প্রতীকী ছবি।
বছরখানেক আগে পঞ্চায়েত ভোটে এ রাজ্যের মানুষ অস্ত্রশস্ত্রের ঝলকানি দেখেছিলেন দেদার। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের মাস তিনেক আগে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে নির্দেশ পাঠায়। শুরু হয় ধরপাকড়, তল্লাশি। মাস তিনেক অভিযানের পরে রাজ্যে বেআইনি অস্ত্রের কারবারের হাল-হকিকত অনেকটাই সামনে এসেছে। আর তাতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় পুলিশ কর্তাদের। বেআইনি অস্ত্রের বাজারে ‘মেড ইন মুঙ্গের’-এর নামডাক বহুকালের।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বিহারের মুঙ্গের থেকে ‘দক্ষ’ কারিগরেরা এ রাজ্যে এসেও তালিম দিচ্ছে অস্ত্র তৈরির। নিজেরাও স্থানীয় দুষ্কৃতীদের ছত্রচ্ছায়ায় কারবার ফেঁদে বসছে। ভোটের মুখে এই তথ্য কপালে ভাঁজ ফেলেছে আইনরক্ষকদের।
পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানানো ওয়ান শটারও এখন মুঙ্গেরের কারিগরদের হাতে পড়ে আধুনিক গড়ন পাচ্ছে। তার কার্যক্ষমতাও বেশি। আগে এই সব অস্ত্র মুঙ্গের থেকেই আসত। এখন এ রাজ্যেই তৈরি হতে শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে গুলিও।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কয়েক মাস আগে কুলতলির মৈপীঠে একটি জলদস্যুর দলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাতজনের কাছ থেকে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। সবই ‘মুঙ্গের টেকনোলজি’র ফসল। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এক সময়ে মুঙ্গের থেকেই অস্ত্র কিনত এই দুষ্কৃতীরা। পরে এ রাজ্যে তৈরি অস্ত্র কিনছে। যা তুলনায় সস্তা, কিন্তু কাজে ষোলো আনা ফল দেয়!
সিআইডির এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘মুঙ্গেরে তৈরি অস্ত্র এক সময়ে দেদার ঢুকত রাজ্যে। কিন্তু মাস ছ’য়েক ধরে রাজ্য বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র কারখানা ও অস্ত্র কারবারিদের ধরার পরে জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ এখন বেআইনি অস্ত্রের কারবারে কার্যত মুঙ্গেরকে টেক্কা দিচ্ছে। সেখানকার অস্ত্র কারবারিরা এখানে টাকা খাটাচ্ছে। মুঙ্গের থেকে কারিগর আনছে। সেখানকার কারিগরি দক্ষতায় অস্ত্র তৈরি হচ্ছে বাংলার নানা প্রান্তে।’’
গত এক বছরে শতাধিক অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েক হাজার অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে কারবারিরা যে ভাবে দিকে দিকে জাল ছড়িয়েছে, তাতে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র নেহাতই হিমশৈলের চূড়া— মনে করছেন গোয়েন্দারা।
এক গোয়েন্দা কর্তা জানালেন, অস্ত্রের কারবারে একশো-দেড়শো শতাংশ মুনাফা। একটা সেভেন এমএম রিভলভার তৈরিতে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ। যা বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ হাজার টাকায়। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারছে, অস্ত্র তৈরির পরে স্থানীয় এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিক্রিবাট্টার ঝক্কি তারাই সামলায়। বহু মহিলাও এই কারবারে সামিল হয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে ৫০-৬০ মহিলাকে ধরেছে পুলিশ। কারখানা থেকে অস্ত্র নিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে যারা হাজার দু’য়েক টাকা মজুরি পেত।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ভোটের আগে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ, সিআইডি ও জেলা পুলিশের অফিসারদের নিয়ে নিয়মিত সমন্বয়-বৈঠক করা হচ্ছে।’’ রাজ্যে অস্ত্র কারবারের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কী বলছেন নেতারা?
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যে পালাবদলের পরেই অস্ত্রের কারবারের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। শাসকদলের মদত ছাড়া তা সম্ভব ছিল না।’’ বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘শাসকদলের লোকজন পকেটে অস্ত্র নিয়ে ভোট করেছিল। পুলিশ সে সময়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। এখন নাটক করছে।’’ সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ির কথায়, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের
সময় থেকে শাসকদলের লোকের হাতে হাতে অস্ত্র ঘুরছে। তা রাজ্যের মানুষের জানতে বাকি নেই। কারা অস্ত্র ব্যবসায় মদত দিচ্ছে, কারা কিনছে, সকলেই সব জানে।’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বিরোধীরা আর কত কী বলবেন বোঝা দায়! পুলিশ আমাদের হয়ে কাজ করছে, প্রশাসন আমাদের হয়ে কাজ করছে, অস্ত্র কারবারিরাও আমাদের কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলছেন! এখন তো নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাজ্য প্রশাসন। কমিশন খতিয়ে দেখলেই পুরো বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy