মনুয়া এবং তার প্রেমিক অজিতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বারাসতের অনুপম সিংহ হত্যা মামলায় সাজা ঘোষণা করল আদালত। মনুয়া এবং তাঁর প্রেমিক অজিতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক বৈষ্ণব সরকার। তার মধ্যে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে দু’জনেরই ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। জরিমানা না দিতে পারলে আরও এক বছরের জেল হবে তাদের।
বৃহস্পতিবার তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল বারাসতের চতুর্থ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। আজ, শুক্রবার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
এই সাজায় অবশ্য খুশি নন অনুপম সিংহের বাবা-মা। সাজা শোনার পর তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বৃহস্পতিবার তাঁরা বিচারকের কাছে ছেলের খুনিদের ফাঁসির সাজা দাবি করেছিলেন। তা না হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। অনুপম সিংহের মা জানিয়েছেন, তাঁরা সুবিচার পাননি।
আরও পড়ুন: ‘এ কী সাজা দিলেন বিচারক!’, ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে যাচ্ছেন অনুপমের বাবা-মা
আরও পড়ুন: ‘রক্ষাকবচ’ই হয়ে গেল খুনি প্রমাণের অস্ত্র
২০১৭ সালের ২ মে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার কর্মী অনুপমকে তাঁর বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয়।
পুরো থেঁতলে দেওয়া হয় তাঁকে। আততায়ী যাওয়ার আগে অনুপমের হাতে থাকা বিয়ের আংটি পর্যন্ত খুলে নেয়। সেখান থেকেই সন্দেহ হয় এই ঘটনায় বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক থাকতে পারে। তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে পুলিশ একাধিক মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, খুনের সময় স্ত্রী মনুয়া মোবাইলে স্বামীর শেষ আর্তনাদ নিজের কানে শুনেছেন। এর পর তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর মনুয়া এবং অজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এই খুনের ঘটনায় ৮৬ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ১২০বি ধারায় খুন ও ষড়যন্ত্রের মামলা শুরু হয়। মোট ২৭ জন সাক্ষী দেন এই মামলায়। ৪৬৯ পাতার চার্জশিট জমা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক চতুর্থ কোর্টে রায় ঘোষণার সময়ে বিচারক খুনের ঘটনার বিবরণ দেন।
আরও পড়ুন: প্রেমিকার স্বামীকে খুন করে ভেঙে পড়েছিলেন অজিত, নির্বিকার প্রেমিকা মনুয়া!
আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে পুলিশ জানায়, অজিতের সঙ্গে মনুয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এর জেরে অনুপমের সঙ্গে মনুয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। এর পরেই অনুপমকে খুনের চক্রান্ত করে দু’জন। খুনের দিন দুপুরে তারা অনুপমের বাড়িতে যায়। সন্ধ্যায় অনুপম ফেরার আগেই অজিতকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় মনুয়া। এর পরে দু’টি ফোন থেকে এক বার অনুপম, এক বার অজিতের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে থাকে মনুয়া। খুনের সময়ে ফোনে অনুপমের আর্তনাদও শোনে মনুয়া।
আরও পড়ুন: মনুয়া-অনুপমের এই ভিডিও দেখলে কে বলবে...
পরের দিন অনুপমের দেহ ছাড়াও বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার হয়। সেই সব প্রমাণের সঙ্গে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খুনের ১৫ দিন পরে অজিত ও মনুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র, পোশাক উদ্ধার করে পুলিশ। সে সবই আদালতে পেশ করে পুলিশ। অজিত যে খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিল, তা প্রমাণ করতে তার আঙুলের ছাপ ও ফরেন্সিক রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সাক্ষীদের বয়ান এবং প্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
মাধ্যমিক অনুত্তীর্ন এবং হাবড়া-অশোকনগর এলাকার বাসিন্দা অজিত ও মনুয়ার দীর্ঘ দিন ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হৃদয়পুর তালতলা এলাকার বাসিন্দা অনুপম সিংহ এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy