Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

স্বামী নিহত, না জেনেই ভোট স্ত্রীর

ভোটের আগের রাতেই মারধরে মৃত্যু হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি অঞ্চলের ধবনি গ্রামের বাসিন্দা বিজেপির জুনশোলা বুথের সহ-সভাপতি রমেনের।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

কিংশুক গুপ্ত
বেলিয়াবেড়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

বিজেপির বুথ সভাপতির দেহ তখন লাশকাটা ঘরে। সে কথা না জেনেই তাঁর স্ত্রী ও মা সাতসকালে দাঁড়ালেন ভোটের লাইনে।

ছোট ভাই রমেন সিং যে আর নেই তা অবশ্য শনিবার রাতেই জানেন দাদা বীরেন। সপরিবার ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনিও। বলছিলেন, ‘‘আগে সকলে ভোটটা দিয়ে আসুক। তারপরই না হয় খবরটা দেব।’’

ভোটের আগের রাতেই মারধরে মৃত্যু হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি অঞ্চলের ধবনি গ্রামের বাসিন্দা বিজেপির জুনশোলা বুথের সহ-সভাপতি রমেনের। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। রবিবার সকাল পর্যন্ত রমেনের মৃত্যুর খবর জানা ছিল না তাঁর স্ত্রী বাসন্তী ও মা নীরদার। তাঁরা জানতেন, রমেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তাই হাসপাতালে যাওয়ার আগে ভোট দিতে ছোটেন বাসন্তীরা। কপালে সিঁদুরের টিপ। সিঁথিতে উজ্জ্বল সিঁদুর। পাটভাঙা ছাপা নীল শাড়িতে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েই ফুঁসছিলেন বাসন্তী, ‘‘কী অপরাধ আমার স্বামীর? অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন বলে অমন অমানুষের মত পেটাবে! অত্যাচারের জবাব দেব বলেই এমন বিপর্যয়ের দিনেও ভোট দিতে এসেছি।’’ বাসন্তীর শাশুড়ি নীরদাও বলছিলেন, ‘‘আমার ছোট খোকা কেমন আছে জানি না। তবু প্রতিবাদ জানাতেই ভোট দিতে এসেছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রমেনের গোটা পরিবারই সকালবেলা ভোট দিয়েছে বাঘুয়াশোল জুনশোলা হাইস্কুলের ১১৩ নম্বর বুথে। আর তখন দেড় কিলোমিটার দূরে ধবনি গ্রামে মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে স্টিলের বাটিতে জল-মুড়ি মেখে খাচ্ছিল রমেন-বাসন্তীর খুদে দুই মেয়ে আর এক ছেলে। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িটায় দেওয়াল বলে কিছু নেই। চট-প্লাস্টিক দিয়ে ফাঁক-ফোকর ঢাকা। রমেনের মেয়ে বছর বারোর নীলিমা, বছর আটের অনিমা আর ছ’বছরের ছেলে সুমন বলল, ‘‘রাতে গোলমাল হয়েছিল। বাবাকে কারা যেন মারধর করেছে।’’

বছর বিয়াল্লিশের রমেন ছিলেন খেতমজুর। তাঁর মৃত্যুর পরে ধবনি গ্রামে বসেছে পুলিশ পিকেট। তার সামনে দিয়েই ভোট দিয়ে ফিরলেন বাসন্তী। বাড়ি ঢুকে জানলেন, সিঁথির সিঁদুর মুছেছে। কাঁদতে কাঁদতে দাওয়ায় আছড়ে পড়লেন সদ্য স্বামীহারা। বললেন, ‘‘তুমি বলেছিলে সকাল-সকাল ভোট দিয়ে আসতে। আমি কিন্তু তোমার কথা শুনেছি।’’

শুধু স্ত্রী-পরিজন নয়, শনিবার বিকেলে দলীয় কর্মী লক্ষ্মীকান্ত সিং, জগদীশ সিংদেরও রমেন বলেছিলেন, একজনেরও ভোট যেন নষ্ট না হয়।

একজনের ভোট নষ্ট অবশ্য রোখা গেল না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy