মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দিন কয়েক আগে নবান্নের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কাঠামো পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু তার পরেও সরকারি স্তরে কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। শনিবার আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে গিয়ে এ বার আর জি কর-সহ সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে মেডিক্যাল কলেজ এবং অন্যান্য হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছিল শাসক দলের বিভিন্ন সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের। বহু জায়গাতেই সেই সমিতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এ দিন মমতা সেই সমিতির কাঠামো পরিবর্তনের কথা জানিয়ে, বলেন, “সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল-সহ সর্বত্র যত রোগী কল্যাণ সমিতি আছে, সব জায়গায় অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করব। তাতে জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, এবং এক জন জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের প্রতিনিধিও থাকবে।”
বাম আমলে ২০০৫ সাল নাগাদ সমস্ত স্তরের সরকারি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি তৈরি করে রাজ্য সরকার। বাম আমলের সেই সমিতিগুলিতে শুধু শাসক দলের লোকজনই চেয়ারম্যান হতেন, তেমনটা নয় বলেই দাবি সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের তরফে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানান, তখন নির্দেশিকা জারি করে বলা ছিল, হাসপাতাল যে এলাকায়, সেখানকার বিধায়ক চেয়ারম্যান হবেন। তিনি বলেন, “কোন বিধায়ক কোন দলের, সেটি প্রাধান্য পেত না। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল যে এলাকার, সেখানে বিধায়ক যে দলেরই হোন, তিনি চেয়ারম্যান পদে বসতেন।” অভিযোগ, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ নাগাদ সেই নিয়মে পরিবর্তন ঘটে। স্থির হয়, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে ঠিক করা হবে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। তাতে শাসক দলের নেতারা জায়গা পেতে শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গায় রোগী কল্যাণ সমিতিগুলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। বহু জায়গাতেই আবার হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতিতে আলোচনা করে কোনও ফল হয়নি বলেও অভিযোগ।
যেমন আর জি করের ঘটনার পরে অভিযোগ উঠেছে যে, তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার আলির অভিযোগ রোগী কল্যাণ সমিতিতে একাধিক বার উঠলেও, কোনও সমস্যার সুরাহা হয়নি। চিকিৎসক মহলের আরও অভিযোগ, কোভিডের পর থেকে বেশ কয়েকটি জায়গাতেই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠদের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়। তাতে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আরও বাড়তে শুরু করে।
মমতা এ দিন বলেন, “দোষীরা কেউ আমার বন্ধু নয়। দোষীরা কেউ আমার শত্রু নয়। আপনারা যারা ভাবছেন আমার কেউ বন্ধু, আমি তাঁকে চিনিই না। আমি তাঁদের জানি না। তাঁরা এসেছেন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে।” এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরালেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, অনেক অধ্যক্ষ, চিকিৎসকও দুর্নীতিগ্রস্ত ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ। তাঁরা কখনওই ওই পদে বসার যোগ্য নন। তাই দুর্নীতির অভিযোগ নেই, এমন যোগ্যতাসম্পন্ন-আধিকারিকদেরই রোগী কল্যাণ সমিতিতে রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy