ভাঙা বাড়িতে সন্তান কোলে সীমা দাস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
আড়াই বছরের শিশুটির চোখে-মুখে তখনও আতঙ্ক। মায়ের গলা ধরে ঝুলে আছে, কিছুতেই ছাড়তে রাজি নয়। তাকে কোলে আঁকড়ে মা সীমা দাস বলছেন, “টিনের চাল ভাঙার শব্দে চমকে-চমকে উঠছিল ছেলেটা। ওকে নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন আমার শ্বশুর। এখনও ওর ভয় কাটেনি।”
হাঁসখালির ছোট ব্রিজ এলাকায় মাঠের প্রান্তে বাড়ি রাজু দাসের। তিনি তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় বিজেপি কর্মী গোবিন্দ সাহাকে তাক করে গুলি চালানোর অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে হাঁসখালি থানার পুলিশ। ওই রাতেই রাজু দাসের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল এলাকার কিছু লোক। তার পরিবারে দাবি, তারা সকলেই বিজেপি করে। টিনের বাড়িটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ভেঙে গিয়ে গিয়েছে তারা। ঘরের ভিতরটা তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে। কোনও কিছুই আস্ত নেই। শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন রাজুর স্ত্রী, মা, বাবা।
শুধু ওই বাড়িই নয়, ভাঙচুর করা হয়েছে আরও অন্তত ন’জন তৃণমূল নেতাকর্মীর বাড়ি। তার মধ্যে এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িও আছে। ওই রাত থেকেই এলাকাছাড়া বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতাকর্মী। উত্তেজনা থাকায় শুক্রবার ওই এলাকায় রুটমার্চ করেছে আধা সেনা। পুলিশ উভয় পক্ষের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে।
ওই এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে এলাকার বেশ কিছু পরিবার। তারা এক সময়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রঙ্গিলা মণ্ডলের স্বামী এরশাদের ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু পরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এরশাদের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধে। এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া বছর ষাটেকের কুমারেশ সাহা বুধবার বাজারে চায়ের দোকানে বসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। খবর পেয়ে এরশাদ সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে এসে তাঁকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
কিন্তু ঘটনা সেখানেই থামেনি। বিজেপির অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দুপুরে এরশাদ আবার লোকজন নিয়ে এসে কুমারেশের ছোট ছেলে গোবিন্দ সাহাকে হুমকি দেয়। এর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গোবিন্দের দিকে গুলি ছোড়ে এরশাদের সঙ্গী রাজু দাস। যদিও গুলি তাঁর গায়ে লাগেনি। গুলির শব্দে পাড়াপড়শিরা ছুটে আসেন। আশপাশের প্রচুর বিজেপি সমর্থক এসে জড়ো হয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রথমে এরশাদের বাড়িতে হামলা হয়। তার কাকার বাড়ি এবং আশপাশের জনা সাতেক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে সব কিছু তছনছ করে দেওয়া হয়। বেশ কিছু ক্ষণ তাণ্ডব চলার পরে হাঁসখালি থানার পুলিশ আসে। কিন্তু ততক্ষণ হামলাকারীরা চলে গিয়েছে। গোবিন্দ বলেন, “নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি।’’
ওই ঘটনার পর থেকেই এলাকাছাড়া এরশাদ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গুলিতে নিহত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এরশাদ। বিধায়কের মৃত্যুর পরে তাঁর দাপট কমেছে। বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। এরশাদের কাকা আজিম মণ্ডলের আক্ষেপ, “আমাদের এখন সত্যজিতের নেতা নেই বলেই ওদের এত বাড়বাড়ন্ত।”
রানাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের দাবি, “এরশাদের দল গুলি চালানোতেই গণ-প্রতিরোধ হয়েছে।” তবে তা উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত দাবি করেন, “কোথাও কোথাও বিজেপি সাম্প্রদায়িক গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে। আমরা রাজনৈতিক ভাবে তা প্রতিরোধ করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy