জেলা স্তরের সাংগঠনিক রদবদল হল তৃণমূলে। ফাইল চিত্র
বড় আকারে সাংগঠনিক রদবদল হল তৃণমূলে। সোমবার সকালে সর্বভারতীয় তৃণমূলের তরফে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকা প্রকাশে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যান বদল করেছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এই রদবদলের মধ্যেই পুরনো দায়িত্বে যাঁরা রয়ে গেলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বীরভূমের বিতর্কিত নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
ঘটনাচক্রে তৃণমূলের এই সাংগঠনিক রদবদল হল এমন একটা সময়ে, যখনপার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। শাসকদলের উপর এই ঘটনার চাপ পড়েছে। যদিও পার্থের গ্রেফতারির সঙ্গেএই রদবদলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা। তাঁর কথায়, ৫ মে দলের নতুন অফিসে এসে বৈঠকের পর, জুন-জুলাই মাসে সাংগঠনিক রদবদল করাহবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন নেত্রী। সেই মতোই হচ্ছে রদবদল। শাসকদলের আর এক নেতা বললেন, ‘‘মন্ত্রিসভা ও সাংগঠনিক পদে সামঞ্জস্য আনতেই এই রদবদল হয়েছে। যাঁরা জেলা সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁদের কয়েকজনকে জায়গা দেওয়া হতেই পারে মন্ত্রিসভায়।’’
বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। এর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়। অশনি ছিলেন পার্থ ঘনিষ্ঠ নেতা।মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর সাংগঠনিক জেলাকে জুড়ে সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শাঁওনি সিংহ রায়কে। এত দিন আগে মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর দুটি পৃথক সাংগঠনিক জেলা ছিল।জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা আলাদা রেখে দেওয়া হয়েছে। এর সভাপতি পদেও রেখে দেওয়া হয়েছে সাংসদ খলিলুর রহমানকে। দার্জিলিং ভেঙে দুটি সাংগঠনিক জেলা কমিটি করেছে তৃণমূল। পাহাড়ের সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছেত্রীকে। সমতলে সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে পাপিয়া ঘোষকে। পাপিয়া কোচবিহারের তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মেয়ে। জলপাইগুড়ির জেলার সভাপতি করা হয়েছে ওই জেলার মহিলা নেত্রী মহুয়া গোপকে। ওই জেলার চেয়ারম্যান হয়েছেন বিধায়ক খগেশ্বর রায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে কানাইয়ালাল অগ্রবালকে।মালদহের সভাপতি বদল না করে রেখে দেওয়া হয়েছে মালতীপুরের বিধায়ক আব্দুল রহিম বক্সীকে। চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে প্রবীণ বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়কে।
দমদম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে। তবে চেয়ারম্যান পদে রেখে দেওয়া হয়েছে নির্মল ঘোষকে। পার্থকে মন্ত্রিসভার জায়গা দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা। দমদমে সভাপতি পদে এখনও কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। আবার শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে। শ্রীরামপুর ও হুগলি সাংগঠনিক জেলাকে মিলিয়ে একটি সাংগঠনিক জেলা করা হয়েছে। যাঁর সভাপতি হয়েছেন বিধানসভা ভোটের ‘জায়ান্ট কিলার’ অরিন্দম গুঁই। প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে বিধানসভা ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান করা হয়েছে ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রকে। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায়। চেয়ারম্যান হয়েছেন জয়দেব জানা।
কোচবিহার জেলার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। তাঁর বদলে সভাপতি হয়েছেন অভিজিৎ দে ভৌমিক। এ ক্ষেত্রে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি উদয়ন গুহ কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মত নেতাদের মতামতকে। একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি পদ থেকে গৌতম দাসকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মৃণাল সরকারকে। চেয়ারম্যান হলেন নিখিল সিংহ রায়। সুন্দরবন জেলার সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারকে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্দিরবাজারের বিধায়ক জয়দেব হালদারকে। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় নতুন সভাপতি হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসেবে প্রত্যাবর্তন হয়েছে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের। তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে সাংগঠনিক কাজেই মনোনিবেশ করতে বলা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতি। বাঁকুড়া জেলার সভাপতি হয়েছেন দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র। চেয়ারম্যান করা হয়েছে মানিক মিত্রকে। বিষ্ণুপুর জেলার সভাপতি করা হয়েছে বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়কে। চেয়ারম্যান হয়েছেন বাসুদের দিগার।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি।এক সময় অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি ছিলেন তিনি। পরে সাংগঠনিক জেলা হয়ে যায়। কিন্তু ফের তাঁকে গোটা জেলার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।পুরুলিয়া জেলার সভাপতি হয়েছেন হংসেশ্বর মাহাত। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁকে। চেয়ারম্যান করা হয়েছে কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদকে। রানাঘাটের সভাপতি হয়েছেন দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রমথ রঞ্জন বসু।ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি পদে রয়ে গেলেননয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। তবে তাঁর সঙ্গেই চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিধায়ক তথা মন্ত্রী বীরবাহা সোরেনকে। পূর্ব বর্ধমান জেলার দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয়েছে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা (সদর) জেলার সভাপতি পদে রয়ে গিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে ওই জেলার চেয়ারম্যান করা হয়েছে অশোক দেবকে। কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণেরও সভাপতি বদল করা হয়নি। দক্ষিণে দেবাশিস কুমার ও উত্তরে রয়ে গিয়েছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া সদর ও গ্রামীণ সংগঠনে কোনও বদল করা হয়নি।বীরভুম জেলা সংগঠনের সভাপতি থাকছেন অনুব্রত মণ্ডলই। চেয়ারম্যান পদেও আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেখে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy