Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Visva Bharati

‘গুঁড়িয়ে দাও’ বলেই শুরু ভাঙচুর, ধূলিসাৎ ক্যাম্প

শনিবার, স্বাধীনতা দিবসের দিনে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সোমবার তা চরমে পৌঁছয়।

হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে মেলার মাঠের মূল প্রবেশদ্বারের তালা। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে মেলার মাঠের মূল প্রবেশদ্বারের তালা। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

সৌরভ চক্রবর্তী ও বাসুদেব ঘোষ 
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০২:২০
Share: Save:

তখন সকাল ৮.৩০। একটার পর একটা লোক বোঝাই ট্রাক্টর এসে থামছে। দ্রুত সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াল কয়েক হাজারে। শান্তিনিকেতন লজ মোড় সংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল তখন প্রায় স্তব্ধ। দেখা গেল, জমায়েতের সামনে দাঁড় করানো একটি পে লোডার। মুহুমুর্হু স্লোগান উঠেছে— ‘মেলার মাঠকে ঘিরে দেওয়া পাঁচিল ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘রবীন্দ্র আদর্শ বিরোধী উপাচার্যকে জানাই ধিক্কার’, ‘মেলার মাঠকে পাঁচিল দিয়ে জেলখানা বানানো চলছে না চলবে না’।

করোনা অতিমারির আবহে এত বড় জমায়েত আর দেখেনি বোলপুর শহর। ধীরে ধীরে সেই জনতা এগোল মেলার মাঠের দিকে। জনরোষ গিয়ে পড়ল পাঁচিলের নির্মাণসামগ্রীর উপরে। ফেলে দেওয়া হল ঢালাই মেশিন, ভেঙে ফেলা হল অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস, পে লোডার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ভুবনডাঙা বাঁধ সংলগ্ন মেলার মাঠের মূল প্রবেশদ্বার। মুহূর্তের মধ্যে উধাও হল নির্মাণের জন্য জড়ো করা ইট, পাথর, বালি, সিমেন্ট, ইলেকট্রিক বাল্ব, পাখা, হ্যালোজেনও। এই ছিল সোমবারের খণ্ডচিত্র।

শনিবার, স্বাধীনতা দিবসের দিনে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সোমবার তা চরমে পৌঁছয়। মাঠ পাঁচিল ঘেরা নিয়ে নানা মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। রবিবার স্থানীয় নাগরিক সমিতির সদস্য এবং আশ্রমিকদের একাংশের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠলে সোমবার জমায়াতের ডাক দেওয়া হয় ‘শান্তিনিকেতন মেলার মাঠ বাঁচাও কমিটি’র তরফে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সোমবার ফায়ার ব্রিগেড অফিসের সামনে গোয়ালপাড়া, তালতোড়, কঙ্কালীতলা, সুরুল, মহিদাপুর মুলুক সহ নানা জায়গা থেকে লোক এসেছিলেন। সেই ভিড়ে হুইল চেয়ারে বসা প্রবীণ আশ্রমিক যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি। স্লোগান দিতে দিতে এই দলটি মেলার মাঠের দিকে এগোলে পরিস্থিতি আঁচ করে বিশ্বভারতীর আধিকারিক, নিরাপত্তাকর্মী ও পাঁচিল তৈরির ঠিকাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যান। এরপরে বিনা বাধায় গোটা মেলার মাঠ জুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়। পাঁচিল তৈরির জন্য তৈরি করা খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢিল মেরে ভেঙে ফেলা হয় হ্যালোজেন লাইট ও সিসি ক্যামেরা। কাজ দেখভালের জন্য তৈরি করা ক্যাম্প অফিসও ধূলিস্মাৎ করে দেওয়া হয়।

অফিসের ভিতরে থাকা চেয়ার, ফ্যান ও লাইটগুলিও ভেঙে টুকরো করে দেওয়া হয়। পে লোডার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় মেলার মূল প্রবেশদ্বার। যা গত কয়েক বছর ধরে তালাবন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বভারতীর তরফে জরুরি বৈঠক ডাকা হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে সদ্যপ্রাক্তন কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারীরা অবাধে নির্মাণ সামগ্রী ভাঙচুর ও লুঠ করেছে। লুঠ করা হয়েছে তিনটি ঘাস কাটার মেশিনও। পুরো ঘটনার ছবি সহ বিবরণ ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ দিন সকাল দশটায় শান্তিনিকেতন উপাসনা মন্দিরের সামনে পাঁচিল দিয়ে মেলার মাঠ ঘিরে ফেলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অংশ। উপস্থিত ছিলেন বিদিশা ঘোষ, কুন্তল রুদ্র, শোভনলাল বিশ্বাস সহ অনেকেই।

এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বভারতীর তরফে সরকারি ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হতে চলেছে বিশ্বভারতী। এই কথা চাউর হতেই জনাকয়েক পড়ুয়া অবস্থান বিক্ষোভে বসেন উপাচার্যের বাসভবন ‘পূর্বিতা’র সামনে। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন অন্তিম বর্ষের পড়ুয়া এবং নবাগত পড়ুয়ারা, যাঁরা এই বছর ভর্তি হবেন। তাই যতক্ষণ এই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়া না হচ্ছে, কিংবা উপাচার্য পদত্যাগ না করছেন ততক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Shantiniketan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy