বড়দের আঙুলে কালো দাগ! অনেক দিন পর্যন্ত আমার কাছে ভোটের মানে ছিল এটুকুই। বাবা-মা রাজনৈতিক ভাবে খুবই সচেতন। ওঁদের ভাল-মন্দের ধারণা বেশ স্পষ্ট এবং তা রাজনৈতিক দিক থেকেও প্রাসঙ্গিক। তাঁদের কাছে বড় হওয়া সত্ত্বেও আমি অনেক দিন পর্যন্ত রাজনীতি-নির্বাচন থেকে খানিক দূরেই থেকেছি। তাই আমার রাজনৈতিক ভাবনা একেবারেই নিজের মতো করে তৈরি হয়েছে।
এর ফলে কখনও কোনও রাজনৈতিক আদর্শের একটি দিক ঠিক মনে হয়েছে, তো অন্যটির আর একটি দিক ভাল লেগেছে। সে ভাবেই এখনও চলছি। সেই ভাবনা
থেকেই একটি কথা বলতে পারি— কখনওই সবটা খারাপ হয় না। সব কিছুর মধ্যেই ভাল এবং মন্দ, দু’টিই থাকে। কোথাও কোনও বদল এলেই যে আমরা গেল গেল করি, তার কোনও মানেই হয় না। কোনও কিছুরই কি সব ভাল হয়? তেমন, সব খারাপও হয় না। আর তা ছাড়া, সবটা কিন্তু নেতা-নেত্রীদের হাতে থাকে না। নিজেরা কে কী করছি, সেটাও খেয়াল রাখার কথা। অনেক ক্ষেত্রে ভেবে ফেলা হয়, যাঁকে ভোট দেব, তিনি এসেই সব মুশকিল আসান করে দেবেন। তা কি সম্ভব? নিজেদের সুস্থ রাখার, ভাল ভাবে থাকার দায়িত্ব নিজেদেরও রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা হল, এ সব ভাল-মন্দ ভোট দেওয়ার সময়ে ভাবা দরকার। কাকে ভোট দিচ্ছি, তিনি কী করতে পারেন বা পারেন না— তা তো আগে থেকে ভাবতে হবে। কোনও নেতা ভোটে জিতে আসার পরে হঠাৎ যদি মনে হয় কিছু ভাল হচ্ছে না, তখন তো ঝট করে সবটা বদলে ফেলা যায় না।
দু’পক্ষকেই একে-অপরের সমস্যাটা বুঝতে হবে। এই জরুরি অভ্যাসটা এক বার করে ফেলা গেলে কারওরই সবটা খারাপ বলে মনে হবে না। যেমন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি একটা জায়গায় অনড়। যাঁদের বেশি কিছু নেই, আমি কিন্তু তাঁদের পক্ষে। সব পেয়েও যাঁরা আরও চাইতে থাকেন, তাঁদের কেউ কোনও দিন ভাল রাখতে পারবেন না। তবে যাঁর নেই, সবটা তাঁর হাতের কাছে তুলে দিতে হবে, তেমন পথেও আমি বিশ্বাসী নই। বরং জনসাধারণ যাতে আরও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার। কেউ ভাল-মন্দ নিয়ে কথা বললে, তাঁকে যেন চুপ করিয়ে দেওয়া না হয়। তাঁকে নিজের বক্তব্য পেশ করতে সাহায্য করা হয় যেন। ‘পেডাগজি অব দ্য অপ্রেসড্’-এর কথা মনে পড়ছে। সেখানে লেখক
মনে করাচ্ছেন, যিনি শিক্ষা দান করছেন, শিষ্যকে তাঁর সতীর্থ হিসেবে জায়গা দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ গুরু এবং শিষ্য, নেতা ও সমর্থক, সকলেই একটি সৃষ্টির অঙ্গ। এক জন প্রকৃত নেতার সে ভাবনাটাই মাথায় রাখার কথা। তাতেই এগিয়ে চলার শক্তি পাবেন সকলে। রাজ্য, দেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। সে কাজ করতে গেলে অবশ্যই নেতা-নেত্রীদের সদিচ্ছা বেশি প্রয়োজন। তবে জনতার ইচ্ছেটাও দরকার। নেতা ভাল হলে, সমাজ সুস্থ থাকবে। সমাজ সুন্দর হলে, নেতারাও সুস্থ ভাবনার মানুষ হবেন। এ ভাবেই নিজেদের মধ্যের ভাল দিকটা বিকশিত হতে থাকবে। জন ডানের একটা কবিতা আছে, ‘নো ম্যান ইজ অ্যান আইল্যান্ড’। সেখানে তিনি লিখছেন, ‘‘এভরি ম্যান ইজ আ পিস অব দ্য কন্টিনেন্ট, আ পার্ট অব দ্য মেন...’’। অর্থাৎ, কোনও মানুষ বিচ্ছিন্ন নন। কবি বলতে চেয়েছেন, সকলেই গোটা সমাজের অংশ। এ কথা আমাদের সকলের মনে রাখা খুব জরুরি। এক জন ঠিক চললে আর এক জনও সে ভাবে চলার চেষ্টা করতে পারবেন। কিন্তু এখনকার রাজনীতি দেখলে মনে হয়, সবটাই খুব ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সামগ্রিকের কথা কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না। তাই কেউ বিরোধিতা করতে গেলেই সমস্যা হয়। সকলের কণ্ঠরোধ করে রাজনীতির ময়দানে যে এগিয়ে যাওয়া যায় না, তা নেতা ও জনতা কেউ যেন ভুলে না যায়। আসল ক্ষমতা কিন্তু জনতার হাতেই। জনতা ভোট দেবে, তবে তো নেতা নেতৃত্ব পাবেন। জনতার কথা না শুনলে যে কোনও দিন হাত থেকে ফস্কে যেতে পারে ক্ষমতা। গদ্দাফিও তো কত স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তো এখন নেই। যে কোনও দিন, যে কারও সঙ্গে এমনই হতে পারে।
তাই বলি, আশা ছাড়লে চলবে কেমন করে? নিজেদেরই বুদ্ধি করে চলতে হবে। আমাদের দেখতে হবে, কে কম ক্ষতিকর। সেই মতোই না হয় ভোট দেব। ভাল তো থাকতেই হবে। নিজেদের প্রতি বিশ্বাস হারালে চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy