নিজস্ব চিত্র
আমরা পুজোর সময় ভোট চাইনি। ভবানীপুরেও ভোট আমরা চাইনি। নির্বাচন কমিশন ভোট করবে। বিজেপি সবসময় প্রস্তুত থাকবে। এরা হয়ত এমন একটা সময় ভোট করাতে চাইবে, যখন আর কেউ ভোটে দাঁড়াবেন না, ভোট দিতে পারবেন না। তবে আমরা সবসময় নির্বাচনে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত, বললেন দিলীপ ঘোষ। পুর ভোট নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিলেন দিলীপ ঘোষ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে অনেক ভোট বিজেপি-র দিকে এসেছিল। অনেকে মনে করেছিলেন বিজেপি সরকার গড়তে পারে। সেই কারণে ভোট এসেছিল বিজেপি-র দিকে। সিপিএম-এর ভোটার বিজেপি-র দিকে এসেছিল। এখন হয়ত অনেকের মনে হয়েছে,সিপিএম দলটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। অথবা তৃণমূল চাইছে সিপিএম একটু টিমটিম করে জ্বলুক, না হলে বিজেপি সব পেয়ে যাবে। সেই কারণে হয়ত কেউ হাওয়া দিয়ে রাখতে চাইছে।
মাত্র ছ’মাসের মধ্যে রাজনীতির মানচিত্র পাল্টে গিয়েছে। তা নিয়ে দিলীপ বললেন, আবার সাধারণ নির্বাচন হলে আবার জিতব। মনে করে দেখুন, এর আগে উপনির্বাচনে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। তখন সবাই বলেছিল, বিজেপি বুঝি উঠে যাবে। তার পর সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছিলাম। পরে ভোট হলে আবার জিতব। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন এমনই হয়। সারা দেশে মাত্র ২৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১১টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। তা নিয়ে দিলীপ বললেন, ‘‘যে আসনগুলি আমাদের দখলে ছিল, সেগুলি আমরা জিতেছি। শুধু পশ্চিমবঙ্গে আর কেউ জিততে পারে না। অন্য রাজে বিরোধীরা জিততে পারেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গে পারে না।
‘‘দিনহাটা, গোসাবায় কোনওরকম প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। দিনহাটায় আমাদের প্রার্থী ভোট দিতে পারেননি। দিনহাটাতে কোনও গাড়ি, হোটেল, মাইক দেওয়া হয়নি আমাদের। গোসাবায় কোনও দ্বীপে পৌঁছতে পারিনি। কোনও ভ্যান, অটো আমাদের নিতে চায়নি। মণ্ডল সভাপতিকে বাড়ি থেকে বার হতে দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে নির্বাচনের পরিস্থিতি কতটা থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দিনহাটা ও গোসাবায় সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছে তৃণমূল। গোসাবা, দিনহাটায় ভোট করতে দেওয়া হয়নি’’, বললেন দিলীপ ঘোষ। ভোটে নিশীথ প্রামাণিকের কেন্দ্রে পরাস্ত হয়েছে বিজেপি। তা নিয়ে দিলীপ বললেন, ‘‘নিশীথ প্রামাণিকের বুথটা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নয়। নিশীথ তো গিয়ে বুথ পাহারা দেননি। এ ভাবে আমার বুথে ভোট হলেও আমি কম ভোট পেতাম।’’
রাজনীতি সচেতন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, বামপন্থী আবহে কাটানো প্রজন্ম, ৩৪ বছর একদলের শাসনে কাটানো প্রবীন ভোটার ও নতুন ভোটার, এঁরা সকলেই বিচার করবেন, প্রাপ্ত ভোটের এই ব্যবধান, এই পরিসংখ্যান সাধারণ মানুষের মতামতের প্রকৃত মতামত কি না। আমরা নির্বাচনে পরাজিত। এই পরাজয় মানুষের রায়ে নয়, এই বলে ব্যবস্থাকে অপমান করতে চাই না। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও আমরা বলব, ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ভোটে জেতা দলের উল্টো দিকে ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যাওয়া প্রার্থীকে যে ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে, তার কথাও আমাদের বলতে হবে। আমার মনে হয় কোনও সুস্থ গণতন্ত্রে এই দৃশ্য কাঙ্খিত নয়। কী আবহে গোসাবা ও দিনহাটায় নির্বাচন লড়েছে বিজেপি, সে বিষয়টি মানুষ দেখেছেন। পুরো বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানুষ বিচার করবেন। দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের যে কর্মী ও সাধারণ মানুষেরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য আমরা প্রকৃত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি, সেটা আমাদের অক্ষমতা, স্বীকার করছি, বললেন শমীক।
তৃণমূলকে সাফল্যের জন্য অভিনন্দন, মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি, বললেন শমীক ভট্টাচার্য। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, এ রাজ্যে নির্বিচারে সন্ত্রাস চলেছে। ভোটের আগে ও পরে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে। অসংখ্য বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনের আগে ও পরে যে সন্ত্রাস হয়েছে, তাতে অনেক কর্মীরাই বলেছিলেন এই পরিস্থিতিতে যেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া না হয়। এটা দলের মধ্যে একটা মত ছিল। যে খানে উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানেও অনেকে এই মত প্রকাশ করেছিলেন। তার পরেও আমরা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে আমরা নির্বাচনে লড়েছি। আপনারা ফল দেখেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও উপনির্বাচনের ফলাফলকে ছাপিয়ে গিয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে তৃণমূল, বললেন শমীক।
এখানে ভোট হয় না, তা বোঝা গিয়েছে। গোসাবায় প্রার্থীকে কেউ চেনে না। তিনি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় প্রার্থীর থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন। তা হলে বোঝাই যাচ্ছে কেমন হচ্ছে। এ ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়। বাংলায় আর কেউ জিততে পারবে না, বললেন দিলীপ ঘোষ। আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে চিনের মতো পরিস্থিতি হবে। একজনই প্রার্থী থাকবেন, তাঁকেই সবাই ভোট দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy