ধর্মতলায় একটি মদের দোকানে লম্বা লাইন। নিজস্ব চিত্র।
গত বারের লকডাউন ‘শিক্ষা’ দিয়েছে সুরাপ্রেমীদের। তাই রবিবার থেকে টানা ১৫ দিন রাজ্যে কার্যত লকডাউনের ঘোষণা হতেই সেই ‘শিক্ষা’র হাতেকলমে প্রয়োগ ঘটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁরা। বিকেল ৫টা বাজার আগেই কলকাতা থেকে কোচবিহার, সর্বত্র মদের দোকানের সামনে লাইন দিতে দেখা গেল সুরাপ্রেমীদের। অবশ্য তাঁদের প্রায় কারও মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়নি।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়-সহ এই লকডাউন ঘোষণার পর শনিবার বিকেলে মাছ-মাংস, শাক-সবজি, মুদিখানা এবং ওষুধের দোকানে লাইন দিতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু মদের দোকানে মদিরাপ্রেমীদের লাইন যেন সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল। অতি উৎসাহের জেরে কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলাও তৈরি হল। তা সামাল দিতে নামতে হল পুলিশকেও। অনেকেই মদের দোকানের দরজা বন্ধের সময় বাড়ি ফিরলেন মুখে বিজয়ীর হাসি ঝুলিয়ে। কেউ কেউ অবশ্য রইলেন নিষ্ফল-হতাশের দলেই।
‘‘দাদা, আমাকে চারটে হাফ,’’— চার পাশে ঘিরে থাকা অনন্ত মাথার মধ্যে থেকেই মুঠোয় ধরা নোটগুলো দোকানের ঘুলঘুলির মধ্যে চালান করে দিয়ে বলে উঠলেন এক মধ্যবয়সী। তাঁর আশপাশে তখন ঘোরাফোরা করছে অসংখ্য হাত। প্রত্যেকেই তাড়া দিচ্ছেন একে অপরকে। শনিবার বিকেলে এই ছবি দেখা গেল ধর্মতলা চত্বরের একটি মদের দোকানে।
রবিবার থেকে রাজ্যে ১৫ দিনের জন্য কার্যত লকডাউন। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকবে বটে। কিন্তু সেই তালিকায় মদের দোকান খোলার কোনও উল্লেখ নেই। ফলে শনিবার ঘোষণা শোনার পর থেকেই আচমকা সুরা সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় পড়েন সুরাপ্রেমীরা। তৈরি হয় উৎকণ্ঠাও, ঠিক আগের বছরের লকডাউনের মতো। তাই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এসপ্ল্যানেডের একটি মদের দোকানের ফটক বন্ধ হতে দেখে এক ষাটোর্ধ্ব এক সুরাপ্রেমী আক্ষেপের সুরে বলেই ফেললেন, ‘‘কে জানে আবার কবে পাওয়া যাবে!’’ তবে বিজয়ীর ভঙ্গিমায় তিনি শুনিয়েও দিলেন, ‘‘আপাতত স্টক পরিপূর্ণ।’’
এ দৃশ্য শুধু কলকাতার নয়। গোটা রাজ্যেই একাধিক মদের দোকানে দেখা গিয়েছে এমন ছবি। হাওড়ার শিবপুরে একটি মদের দোকানের সামনে স্বাস্থ্যবিধি ভুলেই জড়ো হন সুরাপ্রেমীরা। কার আগে কে দোকানের জানালার সামনে পৌঁছবেন তা নিয়ে হুড়োহুড়ি বেধে যায়। পরিস্থিতি এমন হয় যে লাঠিচার্জ পর্যন্ত করতে হয় পুলিশকে।
একই ছবি ধরা পড়েছে হুগলির ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার মদের দোকানগুলিতে। আশা-আশঙ্কার দোলাচলেই বিকেল ৫টা হাজার আগে থেকেই মদের দোকানে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন মদের দোকানে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। ভিড় নজরে এসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও। সর্বত্রই দেখা গিয়েছে হুড়োহুড়ির ছবি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, সাগর, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, বজবজ, মহেশতলা-সহ বিভিন্ন এলাকার মদের দোকানে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে শনিবার বিকেল থেকে। রাজ্যে কার্যত লকডাউন ঘোষণার পর মদ মজুত করে রাখতে তৎপর হয়েছেন সুরাপ্রেমীরা। পরিস্থিতি এমন হয় যে সন্ধ্যা ৭টার পরেও দোকান খোলা রাখতে হয় অনেক ব্যবসায়ীকে।
পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার মদের দোকানগুলিতেও একই ছবি। বিকেল থেকে কোনও দোকানের সামনেই তিল ধারণের পরিস্থিতি ছিল না।
উত্তর ২৪ পরগনার বহু মদের দোকানগুলিতেও একই দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে শনিবার। মদ সংগ্রহ করতে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই।
দক্ষিণের চিত্রটা দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গেও। জলপাইগুড়ি জেলার প্রায় সব মদের দোকানেই ভিড় ছিল যথেষ্ট।
স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মদের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গিয়েছে কোচবিহারেও। কোচবিহার শহরের একটি মদের দোকানের সামনে জটলার মধ্যে থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বললেন, ‘‘আগের বছর খুব অসুবিধা হয়েছিল। লকডাউনের জন্য মদের দোকান বন্ধ ছিল। তাই ব্ল্যাকে বাড়তি টাকা দিয়ে মদ কিনতে হয়েছিল। অনেক টাকা খরচও হয়েছিল। এ বার তাই আর কোনও ঝুঁকি নিলাম না। বাড়তি মদ কিনে রেখেছি।’’
লম্বা লাইন থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গাতেই ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ৭টা ছুঁতেই মদের দোকান বন্ধ করতে নামতে হয়েছে পুলিশকে। লক্ষ্যের এতটা কাছে এসেও তার নাগাল না পাওয়ায় বহু সুরাপ্রেমীর গলাতেই শোনা গিয়েছে আক্ষেপের সুর। কেউ বা পুলিশকর্মীদের কাতর অনুরোধ করেছেন, ‘‘স্যার, আর ১৫ মিনিট দিন!’’
সোমরসের সন্ধানে সুরাপ্রেমীদের কষ্টসহিষ্ণুতা দেখে তাঁদের ‘সুরাসাধক’ আখ্যা দিয়েছেন রসিকজন। কারও আবার সরস মন্তব্য, ‘‘এ-ও তো আসলে সাধনাই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy