গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তখন তাঁর ২১ মিনিট বক্তৃতা করা হয়ে গিয়েছে। খর রোদের মধ্যদিন। গলদঘর্ম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুর ১টা ২ মিনিট। মঞ্চে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে আর বক্তৃতা দীর্ঘায়িত করেননি অভিষেক। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চে তাঁর নির্দিষ্ট আসনের দিকে ফিরে গেলেন অভিষেক।
এবং গেলেন না। পথিমধ্যে মমতার কাছে গিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। তার পরে চেয়ারে বসে তোয়ালে দিয়ে যখন মুখ মুছছিলেন, তখন দেখা গেল, তাঁকে কিছু একটা বলছেন মমতা। দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির শেষে মঞ্চ থেকে নামার সময়েও এক বার কথা বলতে দেখা গেল দু’জনকে। তবে যৎসংক্ষিপ্ত। কী কথা হয়েছে জানা যায়নি। তবে বহু দিন পরে একই মঞ্চে একই সঙ্গে দু’জনের উপস্থিতি এবং সৌজন্য এবং যুগলবন্দির ছবি তৃণমূলের অন্দরে খানিকটা স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিয়ে গিয়েছে।
বেলা ১২টা ১২ মিনিট নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছন তৃণমূলের সেনাপতি। পরনে চিরাচরিত সাদা ফুলহাতা শার্ট এবং ধূসর ট্রাউজার্স। পায়ে চামড়ার চটি। তবে অভিষেকের দাড়ি নজর কেড়েছে। সম্প্রতি ভাইরাল জ্বর থেকে উঠেছেন তিনি। সম্ভবত সেই কারণেই দাড়ি কাটার সময় পাননি। ‘নবজোয়ার যাত্রা’র সময় বা লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়েও কখনও-সখনও খোঁচা খোঁচা দাড়িতে দেখা গিয়েছে। গত অক্টোবরে রাজভবনের সামনে টানা ধর্নার সময়েও অভিষেকের গালে দাড়ি বেড়েছিল। কিন্তু সেই দাড়ির সঙ্গে এই দাড়ির তুলনা চলে না। এটা না-কামানোর দাড়ি নয়। রাখার দাড়ি। যদিও তিনি দাড়ি রাখছেন, এমন কোনও ‘খবর’ মেলেনি। কিন্তু আলুথালু দাড়িতে অভিষেককে বেশ ‘অন্য রকম’ লেগেছে। অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, ‘‘দাড়িতে এবি-কে ভালই লাগছে। বেশ ভাল!’’
আরজি কর আবহে অভিষেকের ‘দূরত্ব’ রচনা নিয়ে শাসকদলে বিস্তর আলোচনা চলেছে। তাঁর ‘নিস্পৃহতা’ দেখে অনুগামীরা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন, ‘সময়ের ডাক, সেনাপতি পথ দেখাক।’ অভিষেক টিএমসিপির প্রতিষ্ঠাদিবসের কর্মসূচিতে হাজির থাকবেন কি না, তা নিয়েও কোনও কোনও মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও দিন তিনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, অভিষেক মেয়ো রোডের মঞ্চে থাকবেন। তার পরেও তৃণমূলের মধ্যে কৌতূহল ছিল, মমতা-অভিষেক একসঙ্গে মঞ্চে থাকবেন তো? কিন্তু সেই যাবতীয় উৎকণ্ঠায় জল ঢেলে ‘কঠিন’ পরিস্থিতিতে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মমতা এবং অভিষেক। নিজের বক্তৃতায় তিন বার অভিষেকের বক্তৃতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন মমতা। আবার অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় মমতাকে ‘জনদরদি মুখ্যমন্ত্রী’ বলে বর্ণনা করেছেন। যা দেখে অনেকের ধারণা, সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে যে ‘গুমোট’ ভাব ছিল, তা অনেকটাই কেটেছে।
তবে বুধবারের সভায় আরও একটি বিষয় তৃণমূলের অনেকের নজরে পড়েছে। কর্মসূচি শুরুর বেশ খানিকটা পরে মঞ্চে পৌঁছন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। একেবারে পিছনের সারিতে বসেন তিনি। তাঁর গলায় তেরঙা উত্তরীয় পরিয়ে দেন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। মুখে মাস্ক পরে ছিলেন বক্সী। পিছনের সারির আসনেই বসে থাকেন তিনি। তবে অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, সৌগত রায়েরা ছিলেন একেবারে সামনের সারিতেই। দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নিরিখে এই আসনবিন্যাস ‘তাৎপর্য’ বহন করেছে বলেই মনে করেন ছাত্র-যুব নেতাকর্মীরাও।
চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় পক্ষকালের বেশি সময় ধরে উত্তাল বাংলা। সেই আবহে দেখা গেল টিএমসিপির সমাবেশে মহিলা বক্তারা প্রাধান্য পেলেন বুধবার। মমতা এবং অভিষেক ছাড়া মোট আট জন বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জনই মহিলা। বক্তার তালিকায় ছিলেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী তথা যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষও। ফি-বছর ২১ জুলাই তৃণমূলের বার্ষিক সমাবেশ ডাকা হয় যুব তৃণমূলের তরফে। কিন্তু গত ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে বক্তার তালিকায় ছিলেন না যুব সভানেত্রী সায়নীই। তবে ছাত্র সমাবেশে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। বলেছেনও গুছিয়ে।
বুধবারের সভায় দেখার বিষয় ছিল দলের সর্বোচ্চ দুই নেতৃত্ব কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাঁদের বক্তৃতার সুরই বা কী হয়। সভার শেষে এক প্রথম সারির নেতা বলেন, ‘‘অভিষেক সামগ্রিক পরিস্থিতিকে রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে রেখে দলের অভিমুখ বাঁধতে চেয়েছেন। আর দিদি আগ্রাসী হয়ে বিরোধীদের কুৎসার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের রাস্তা দেখাতে চেয়েছেন।’’
দু’জনের বক্তৃতায় কি বোঝাপড়ার ছাপ ছিল? সে বিষয়ে অবশ্য অনেকেই একমত হতে পারছেন না। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন যে, ‘‘এক সংসারে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগে। তবে তাতে সংসার ভাঙে না। বুধবারের বক্তৃতায় বৈপরীত্য না খুঁজে বরং তাকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy