আড়াই বছর আগে হারিয়ে যান বিকাশ শাহ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় আড়াই বছর আগে হারিয়ে যাওয়া যুবকের সন্ধান মিলল বাড়ি থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালের বেডে। ওই যুবকের পরিবার যখন ছেলেকে ফিরে পাওয়ার সব আশাই ছেড়ে দিয়েছে, ঠিক সেই সময় তারা পেল ছেলের হদিশ।
বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সপ্তর্ষি চৌধুরী জানান, গত ৯ জুলাই এক যুবককে আহত অবস্থায় বনগাঁ থানার পুলিশ ভর্তি করে দিয়ে যায় স্থানীয় মহকুমা হাসপাতালে। ওই যুবকের পায়ে ক্ষত ছিল। তাঁর চিকিৎসার পর দেখা যায়, তিনি নাম-ঠিকানা থেকে শুরু করে নিজের সম্পর্কে কোনও তথ্যই দিতে পারছেন না। আরও কয়েক দিন হাসপাতালে রাখার পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন মানসিক দিক থেকে স্থিতিশীল নন ওই যুবক। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলে মুম্বইয়ের একটি ঠিকানা বলে ওই যুবক। আমরা ঠিকানা ঠিক কি না জানতে যোগাযোগ করি ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সঙ্গে।”
ওয়েষ্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যরা হ্যাম রেডিওর সদস্যদের মাধ্যমে খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন যুবকের দেওয়া ঠিকানা সঠিক। কিন্তু ওই ঠিকানায় তাঁর বাড়ি আদৌ নয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সভাপতি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছেলেটি একের পর এক মুম্বইয়ের ঠিকানা বলছিল। প্রত্যেকটি ঠিকানারই অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আমরা খবর নিয়ে জানতে পারলাম, ও সব ঠিকানা থেকে এ রকম কেউ নিখোঁজ হয়নি।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের পর ওই যুবক পুণেরও কয়েকটি ঠিকানা বলেন। দাবি করেন, সেগুলোই তাঁর বাড়ির ঠিকানা। কিন্তু একটা ঠিকানাতে তাঁ বাড়ির হদিশ মেলে না। এর পর হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রেডিও ক্লাব।
আরও পড়ুন: পতন অব্যাহত, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়াল ৪.৫ শতাংশে, ছ’বছরে সর্বনিম্ন
অন্য দিকে, চিকিৎসকরা দেখেন ছেলেটির মানসিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। মাঝে মাঝেই হিংস্র হয়ে উঠছেন তিনি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাকে সাধারণ রোগীদের ওয়ার্ড থেকে দূরে একটি আলাদা অংশে রাখতে হয়। এর মধ্যেই ওই যুবকের চিকিৎসার প্রয়োজনেই ফের রোগীর আত্মীয়দের খোঁজ শুরু করেন চিকিৎসকরা। এ বার পুণে-মুম্বই ছেড়ে সে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার একটি ঠিকানা বলে। সেই ঠিকানাই শেষমেষ দেখা যায় সঠিক। পূর্ণিয়া জেলার বনমনখির ধামডাহা থানা এলাকায় হদিশ মেলে যুবকের বাড়ির সন্ধান। হ্যাম রেডিওর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা যখন ওই বাড়িতে পৌঁছই, তখন জানতে পারি ছেলেটির জ্যাঠা ওই দিনই মারা গিয়েছেন। বাড়ির লোক ছেলেটির ছবি দেখেই চিনতে পারে।” জানা যায় ২০১৭ সালের ৭ জুলাই থেকে নিখোঁজ ওই যুবক। নাম বিকাশ শাহ।
সম্পন্ন বাড়ির ছেলে বিকাশ। বাবা বিশ্বনাথ ছিলেন কৃষক। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট বিকাশ। মা কল্যাণী কলেজের অধ্যাপিকা। বাবা মারা গিয়েছেন ১৯৯৪ সালে। কল্যাণীকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল বিন্টু (বিকাশের ডাক নাম)। ওই দিন আমি কলেজে। বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া কেউ ছিল না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বিকাশ। তার পর আমরা সমস্ত জায়গায় খোঁজ করেছি। কিন্তু কোনও হদিশ করতে পারিনি।”
আরও পড়ুন: চাষি বেচছেন ৮ টাকায়, আমরা ১২০ টাকায় কিনছি, পেঁয়াজের এত লাভ কার পকেটে যাচ্ছে?
বাড়ির হদিশ পাওয়ার পর এখনও চিকিৎসকদের একটা বিস্ময় কাটছে না। কী করে ওই যুবক মুম্বই এবং পুণের ঠিকানাগুলো বলেছিলেন? কী ভাবে পূর্ণিয়া থেকে তিনি বনগাঁয় পৌঁছলেন, সে রহস্যও রয়ে গিয়েছে চিকিৎসকদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy