Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাজ-এর সতর্কতা এ বার ফোনে?

গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু বাড়াই নয়। বজ্রপাতের নিরিখে কলকাতার অবস্থান ক্রমেই হয়ে উঠছে বিপজ্জনক।

ঝলসানো: শহরে এমন বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। যা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। ফাইল চিত্র।

ঝলসানো: শহরে এমন বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। যা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

রবিবার দুপুরে শহরে বাজ পড়ার মিনিট পনেরো আগে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অ্যানেক্স-২ বিল্ডিংয়ের ছাদে বসানো একটি যন্ত্রে লাল আলো জ্বলে উঠেছিল। সতর্ক হয়েছিলেন গবেষকেরা। তাঁরা বুঝেছিলেন, দ্রুত শহরে ‘বিপজ্জনক’ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটতে চলেছে। কারণ, লাল আলো জ্বলা তেমনই ইঙ্গিত দেয়। তাঁদের সেই আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছিল। বাজ পড়ে মৃত্যু হয় এক তরুণ ক্রিকেটারের। ওই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই আবহবিজ্ঞানী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, শহরে কি বাজ পড়ার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে?

গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু বাড়াই নয়। বজ্রপাতের নিরিখে কলকাতার অবস্থান ক্রমেই হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বাজ পড়া সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য।অবশ্য শুধু কলকাতাই নয়। তথ্য বলছে, বজ্রপাত, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়-সহ যে প্রাকৃতিক কারণগুলির জন্য প্রতি বছর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, সেগুলির মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা সারা দেশেই ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে। এমনিতে মেঘের ঘনত্ব, উচ্চতা, গড়নের উপরে বাজ পড়া নির্ভর করে। খুব বড় মেঘ হলে বাজ পড়ার তীব্রতা আরও বেড়ে যায় বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। সেই বড় মেঘই শহরে বেশি তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। অনেকের মতে, এর পিছনে দূষণও একটি কারণ।

যদিও গত তিন বছরে শহরে মোট কতগুলি বাজ পড়েছে, সে সম্পর্কে কোনও তথ্যই নেই আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কাছে। কারণ, বজ্রপাত সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য যে ‘লাইটনিং ডিটেক্টর’-এর প্রয়োজন, সেই যন্ত্র তাদের কাছে নেই। এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য আবহাওয়া দফতর নির্ভর করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর রিপোর্টের উপরে। কারণ, বাজ পড়ে প্রাণহানির ঘটনার যাবতীয় হিসেব রাখে ওই দফতরই।

প্রসঙ্গত, গত এক বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স’ বিভাগ বজ্রপাতের উপরে গবেষণা শুরু করেছে। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের অ্যানেক্স-২ বিল্ডিংয়ের ছাদে বসানো তাদেরই লাইটনিং ডিটেক্টরে রবিবার লাল আলো জ্বলে উঠেছিল। গত এক বছরে সেই যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় ‘বিপজ্জনক বজ্রপাত’-এর প্রবণতা অনেকটাই বে়ড়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘সারা বিশ্বেই বজ্রপাতের ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কলকাতাতেও সেই সংখ্যা বেড়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, বিপজ্জনক বজ্রপাতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। সেই সংখ্যাটা মোট কত, সেটাই আমরা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছি।’’ শুধু তাই নয়, লাইটনিং ডিটেক্টরে ‘অ্যালার্ট মেসেজ’ সাধারণ মানুষের মোবাইলে পাঠানো যায় কি না, সে সম্পর্কেও চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘বজ্রপাতের পূর্বাভাস আগাম দেওয়া যায় না ঠিকই। কিন্তু লাইটনিং ডিটেক্টরের মাধ্যমে ১৫ মিনিট আগেও যে সতর্কবার্তা পাওয়া যায়, সেটাও যদি সাধারণ নাগরিকদের মোবাইলের সঙ্গে যোগ করা যায়, তা হলেও সকলে জানতে পারবেন, কোনও নির্দিষ্ট সময়ে একটি জায়গায় বজ্রপাত হতে পারে। সেই মতো তাঁরা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে পারবেন।’’

তবে আবহবিজ্ঞানীদের একাংশই জানাচ্ছেন, আবহাওয়া দফতরের কাছে লাইটনিং ডিটেক্টর না থাকা উদ্বেগের। কারণ, ওই যন্ত্র না থাকলে বাজ পড়ার ঘটনা সম্পর্কে সামগ্রিক ভাবে গবেষণা কখনওই সম্ভব নয়। এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘শহরে বাজ পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে আবহাওয়া দফতরের কাছে যে কোনও লাইটনিং ডিটেক্টর নেই, সেটা চিন্তার।’’

আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘আবহাওয়ার অন্য পূর্বাভাসের সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস আমরা দিয়ে থাকি। রবিবারও দিয়েছিলাম। তবে শুধুই বজ্রপাত সম্পর্কিত কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lightning Lightning Alert Mobile Update
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE