ফাইল চিত্র।
শিলিগুড়িতে দাঁড়ালে এক দিকে পাহাড়। অন্য দিকে তরাই, ডুয়ার্সের চা বাগান।
দিনহাটায় দাঁড়ালে নজর মূলত তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত এবং বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক।
আগামী ৩ এপ্রিল একই দিনে দুই বড় দলের দুই প্রধান সেনাপতির জনসভা উত্তরবঙ্গে। নরেন্দ্র মোদীর জন্য বাছা হয়েছে শিলিগুড়িকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিয়েছেন দিনহাটাকে। মোদীর নজর যদি থাকে এক সভা থেকে একাধিক জায়গাকে ধরার, মমতার সে ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে চান মূলত একটি জায়গায়।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে সভা করেন মোদী। সেই সভার সঙ্গে একটি ছোট সরকারি অনুষ্ঠান ছিল, যেখান থেকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন করেন। তাঁর সে দিনের বক্তৃতাতেও জলপাইগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকাকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বাদ গিয়েছিল পাহাড়। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, এ বারে সেই ‘ঘাটতি’ও পূরণ করে দেবেন তিনি।
বিজেপি সূত্রের দাবি, শিলিগুড়িতে সভা করলে এক দিকে যেমন শিলিগুড়ি বিধানসভাকে ধরা যাবে, তার পাশাপাশি লক্ষ্য থাকবে পাহাড়ের বিধানসভা আসনগুলোও। শিলিগুড়ি এখনও বামেদের হাতে। বিজেপির একটি অংশের দাবি, তার মধ্যেই কিন্তু বিজেপির প্রতি সমর্থন বাড়ছে এখানে। তাঁদের যুক্তি, দু’বছর আগে রামনবমীর দিন যে মিছিল বেরিয়েছিল, তাতেই বিষয়টি পরিষ্কার। তা ছাড়া শিলিগুড়ি শহরে অবাঙালি মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাঁদের মধ্যেও বিজেপির প্রভাব বাড়ছে বলে ওই অংশের দাবি।
এর সঙ্গে রয়েছে পাহাড়। পাহাড়ে যে তিনটি বিধানসভা আসন রয়েছে, সেখানকার ভোটারদের প্রতিও মোদী বুধবারের জনসভা থেকে বার্তা দেবেন বলে দলের তরফে মনে করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ডুয়ার্সের চা বাগান এলাকা। সব মিলিয়ে শিলিগুড়ির জনসভা থেকে মোদী বড় অঞ্চলকেই নিশানা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে বিজেপির আহ্বায়ক রথীন্দ্রনাথ বসু বলেন, ‘‘এই সভা থেকে নরেন্দ্র মোদী পাহাড়, ডুয়ার্স, চা বাগান, সব জায়গাকেই ধরবেন। সামগ্রিক ভাবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে তিনি গোটা রাজ্যের উদ্দেশেই বার্তা দেবেন।’’
মোদীর এই কৌশলের পাশাপাশি মমতার নজর কিন্তু আপাতত একটি এলাকাতেই নিবদ্ধ। সেটা দিনহাটা। আগামী কয়েক দিন ধরে তিনি একাধিক জনসভা করবেন উত্তরবঙ্গে। যার সূচনা কোচবিহারের দিনহাটা থেকে। কিন্তু প্রথমেই দিনহাটা কেন?
দিনহাটার ভেটাগুড়িতে নিশীথের বাড়ি। দীর্ঘদিন তিনি এখানে যুবর দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু গোলমাল শুরু হয় গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে। সেই সময়ে যুবর সঙ্গে নিত্যদিন সংঘাত হত মূল তৃণমূলের। এর মধ্যে নিশীথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যার মধ্যে কিছু ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে বলেও তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি। যুব এবং মূল তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে সুব্রত বক্সী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজ্য নেতাদেরও কোচবিহারে সভা করে বার্তা দিতে হয়। যুবর রাজ্য সভাপতি অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুব কোনও আলাদা দল নয়, মূল তৃণমূলেরই অংশ। এর পরে নিশীথকে দল থেকে বহিষ্কার এবং কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর বিজেপিতে যোগ ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়া।
তৃণমূলের স্থানীয় সূত্রের দাবি, দিনহাটাই যে হেতু নিশীথের খাসতালুক, তাই সেখান থেকে দলের লোকজনকে বার্তা দিতে চান মমতা। এক দিকে যুবর লোকজনেরা রয়েছে, অন্য দিকে সেখানকার সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘‘এ হল শত্রুর ঘরে হানা।’’ কোচবিহার তৃণমূলের সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, ‘‘নিশীথ কী কী দুষ্কর্ম করেছে, নেত্রীর এই সভা থেকেই আমরা তা মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট করে দেব।’’ যদিও নিশীথ বরাবরই বলছেন, ‘‘আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’
মাঝে মাত্র এক দিন। বুধবার দুই ময়দানে দুই সেনাপতির টক্করের দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy