— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চিকিৎসা করাতে ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। পরিবর্তে ক্লাস নিচ্ছিলেন তাঁর মেয়ে। প্রতিবাদে স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। তবে প্রধান শিক্ষকের মেয়ের উদ্যোগে অনেকেই সমাজ মাধ্যমে প্রশংসা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, গ্রামের স্কুলের অচলাবস্থা দূর করতে উচ্চ শিক্ষিত তরুণী এগিয়ে এসে ঠিক কাজই করেছেন। ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর-১ ব্লকের বিলা আমড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
শুক্রবার বিকেলে একটি ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি পর্যটন কেন্দ্র দিঘার গা ঘেঁষে বিলা আমড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলে ৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রধান শিক্ষক চন্দন জানা এবং সহ-শিক্ষিকা রণিতা সেনাপতি পাত্র ক্লাস নেন। প্রধান শিক্ষক স্থানীয় জাতিমাটি এবং সহ-শিক্ষিকা পার্শ্ববর্তী গোবরা এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক। একা ক্লাস নিচ্ছেন রণিতা। তবে পরপর দু’দিন স্কুলে পড়িয়েছেন প্রধান শিক্ষকের মেয়ে ঈপ্সিতা জানা। শুক্রবার ঘটনা জানাজানি হতে স্কুলে যান কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন ঈপ্সিতা। তাঁরা এ কাজের তীব্র আপত্তি জানান। কার নির্দেশে সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন তিনি, ঈপ্সিতার কাছে জানতে চান স্থানীয়েরা। যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পড়ানো যাবে না বলে ওই তরুণীকে নির্দেশ
দেন গ্রামের কয়েক জন। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সে সময় নির্ভীক ভাবে তরুণী গ্রামবাসীদের বলেন, “একা দিদিমণির পক্ষে একসঙ্গে চারটে ক্লাস সামলানো মুশকিল। ছাত্র সংখ্যা অনুপাতে শিক্ষক নেই স্কুলে। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ক্লাস নিচ্ছি।”
ঈপ্সিতা ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেছেন, শিক্ষাদান মহৎ কাজ। আবার কেউ বলেছেন, ছোট ছেলেমেয়েরা পড়ার সুযোগ না পেলে তারা অন্ধকারে ডুবে যাবে। আবার কেউ কেউ রাজ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। যদিও, এ ভাবে বাবার পরিবর্তে স্কুলে গিয়ে মেয়ের শিক্ষকতা করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি নিয়মে রয়েছে, যদি কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাউকে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে গেলে প্রাথমিক ভাবে ভিলেজ এডুকেশন কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। অন্যথায় বিদ্যালয় পরিদর্শক অথবা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের
অনুমতি লাগে।
সহ-শিক্ষিকা রণিতা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। তাঁর নির্দেশক্রমে ঈপ্সিতা স্কুলে পড়িয়েছেন।” ঈপ্সিতার বাবা তথা ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন জানা বলেন, “তিল তিল করে স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যারা সমালোচনা করতে অভ্যস্ত এ রকম গুটিকতক লোক এ দিন স্কুলে গিয়ে অপমানিত করার চেষ্টা করেছে। পড়ুয়াদের স্বার্থে আমি ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও সহ-শিক্ষিকাকে সহযোগিতা করতেই মেয়ে স্কুলে গিয়েছিল।” ভাল উদ্যোগ হলেও নিয়ম মানাটা তো জরুরি! এ বিষয়ে প্রধানশিক্ষকের ব্যাখ্যা, “স্কুলের কোনও অনুষ্ঠান হলে গ্রামের লোকেরা এসে অংশ নেন। এ ক্ষেত্রে কখনই কারও অনুমতি নেওয়া হয় না। আসলে দু’দিন ভুবনেশ্বরে চিকিৎসার জন্য এসেছি। দীর্ঘমেয়াদি কোনও কিছু হলে নিশ্চিত ভাবে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাতাম।”
যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক অনেক দেরিতে স্কুলে যান। পাল্টা প্রধান শিক্ষক বলছেন, “এ রকম কোনও নজির নেই।” এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলছেন, “এক জনের পরিবর্তে আরেক জন স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে পারেন না। ঠিক কী ঘটেছে খোঁজ
নিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy