বিক্ষোভ: ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের কনভয় লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি। রবিবার কেশপুরের দোগাছিয়ায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর। বিক্ষোভ সরাতে প্রার্থীর দেহরক্ষীদের গুলি চালনা। রাজনৈতিক সংঘর্ষ। ইভিএম ভাঙচুর। বোমা। মৃত্যু। সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত। একাধিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শূন্যে গুলি চালনা। চুম্বকে ভোট-ষষ্ঠীর চিত্র। অন্য পাঁচ দফাকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাব। রবিবার আরও কয়েক যোজন এগিয়ে সিইও বললেন, ‘‘খুবই শান্তিপূর্ণ’। তাঁর কথায়, ‘‘ঘাটালের কয়েকটি অশান্তি ছাড়া এ দিনের ভোট খুবই শান্তিপূর্ণ। বড়সড় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেনি।’’
ভোট পরিস্থিতি জানতে চেয়ে রবিবার সিইওকে ফোন করেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। সিইও’র কাছ তিনি থেকে ঘটনার ‘জবাবদিহি’ চান বলে খবর। তাতে অবশ্য আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিতে চায়নি কমিশন। এ দিনের ভোট পর্বে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ এবং ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে।
অন্য দফাগুলিতে ‘কুইক রিআ্যাকশন টিম’ (কিউআরটি)-এ রাজ্য পুলিশের অফিসাররা থাকতেন। কিন্তু ভোট-ষষ্ঠীতে কিউআরটি-র দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তেরা। সে কারণে কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা হলে ঘটনাস্থলে কিউআরটির পৌঁছতে সমস্যা হয়েছে। সূত্রের খবর, এ প্রসঙ্গে এ দিনই রাজ্য সিইও দফতরের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চায় কমিশন। সিইও দফতর থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, কিউআরটি পরিচালনা কেমন ভাবে হবে, তা স্থির করেছেন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের কার্যত কিছুই করণীয় নেই। আবার রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ব্যাখ্যা, কিউআরটি-তে কেন রাজ্য পুলিশ নেই, সে বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। যা করার, কমিশনই স্থির করেছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কমিশন, বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে শাসক এবং বিরোধী দলগুলির বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেহ, আধা সেনার উর্দিতে ভোট করেছেন আরএসএসের কর্মীরা। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, রাজ্য পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা নিতে না দেওয়ায় গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়েছে। ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘যেখানে যতুটুকু গণ্ডগোল, সবই বিজেপির অপচেষ্টা!’’
বিরোধীরা আবার এক সুরে অভিযোগ করেছে, কিউআরটি নিয়ে নানা আশ্বাস দিয়েও কমিশন সুষ্ঠু ভোট করাতে পারেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি-সহ চার বিজেপি নেতা সিইও-কে চিঠি দিয়েছেন। নকভির অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের উপরে গুন্ডাতন্ত্র রাজ করছে। দুর্ভাগ্যজনক হল, কমিশনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা পাওয়া যাচ্ছে না।’’ সিইও-কে দেওয়া চিঠিতেও নকভিরা লিখেছেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা অবাধ ভোট আটকাতে যে কৌশলগুলো ব্যবহার করছে, সে ব্যাপারে রাজ্য বিজেপি বহু বার কমিশনকে জানিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা দেখা হচ্ছে বলা ছাড়া আর কোনও কার্যকর ব্যবস্থা তারা নেয়নি।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে আলোচনায় কমিশন এত আশ্বাস দিল, কিউআরটি-র দায়িত্ব আদা সেনাকে দেওয়া হল। তার পরেও বুথ দখল হল, ছাপ্পা ভোট পড়ল, লোকে ভোট দিতে পারল না অথচ বাহিনীকে পাওয়া গেল না! কমিশন বাংলার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে! কেন এমন হল, তার জবাব তাদের দিতে হবে।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘দুই মেদিনীপুরের বহু জায়গায় তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বাহিনী তার ভূমিকা পালন করেনি। কমিশনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। তবে তার মধ্যেও যে মানুষ ভোট দিচ্ছেন, সেটা ভাল।’’ সিইও-কে চিঠি দিয়ে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’ হলদিয়ার সব বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে। সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কিছু জায়গায় উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বাহিনী দেওয়া হয়নি, বুথ দখল করে ছাপ্পা হয়েছে, সেই কথা কমিশনকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
ষষ্ঠ দফার ভোটে কিউআরটি-র পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছিল কুইক অ্যাকশন টিম (কিউএটি)। কিন্তু কিউআরটি ও কিউএটি কী ভূমিকা পালন করল, তা খোলসা করতে পারেননি কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা। কেন কিউআরটি ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছল, তা দেখা হবে বলে জানান বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় ভি নায়েক।
এই পরিস্থিতিতে এ দিনের ভোটে পাঁচ জায়গায় বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে জানিয়েছে সিইও দফতর। তবে কী কারণে গুলি, তা স্পষ্ট করেনি তারা। ২৬ জন আহত। তার মধ্যে তিন জন গুলিবিদ্ধ। সংবাদমাধ্যম এবং প্রার্থীদের গাড়ি-সহ ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই চিত্র পূর্ণাঙ্গ নয় বলে জানিয়েছেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy