মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদলে নতুন মন্ত্রী হতে পারেন বাবুল সুপ্রিয়, তাপস রায়, পার্থ ভৌমিক এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সোমবার রাজ্য জুড়ে তৃণমূল শিবিরে এমনই জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি এখনও পর্যন্ত জল্পনার স্তরেই আছে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে ঘোষণা করেন, আগামী বুধবার ওই রদবদল হবে। চার-পাঁচ জনকে দলের কাজে লাগানো হবে। অন্য চার-পাঁচ জনকে মন্ত্রিসভায় আনা হবে। তার পর থেকেই কারা নতুন আসবেন এবং কারা বাদ পড়বেন, তা নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ-দেওয়া এবং অধুনা বালিগঞ্জের বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, প্রবীণ বিধায়ক তাপস রায় এবং উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। নাম শোনা যাচ্ছে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীরও। এঁদের প্রত্যেকেরই ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। বস্তুত, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই মমতা সমস্ত মন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেন, ‘‘কেউ এমন কোনও কাজ করবেন না, যাতে মন্ত্রিসভার অসম্মান হয়।’’ কারও নাম না-করলে মমতা যে পার্থের ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, তা স্পষ্ট। উত্তরবঙ্গের দিকে নজর রেখে উদয়ন গুহকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানাচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী, আদালতের নির্দেশে যাঁর কন্যার স্কুলশিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। আরও অন্তত তিন জন মন্ত্রী বাদ পড়বেন ‘পারফরম্যান্স’-এর নিরিখে। তাঁদের মধ্যে থাকতে পারেন চন্দ্রনাথ সিংহ। থাকতে পারেন সৌমেন দাস মহাপাত্রও। হুগলি জেলা থেকে রত্না দে নাগের বাদ পড়ার সম্ভাবনা। মন্ত্রিসভার দুই দাপুটে মন্ত্রীর দফতরও কাটছাঁট হতে পারে বলে অসমর্থিত সূত্রের খবর। রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্য এক মহা গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকেও বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে দলের একাংশের তরফে। সেই প্রচেষ্টা সফল হবে তা হবে অন্যতম ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা।
প্রবীণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মমতা চাইছিলেন, মন্ত্রিসভায় বদল ঘটিয়ে ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র লোকজনকে সরকার পরিচালনায় নিয়ে আসতে। শাসক শিবিরের একটি অংশের মতে, এই রবদল আসলে পার্থ-কাণ্ডে দল এবং সরকারের ক্ষত মেরামতির চেষ্টা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সাধন পান্ডে মারা গিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। তাঁদের দফতরগুলো প্রায় খালি পড়ে রয়েছে। আমার পক্ষে এতগুলো দফতর দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা মন্ত্রিসভায় একটা ছোট রদবদল করছি।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় রদবদলের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সামগ্রিক ভাবে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিরই আরোপ করতে চাইছেন। অর্থাৎ, যাঁরা দলের কাজ করবেন, তাঁরা সরকারে থাকবেন না। আবার যাঁরা সরকারে মন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন, তাঁরা দলের সাংগঠনিক কাজে থাকবেন না। প্রসঙ্গত, দলের সর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নীতি প্রণয়নের কথা বলেছিলেন। সেই অনুযায়ীই এখন পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন শাসক শিবিরের নেতারা।
সোমবার দুপুরে নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে মমতা জানিয়ে দেন, মন্ত্রিসভার রদবদল হচ্ছে। বুধবার একটি ‘ছোট রদবদল (রিশাফ্ল)’ করবেন তিনি। সেখানেই ফাঁকা দফতরগুলির দায়িত্ব বন্টন করা হবে। একই সঙ্গে মমতা জানান, কয়েক জন মন্ত্রীকে দলের কাজে লাগানো হবে। অর্থাৎ, ওই মন্ত্রীদের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। তাঁরা আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না।
সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক এগিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় করেন মমতা। সেই বৈঠক শেষে মমতা সাংবাদিক বৈঠকে এলে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মন্ত্রিসভায় কি রদবদল হচ্ছে? মমতা বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) নয়, পরশু (বুধবার) একটা ছোট রিশাফ্ল করব।’’ তবে ওই রদবদলে ‘পুরস্কৃত’ হবেন এবং কারা ‘তিরস্কৃত’, তা স্পষ্ট করে জানাননি মমতা। তিনি শুধু বলেন, ‘‘চার-পাঁচ জনকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে। চার-পাঁচ জনকে দলের কাজে লাগানো হবে।’’
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার পর থেকেই তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। যেহেতু পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণের পর এটিই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক, তাই অনেকই অনুমান করেছিলেন, এই সভা থেকে বড় বদলের ঘোষণা হতে পারে। কারণ, গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থকে তাঁর দফতরগুলির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর মমতা বলেছিলেন, ‘‘পার্থ’দার কাছে যে যে দফতরগুলি ছিল, সেগুলি আপাতত আমার কাছে থাকছে। হয়তো কিছুই করব না। কিন্তু যত ক্ষণ না নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠন করছি, তত ক্ষণ এই দফতরগুলি আমার কাছে এসেছে।’’
পরে প্রশাসনিক একটি সূত্র দাবি করে, মন্ত্রীদের শপথগ্রহণের ব্যাপারে জানিয়ে রাজভবনে বার্তা গিয়েছে। তা থেকেও জল্পনা আরও বাড়ে। আরও একটি জল্পনা ছিল ‘কামরাজ প্ল্যান’ নিয়ে। যা করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর (রাজ্যের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী) কাছে সমস্ত মন্ত্রী ইস্তফা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যাঁদের মন্ত্রিসভায় রাখতে চান, তাঁদের নাম এবং যাঁদের নতুন মন্ত্রী হিসেবে নিতে চান, তাঁদের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে (রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কাছে) পাঠিয়ে দেবেন। তার পর নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। তবে মমতা সোমবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কামরাজ প্ল্যান ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। তেমন কিছু হচ্ছে না। তবে একটা ছোট রিশাফ্ল হবে।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের শীর্ষনেতৃত্ব দল এবং সরকারকে আলাদা করে দেখতে চাইছেন। তাঁরা চাইছেন, দলের সাংগঠনিক কাজে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা সরকারের কাজে থাকবেন না। সামগ্রিক ভাবে যৌথ দায়িত্ব সামলানোর মতো সময় থাকে না বলে নেতাদের হয় সরকারে, নয় দলে রাখা হবে। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বও জানেন, এ আসলে একটু ঘুরপথে ‘এক দল, এক নীতি’ আরও গুরুত্ব দিয়ে চালু করা। দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘দলের সমস্ত স্তরে এটা একটা পরিষ্কার বার্তা যে, দল এবং সরকার আলাদা ভাবে এবং সমান্তরাল ভাবে কাজ করবে।’’
শাসক শিবিরের কিছু নেতার বক্তব্য, এই ‘মডেল’-এ দল এবং সরকার— দুয়েরই কাজ ‘মসৃণ ভাবে’ চলবে। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, এই ‘সঙ্কটসময়ে’ এই ধরনের ‘পরীক্ষানিরীক্ষা’ না-করলেই ভাল হত। অভিজ্ঞদের বদলে নতুনদের মন্ত্রিসভায় আনলে তাঁরা কী ভাবে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক আক্রমণের মোকাবিলা করেন, তা নিয়ে তাঁরা খানিক উদ্বেগে। তবে শীর্ষনেতৃত্বের বক্তব্য, এখন প্রয়োজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। পার্থ-কাণ্ডে দল এবং সরকার যে ধাক্কা খেয়েছে, তা মেরামত করতে গেলে ‘মুখ’ পাল্টানো দরকার। মন্ত্রিসভার রদবদল তারই প্রথম পদক্ষেপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy