মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
ব্রাহ্মণ পুরোহিত, দলিত, মতুয়া— বিভিন্ন শ্রেণি এবং গোষ্ঠীকে একই দিনে, একই সঙ্গে আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরোহিতদের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা ভাতা, দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির গঠন এবং মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদের পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত সোমবার ঘোষণা করেছেন তিনি। দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমিতে মতুয়া-প্রতিনিধিরও সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী নির্বাচনের দিকে তাকালে এ দিনের এই ঘোষণাগুলি তাৎপর্যপূর্ণ।
এর আগে রাজ্য সরকার যখন ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা দিয়েছিল, তখন পুরোহিতদেরও ভাতা দেওয়ার দাবি ওঠে। পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট গড়া হয়। ব্রাহ্মণদের অনেকগুলি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় এনে আর্থিক সুরাহার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে সরকার। সেই পরিকল্পনাই এ দিন পূর্ণ রূপ পেল। সরকারের ঘোষণা, পুরোহিতদের ভাতা পুজোর মাস থেকেই চালু হবে। যে পুরোহিতদের বাড়ি-ঘর নেই, আবাস যোজনায় তাঁদের বাড়িও করে দেবে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “ইমাম-মোয়াজ্জেমরা সামাজিক কাজ করেন। তাঁরা ভাতা পান। হিন্দুদের মধ্যে এমন কিছু নেই। সনাতন ধর্মে ব্রাহ্মণরা পুজো করেন, তাঁদের অনেকের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। কোনও সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁরা আমার কাছে আবেদন করেছিলেন। আট হাজারের তালিকা আমরা পেয়েছি। কোলাঘাটে সনাতন ধর্মের তীর্থস্থানের জন্য এক টাকায় জমিও দিয়েছি।”
আরও পড়ুন: বিধানসভা ভোটের মুখে হিন্দিভাষীদের কাছে পৌঁছতে সেল মমতার
সরকারের এই সিদ্ধান্তের অবশ্য তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘এর পরে খ্রিস্টান ধর্মযাজক বা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ভাতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে! সরকারের কাজ মন্দির-মসজিদ গড়া বা ইমাম-পুরোহিতকে ভাতা দেওয়া নয়। বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, তৃণমূল সেই তাসই খেলছে।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘আগে ইমামভাতার ঘোষণা হয়েছিল। এখন ভোটের সময়ে এসে পুরোহিতদের টাকা দিয়ে মন পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ধর্মের সঙ্গে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টাকে জুড়ে বিজেপির রাজনীতিকেই মদত দেওয়া হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘দশ বছর উনি আল্লা নাম করেছেন, ইমাম ভাতা দিয়েছেন, তখন অন্যদের কথা মনে পড়েনি। এখন মরণকালে হরি নামের মতো করে পুরোহিতদের ঘুষ দেওয়ার কথা মনে পড়েছে। কিন্তু কত দিন দেবেন? আয়ু তো মাত্র ৬ মাস!’’
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ধাক্কার আশঙ্কায় বার্তা পুজো কমিটিদের
মমতা এ দিন মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ পুনর্গঠন করার কথাও ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি দলিত এবং হিন্দি সাহিত্য অ্যাকাডেমিও তৈরি করবে সরকার। দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকবেন। রাজনৈতিক ভাবে দলিত এবং মতুয়াদের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে দলিত এবং মতুয়াদের ভোটের অনেকটাই হাতছাড়া হয় শাসক দলের। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলিত এবং মতুয়াদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সামগ্রিক পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মমতার কথায়, “দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমি তৈরির সিদ্ধান্ত হচ্ছে। নমঃশূদ্র, মতুয়া, বাগদি, বাউরি, কোল, মাঝি-সহ সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। দলিত সাহিত্যের চর্চা ছাড়াও দলিত উদ্বাস্তুদের মর্ম-যন্ত্রণার কথা তুলে ধরা-সহ একাধিক কাজ করবে অ্যাকাডেমি। মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদও তৈরি করছি আমরা।” দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হচ্ছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। সদস্য থাকবেন মনোহর মৌলি বিশ্বাস, কুমার রানার মতো ব্যক্তিত্বরা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরে সংস্কৃত সাহিত্য, বৈষ্ণব চর্চা এবং শাস্ত্রীয় সাহিত্যের বহু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এখনও অপ্রকাশিত থেকে গিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত, এমন তিন হাজার পাণ্ডুলিপি ডিজিটাইজ় করে জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে। তা ছাড়া, অনেক প্রাচীন মন্দির, মসজিদ, গুরদ্বার, গির্জা রয়েছে, যেগুলির এখন জীর্ণদশা। মহাতীর্থভূমির আওতায় এ সবের ম্যাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোন স্থাপত্য সরকার নিজে সংস্কার করবে, কোনটা বেসরকারির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সংস্কার হবে অথবা কোনটা এলাকার মানুষের হাতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তুলে দেওয়া হবে, তা পরে স্থির হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy