সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনই তাঁকে রাতারাতি ‘জনগণের নেত্রী’তে পরিণত করেছিল। ছবি: পিটিআই ।
পনেরো-ষোলো বছর আগে যে সিঙ্গুরে জমি রক্ষার লড়াইয়ে নেমে শেষমেশ রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়েই এ বার তিনি নতুন ভাবে বিঁধলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনা ও মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘নন্দলাল’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নন্দলাল’ কবিতার অনুকরণে সুর করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওহে নন্দলাল, ১১৪৯ টাকায় ফুটছে বিনা পয়সার চাল। ওহে নন্দলাল বাহবা, বাহবা, বাহবা। বাহবা নন্দলাল।’’ এর আগেও বিনামূল্যের চাল এবং গ্যাসের অতিরিক্ত দাম নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। তবে এ বারের আক্রমণ অভিনব।
মঙ্গলবার রাজ্য জুড়ে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের সূচনা হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, তার উদ্বোধনের জন্য একাধিক গ্রামের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারের কর্মসূচির জন্য বেছে নেন সিঙ্গুরকেই। সেই সিঙ্গুর, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর শুরু করা জমি আন্দোলন তৎকালীন বাম শাসনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনই তাঁকে রাতারাতি ‘জনগণের নেত্রী’তে পরিণত করেছিল। বুধবার থেকে দু’দিনের জন্য রেড রোডের ধারে অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ধর্নায় বসার কথা মমতার। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিঙ্গুরের মাটি ছুঁয়েই আগামী দু’দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসবেন তিনি।
সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে মমতা পুরনো জমি আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন। তুলে আনেন তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন নিয়ে জল পর্যন্ত না খেয়ে ২৬ দিনের আমরণ অনশন করেছিলাম। এই সিঙ্গুরেও আমি ১৪ দিনের ধর্নায় বসেছিলাম। এখানের মা-বোনেরা তখন আমাকে খাবার এনে খাওয়াতেন। আমরা নিজেরাও এখানে রান্না করতাম। তখন রোজার মাস ছিল। এক দিন তো এত ঝড়বৃষ্টি হল যে আমাদের ধর্না মঞ্চ উড়ে যায়। ট্রাক এসে প্রায় আমাদের প্রায় ১০০ জন চাপা দিয়ে দিচ্ছিল। আমি কিছু ভুলিনি। আমি তাপসীর কথাও ভুলিনি। কী ভাবে তাকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল। তাই এখানের মাটি ছুঁয়েই আমি আগামী দু’দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসব। কেন আর্থিক বঞ্চনা করা হল, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল, তার জবাব চাইব।’’
Launched today, #PathashreeRastashree project will ensure better connectivity through 12,000 kms of roads in 22 districts.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 28, 2023
With this, we take another step forward in the direction of development.
Despite the obstacles, we will fulfill our vision of building Sonar Bangla. (1/2)
পাশাপাশি উন্নয়নের খাতে সিঙ্গুরে ৯ কোটি ২০ লক্ষ ব্যয়ে ৮ একর জমির উপর ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরি করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জেলার জন্য একাধিক উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন।
পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রায় ৯ হাজার রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হবে। ২২টি জেলার ৩০ হাজার গ্রামে রাস্তা তৈরির কাজ হবে। তবে সমস্তটাই হবে রাজ্যের টাকাতে। তাঁর অভিযোগ, ১০০ দিনের টাকা থেকে শুরু করে ছাত্রদের স্কলারশিপের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র জিএসটির নামে রাজ্য থেকে টাকা নিয়ে গেলেও বাংলার প্রকল্পের জন্য কোনও টাকা দেয় না। জিএসটিকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ রাস্তাগুলি তৈরি করতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সবই রাজ্য সরকারের টাকা। কেন্দ্রের টাকা নেই। জিএসটি করার পর দিল্লি সব টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলার প্রকল্পের টাকা আটকে রেখে দেয়। জিএসটিকে সমর্থন করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কেন্দ্র এখন ১০০ দিনের টাকা, আবাসের টাকা, ছাত্রছাত্রীদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একটা কাজও বাংলাকে দেওয়া হয়নি। আমরা ঠিক করেছি রাজ্যই টাকা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করবে।’’
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজ এবং কাজের টাকা না দেওয়া নিয়ে অভিযোগের সুর তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র কাজ না দিলেও রাজ্যের তরফে জব কার্ডধারীদের কাজ দেওয়া হবে। পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে কাজ পাবেন জব কার্ডধারীরা। পিডব্লিউডি এবং ‘জল ধরো জল ভরো’র কাজ আমরা ১০০ দিনের কর্মীদের দিয়ে করাব। কেন্দ্রকে দেখাব, বাংলা নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। এক পয়সা না দেওয়া সত্ত্বেও আমরা ১০০ দিনের মধ্যে ২৬ দিনের কাজ করিয়ে দিয়েছি। নিজেরা কাজ তৈরি করেছি। এর জন্য বুদ্ধি খরচ করতে হয়। বাংলার সে বুদ্ধি আছে।’’
পাশাপাশি, রাস্তা তৈরির কাজ যাতে তাড়াতাড়ি হয় তা নিয়ে স্থানীয় নেতা এবং ঠিকাদারদেরও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্ষার আগেই যেন অনেক কাজ হয়ে যায়, সেই বার্তাও দিয়েছেন। পাশাপাশি রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হলে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেই নির্দেশও তিনি দেন।
বুথে বুথে ক্যাম্প করে দুয়ারের সরকারের কথাও ঘোষণা করেন। বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেল লাইনের কাজ বাকি থাকা নিয়েও তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন। একই সঙ্গে মমতার গলায় শোনা যায় বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে অপব্যবহারের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বললেই ইডি-সিবিআইকে পাঠিয়ে দাও। মহিলাদের পর্যন্ত টেনে টেনে নিয়ে যাও। সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞতা জানায় যে বলেছে বাড়ির মহিলাদের এখানে ওখানে ডাকা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে কিছু থাকলে মহিলাদের সুবিধা মতো বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy