কৃতী: মায়ের সঙ্গে মাধ্যমিকে প্রথম অরিত্র পাল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
কবাডি খেলতে গিয়ে প্রায়ই জামা ছিঁড়ে বাড়ি ফিরত ছেলেটা। পরীক্ষার পরেই ‘লকডাউন’। সারা দিন বাড়িতে থাকতে হওয়ায় খানিক মন খারাপ হয়েছিল তার। বুধবার সকালে অবশ্য মেঘ কেটেছে। টিভির পর্দায় মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে নাম ঘোষণা হতেই আনন্দে চিৎকার করতে শুরু করেছিল অরিত্র। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট (ইউনিট ১)- এর ছাত্র অরিত্র পাল। সে পেয়েছে ৬৯৪ নম্বর।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির শ্রীদুর্গাপল্লির বাড়িতে বসে অরিত্র বলে, ‘‘আনন্দে লাফিয়ে ওঠার পরে মনে হল, আমার নামই বলল তো! কিছু ক্ষণ পরে টিভিতে ফের নিজের নাম দেখে নিশ্চিত হই।’’
বাবা গণেশ পাল সেনাকর্মী, মা চন্দনাদেবী প্রাথমিক শিক্ষিকা। তাঁরা জানান, নিয়মানুবর্তিতাই ছেলের সাফল্যের কারণ। অরিত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশবচন্দ্র ঘোষালও বলেন, ‘‘অরিত্র স্কুলে আসেনি, এমন এক দিনও হয়নি। অনেক সময়ে ক্লাসে একা বসেও শিক্ষকদের কাছে পড়েছে ও।’’ অরিত্র জানায়, দিনে ১০-১৬ ঘণ্টা পড়ত। মা সাহায্য করতেন। শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের এই ভক্ত পড়ার মধ্যে ফাঁক পেলে আঁকার খাতা নিয়ে বসে পড়ে। ভবিষ্যতে রসায়ন বা অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করা বা ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে। করোনা-পরিস্থিতি কী শেখাল? কৃতী তরুণের জবাব, ‘‘জীবনযাত্রার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর। অকারণে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছি না।’’
প্রথমের প্রাপ্তি
বাংলা ৯৮
ইংরেজি ৯৯
জীবনবিজ্ঞান ৯৯
ভৌতবিজ্ঞান ৯৮
অঙ্ক ১০০
ইতিহাস ১০০
ভূগোল ১০০
৬৯৪/ ৭০০
মার্কশিট বিতরণ
• স্কুল থেকে মিলবে
২২ এবং ২৩ জুলাই।
• পড়ুয়াদের যেতে হবে না।
• অভিভাবকেরা নথি দেখিয়ে নিতে পারবেন।
একাদশে ভর্তি
• নিজের স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে ১-১০ অগস্ট পর্যন্ত।
• নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়সীমা ১১-৩১ অগস্ট।
*সূত্র: মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
করোনা আবার অভীককে অনুপ্রাণিত করছে চিকিৎসক হতে। ৬৯৩ নম্বর পেয়ে মেধা-তালিকায় যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় পূর্ব বর্ধমানেরই কাটোয়ার মাস্টারপাড়ার অভীক দাস। কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের ছাত্রটি বলে, ‘‘করোনায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষের সেবা করার জন্য বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।’’
করোনার প্রতিষেধক তৈরি সংক্রান্ত খবরে ডুবে থাকছে আর এক দ্বিতীয়, বাঁকুড়ার ওন্দা হাইস্কুলের সায়ন্তন গরাই। বিজ্ঞানী হতে চাওয়া সায়ন্তনের কথায়, ‘‘করোনা-প্রতিষেধকের খোঁজে আমাদের দেশ গবেষণা করছে। আমি আশাবাদী, শীঘ্রই সাফল্য আসবে।”
যুগ্ম দ্বিতীয় অভীক দাস (বাঁ-দিকে) এবং সায়ন্তন গরাই। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
একটুর জন্য সেরা দশে ঠাঁই পাননি তার দাদা। পাঁচ বছর পরে সে আক্ষেপ মিটিয়েছে বোন। মেধা-তালিকায় শুধু তৃতীয় হওয়াই নয়, রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম কাঁথির সৃজনী কলোনির বাসিন্দা দেবস্মিতা মহাপাত্র। ভবানীচক হাইস্কুলের ছাত্রীটি পেয়েছে ৬৯০। অঙ্কে ১০০, বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯৯, ভূগোলে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮ ও ইতিহাসে ৯৮।
আরও পড়ুন: জেলা ৮৪, কলকাতা ০, দেখে নিন মাধ্যমিকের সম্পূর্ণ মেধাতালিকা
আমলা হয়ে দেশসেবার ইচ্ছা মাধ্যমিকে অষ্টম স্থানাধিকারী অয়নের
কৃতী কন্যা বলেছে, ‘‘স্কুল বন্ধ, রেজাল্ট কী ভাবে বেরোবে তা নিয়ে চিন্তা ছিল। কিন্তু মনকে দুর্বল হতে দিইনি। মনের শক্তিই কঠিন সময় লড়াই করতে সাহায্য করে।’’ টিভিতে সিনেমা বিশেষত, ‘থ্রিলার’-এর ভক্ত দেবস্মিতা ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়।
সম্মিলিত তৃতীয় দেবস্মিতা মহাপাত্র (বাঁ-দিক থেকে), অরিত্র মাইতি এবং সৌম্য পাঠক। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
দেবস্মিতার সঙ্গে মেধা-তালিকায় একই ধাপে থাকা রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ় হোম হাইস্কুলের অরিত্র মাইতি আপাতত উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে নারাজ। রহড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ছাত্রটি সত্যজিৎ, শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্করের লেখা পড়তে পছন্দ করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী মুরলীধরানন্দ বলেন, ‘‘ভাষার উপরে অসম্ভব দখল ওর। মেধা-তালিকায় জায়গা করে নেবে, আশা ছিল।’’
লকডাউনে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে কিছুটা অতিষ্ঠ আর এক তৃতীয়, বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্য পাঠক। সে-ও ডাক্তার হতে চায়। বলেছে, “তাড়াতাড়ি স্কুল চালু হোক। অনেক দিন ঘরবন্দি রয়েছি।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy