প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কাঁকিনাড়ায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের দু’দিন পরেও রাজনৈতিক-দুষ্কৃতী তাণ্ডবে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত ভাটপাড়ায়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বহু এলাকায় দরজা এঁটে ঘরে বসে রয়েছেন বাসিন্দারা। ভাটপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিন বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের হিংসা নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা ব্যক্ত করেন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির নিন্দা করেন এনডিএ-র অন্য নেতারাও। মোদী নিজে বলেন, ‘‘আজও ট্রেন লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে। এত দিন ধরে বিজেপির এত কর্মী মারা গিয়েছেন।’’ তবে ভাটপাড়ায় হিংসার পিছনে অবশ্য বিজেপি কর্মীদের দিকেই আঙুল উঠেছে।
রবিবার, ভোটের দিন শুরু হয়েছিল গোলমাল। সোমবার ১৪৪ ধারা জারির পরেও তাতে রাশ টানা যায়নি। মঙ্গলবার ট্রেন রুখে আন্দোলন তো ছিলই। যাত্রীদের লক্ষ্য করে বোমা ও ইট-পাথর ছুড়ে ত্রাস তৈরি করে একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তারা সকলেই বিজেপির কর্মী। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা রেল অবরোধের জেরে শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিপাকে পড়েন বহু মানুষ।
মঙ্গলবারও কাঁকিনাড়ায় সকাল শুরু হয় বোমার শব্দ আর রেল অবরোধ দিয়ে। সাত সকালে কাঁকিনাড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৫ নম্বর লাইনে বোমাবাজি শুরু হয়। আতঙ্কিত এলাকায় ত্রাস আরও জাঁকিয়ে বসে। লোকজন আর বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস পাননি। তাঁদের অভিযোগ, সারাদিনও দফায় দফায় কাঁকিনাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজি হয়। গুলি চলেছে বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দাদের। বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট চলেছে অবাধে। এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। হামলাকারীরা বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহের লোক বলে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল।
সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ কাঁকিনাড়া স্টেশন লাগোয়া ২৯ নম্বর রেলগেটে শুরু হয় অবরোধ। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ একদল দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র, বোমা নিয়ে রেল লাইনে হামলা চালায়। রাজীব রাহা নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা ট্রেন লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে। এক দিকে বোমাবাজি, অন্যদিকে পাথর— সব মিলিয়ে কামরার মধ্যে প্রাণভয়ে কাঁপতে থাকি।’’ এর পর ২৯ নম্বর রেলগেট এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল নেতা ধর্মপাল গুপ্তের বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির সামনে রাখা দু’টি স্কুটার এবং একটি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় একটি গাড়ি। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা অর্জুনের লোক। যদিও অর্জুন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং পুলিশ মিলে এই সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’’ তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘অর্জুন বিভেদ তৈরি করে সংঘর্ষ বাধাতে চাইছেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের দু’দিন পরেও কেন গোলমাল সামলানো যাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশের কাছে। কাল বিজেপির পক্ষ থেকে পীযূষ গয়াল এবং নির্মলা সীতারামন নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে আর্জি জানিয়েছিলেন, যত দিন নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ থাকবে তত দিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বাহিনী রেখে দেওয়া হোক। সেই আর্জি মেনে ২৭ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হয়েছে রাজ্যে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরীর অবশ্য দাবি, ‘‘পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’
এ দিনের এনডিএ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁকে দেখে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘‘বাবুলের মতো আমাদের সকলকে পশ্চিমবঙ্গে লড়তে হবে। স্বাধীনতার আন্দোলন আমি দেখিনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মানুষের মধ্যে আকুতি দেখেছি। যাঁদের কিছু নেই, তাঁরাও খালি গায়ে বুকজলে দাঁড়িয়ে সেখানে বক্তৃতা শুনতে এসেছেন। আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy