প্রতীকী ছবি।
টিকিট তো জুটে গিয়েছে। এ বার বাসা খুঁজতে গিয়ে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে ওঁদের! ভোটে ‘তোমাদেরই লোক’ জানান দিতে গেলে স্থানীয় ঠিকানা যে জরুরি!
লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২ আসনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বাসিন্দা নন। তাতে আইনত কোনও বাধাই নেই। কিন্তু ‘বহিরাগত’ হয়ে থাকলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে। বাড়ি থেকে নির্বাচনী কেন্দ্রের দূরত্বও অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ। আবার হোটেলে থাকলে নির্বাচনের তহবিলে লম্বা হিসেব দেখাতে হয়। কেউ কেউ বাঁকা চোখেও দেখেন হোটেলবন্দি প্রার্থীকে। সব দিক ভেবে দেখে তাই একটা বাড়িতে আস্তানা গেড়েই ভোট-যুদ্ধে নামতে চান প্রার্থীরা। তেমন আস্তানার খোঁজেই চলছে দৌড়ঝাঁপ!
তৃণমূল শাসক দল, তাদের হাতে পরিকাঠামোর সুবিধা আছে। আবার সিপিএম সাংগঠনিক ভাবে গোছানো দল, কিছু না থাকলেও প্রার্থীকে থাকতে দেওয়ার জন্য পার্টি অফিস আছে। যদিও অধিকাংশ আসনে বাম প্রার্থী এলাকারই রাজনৈতিক মুখ। অসুবিধায় বেশি পড়েছে দুই সর্বভারতীয় দল বিজেপি ও কংগ্রেস। তাদের ‘বহিরাগত’ মুখ বেশি আবার সংগঠনও আলগা!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জঙ্গিপুরে প্রথম বার ভোট লড়তে গিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় পড়েছিলেন এই আস্তানার গেরোয়। জঙ্গিপুরে তেমন হোটেলও নেই। স্থানীয় এক জনের বাড়িতে শেষমেশ থেকে গিয়ে ভোটটা করেছিলেন। কেন্দ্রে সরকারে ফিরে ফের মন্ত্রী হয়ে জঙ্গিপুরে জমি কিনে বাড়িই বানিয়ে ফেলেছিলেন। সেই ‘জঙ্গিপুর ভবন’ এখন তাঁর সাংসদ-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের স্থানীয় ঠিকানা। কিন্তু সকলে প্রণববাবু নন। এ বার যেমন কংগ্রেসের হাওড়া ও উলুবেড়িয়ার দুই প্রার্থী শুভ্রা ঘোষ ও সোমা রানিশ্রী রায় দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। কোথায় কী ভাবে থাকবেন তাঁরা, এখনও ঠিক নেই। প্রাক্তন বিচারক ইন্তাজ আলি শাহ প্রার্থী হয়ে কৃষ্ণনগর গিয়েছিলেন আস্তানার খোঁজে। সেখানে কংগ্রেসের অধিকাংশ কার্যালয় পর্যন্ত বেদখল হয়ে আছে। কংগ্রেসের লোকজনের কাছে তেমন কিছু সহায়তা না পেয়ে পরের দিনই বিধান ভবনে সোমেন মিত্রের কাছে দৌড়ে এসেছেন!
বিজেপির বেশ কিছু প্রার্থীকে আবার এলাকার দলীয় কর্মীরা এখনও মানতে নারাজ। ফলে, স্থানীয় সহযোগিতা মিলছে না। বালুরঘাট থেকে গিয়ে ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির প্রার্থী নীলাঞ্জন রায় বলছেন, ‘‘মহেশতলায় আমার এক বন্ধু আইনজীবীর ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়েছি। আগে শহর কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, আমাদের সঙ্গেই বিজেপিতে এসেছিলেন।’’ বসিরহাটে সায়ন্তন বসুর থাকার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে দলের কর্মীদের। রায়গঞ্জের দেবশ্রী চৌধুরী তাঁর বালুরঘাটের পুরনো ঠিকানা থেকে আপাতত যাতায়াত করছেন।
বাসুদেব আচারিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ১০ বছর আগে তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায় উঠেছিলেন বাঁকুড়া শহরের একটি হোটেলে। ঠেকে শিখে এ বার বাড়ি নিয়েছেন। ব্যারাকপুরে দীনেশ ত্রিবেদীর ফ্ল্যাটও জংলা গাছ-টাছ উড়িয়ে সাফ-সুতরো করা হয়েছে। যদিও বসিরহাটে নুসরত জহান এখনও পর্যন্ত যাতায়াতই করেছেন। বস্তুত, বসিরহাটে কংগ্রেস প্রার্থী কাজী আব্দুর রহিম (দিলু) ছাড়া বাকি তিন দলের প্রার্থীই ‘বহিরাগত’! সিপিআইয়ের পল্লব সেনগুপ্ত উত্তরপাড়ার সাবেক বাড়ি থেকে ছুটোছুটি করে বসিরহাটে বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। যদিও থাকতে শুরু করেননি। ডায়মন্ড হারবারের সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম বলছেন, ‘‘কিড স্ট্রিটের বাড়ি থেকে কাকভোরে বেরিয়ে এই ক’দিন প্রচার করেছি। এ বার আমতলা পার্টি অফিসে থাকব।’’
সংসদে কার ঠাঁই হবে, ভোটারেরা ঠিক করবেন। তার আগে এলাকায় ঠাঁই তো চাই সকলের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy