আসবাবপত্র থেকে নগদ টাকা, সব হারিয়েছে দিনমজুর আব্দুল সামাদের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
আগুন নেভাতে গিয়ে মাঝরাস্তা থেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হল দমকলের ইঞ্জিন। অভিযোগ, এবড়োখেবড়ো রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ যে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই পারেননি দমকলকর্মীরা। এর জেরে আগুনের গ্রাসে ভস্মীভূত হয়ে যায় মালদহের চাঁচলের এক দিনমজুরের দু’টি বাড়ি। পরনের কাপড়টুকু ছাড়া সব সম্বল হারাল তাঁর পরিবার। রাস্তার বেহাল দশার জন্যই যে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেননি তাঁরা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন চাঁচলের দমকল আধিকারিক। আগুনের গ্রাসে সব হারানো ওই পরিবারের আর্জি, অবিলম্বে রাস্তার সংস্কার করা হোক।
সোমবার ভোরে মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের ক্ষেমপুর পঞ্চায়েতের কাণ্ডারন ভেশপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লক্ষাধিক বলে দাবি। ভেশপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল সামাদের বাড়িতে ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ আগুন লাগে। আব্দুলের পুত্রবধূ শেরিনা খাতুনের দাবি, ভোরবেলা চা তৈরির জন্য রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস স্টোভ জ্বালাতেই আগুন ধরে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বুঝতেই পারিনি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করছিল। চা তৈরি করতে গিয়ে আগুন লেগে যায়।’’ মুহূর্তের মধ্যে সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে রান্নাঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শোয়ার ঘরেও আগুন ধরে যায়। শেরিনার চিৎকার শুনে পাড়াপড়শিরা ছুটে যান আব্দুলের বাড়িতে। তত ক্ষণে তাঁর দু’টি বাড়িতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
আব্দুলের বাড়ির আগুন নেভানোর জন্য হাত লাগান পাড়াপ্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় চাঁচলে দমকলের দফতরে। অভিযোগ, আগুন লাগার ঘণ্টাখানেক পর চাঁচল থেকে দমকলের ১টি ইঞ্জিন রওনা দিয়েছিল। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় আব্দুলের বাড়ির ১ কিলোমিটার দূর থেকে ফেরত চলে যায় দমকলের ইঞ্জিন। তত ক্ষণে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে আব্দুলের দু’টি বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দাবি, ঘরের জিনিসপত্র কিছুই বার করতে পারেননি। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সোনার গয়না, নগদ ৮০ হাজার টাকা— সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় বাড়িতে ছিলেন না আব্দুল। তিনি বলেন, ‘‘ভোরে বাড়িতে ছিলাম না। ঘুম থেকে উঠে মাঠে গিয়েছিলাম। সেখানে ফোন করে এক জন জানান, আমাদের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ঘরে নগদ ৮০ হাজার টাকা ছিল, সেগুলিও পুড়ে ছাই। ফিরে এসে দেখি, টাকাপয়সা, কাগজপত্র সব গিয়েছে। পরনের কাপড়টুকু ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই।’’
প্রতিবেশীর ঘরবাড়ি বাঁচাতে স্থানীয়দের সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা বাহাদুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ গ্রামের একটা বাড়ি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। আশপাশে কোনও পুকুর পর্যন্ত নেই। পানীয় জলও অমিল। ফলে বাড়িটি বাঁচাতে পারিনি আমরা। আগুনে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেটি। রাস্তা এত খারাপ যে এখানে দমকল ঢুকতেও পারেনি।’’
বেহাল রাস্তার জন্যই যে আগুন নেভাতে গিয়েও মাঝরাস্তা থেকে ফিরে গিয়েছেন, তা জানিয়েছেন চাঁচলের দমকল আধিকারিক রতনকুমার সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু রাস্তা খুবই খারাপ। তবুও ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর জন্য চেষ্টা করেছিলাম। ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তাই চলার অযোগ্য। তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছনো যায়নি।’’
এই অগ্নিকাণ্ডে সব হারানোর পর সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন দুর্গত পরিবার-সহ গ্রামের বাসিন্দারা। বাহাদুর বলেন, ‘‘সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, এখানকার রাস্তা সারাই করা হোক। আর পানীয় জলের বন্দোবস্তের আর্জি জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy