলকে।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আমাদের মন্ত্রী মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, দলের তরফে আমরা তা সমর্থন করি না। এর প্রতিবাদ করেছি। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী টেলিফোনে অখিল গিরির সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধর্ম পালন এ ভাবে একমাত্র তৃণমূলই করতে পারে।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার সকালেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই অখিলকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে ওই মহিলার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে শুধুই দুঃখপ্রকাশ করায় আরও কড়া সিদ্ধান্ত নেন মমতা। এর পরেই সুব্রত অখিলকে ইস্তফার নির্দেশ দিয়ে দেন।

ইস্তফার কথা জানিয়ে অখিল বলেন, ‘‘আমি মন্ত্রী হিসাবে যা বলেছি, তাতে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। তাই দল আমাকে সরে যেতে বলেছে। তবে কারও কাছে আমি ক্ষমা চাইব না।’’

শনিবার কাঁথির মহিলা বন আধিকারিককে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অখিল। ‘জানোয়ার’, ‘বেয়াদব’ জাতীয় শব্দও তাঁর উদ্দেশে ব্যবহার করতে শোনা গিয়েছিল কারামন্ত্রীকে। ওই ঘটনার পর তিনি জানিয়েছিলেন, এ হেন আচরণের জন্য তিনি বিন্দুমাত্রও অনুতপ্ত নন। এর পরেই অখিলের বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। পাশে থাকেনি তাঁর দলও। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অখিলের আচরণের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। এমনকি, ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করেন মমতাও।

রবিবার সাংবাদিকদের কাছে অখিল জানিয়েছেন, মন্ত্রী হিসাবে মহিলা বন আধিকারিককে ওই ধরনের কথা বলা তাঁর উচিত হয়নি। নিজের আচরণের জন্য পরে তাঁর ‘দুঃখ’ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। অখিল বলেন, ‘‘তাজপুরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মন্ত্রী হিসাবে আমি আলোচনা করতে বলেছিলাম। নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। বন আধিকারিককে আমি যে কথা বলেছি, তা অনুচিত। মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে ওই কথা আমার বলা ঠিক হয়নি। পরবর্তী কালে তার জন্য আমি দুঃখও পেয়েছি। আমি এই কথা বলার জন্য অনুতপ্ত।’’

এর পর যদিও ঘটনার দায় ওই আধিকারিকের উপরে চাপিয়ে অখিল বলেছেন, ‘‘রেঞ্জার মনীষা সাউ কারও কথা শোনেননি। তাঁর জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে দিন আমি ওখানে গিয়ে সামাল না দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেত। গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এই রেঞ্জারকে জেলা প্রশাসনের কেউ পছন্দ করেন না। ঘটনার জন্য তিনিই দায়ী।’’ অখিলের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি দল। তার পরেই তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুধু অখিল গিরিকে সরিয়ে দিলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। তৃণমূল তো অনেক দিন ধরেই এই সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা হচ্ছে। অতীতে শিক্ষিকাকে বোতল ছুড়ে মারা, পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দেওয়া, এমন অনেক উদাহরণ আছে। শুধু অখিলকে শাস্তি দিয়ে কিছু হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Akhil Giri TMC Subrata Bakshi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy