Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Kamduni Rape Case

‘মা ফোন করেছিলেন, সব শুনে ভয় পেয়ে গেলেন’

কামদুনি গ্রামের থাকেন কলেজ পড়ুয়া গায়ত্রী মণ্ডল। তাঁর বাড়ি থেকে দেখা যায় পরিত্যক্ত সেই কারখানা চত্বর, যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁরই বয়সী কলেজ ছাত্রীর দেহ।

কামদুনির পরিত্যক্ত সেই জমি। এখানেই গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল তরুণীকে।

কামদুনির পরিত্যক্ত সেই জমি। এখানেই গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল তরুণীকে। —নিজস্ব চিত্র।

ঋষি চক্রবর্তী
কামদুনি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৩
Share: Save:

বড় বড় ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা পরিত্যক্ত কারখানা চত্বর। তারই মাঝে গলা তুলে দোল খাচ্ছে কাশফুল। পাঁচিলঘেরা এই জমি থেকেই উদ্ধার হয়েছিল গ্রামের মেয়ের রক্তাক্ত, ধর্ষিত দেহ।

২০১৩ সালের ৭ জুনের পর থেকে কেটে গিয়েছে পাক্কা ১০টা বছর। কিন্তু এখনও ছন্দে ফিরল না জনজীবন। গ্রামের এক বাসিন্দা জানালেন, সন্ধের পরে অল্পবয়সি মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোনো কার্যত নিষেধ। কেউ সন্ধেবেলা কাজ সেরে, টিউশন সেরে গ্রামে ফিরলে মূল সড়কে নেমে ফোন করে দেন বাড়িতে। বাড়ি থেকে কেউ না কেউ এসে নিয়ে যান মেয়েকে। বাড়ি থেকে বড়রা বেরোলে অনেক সময়েই ঘরে তালা দিয়ে রেখে যান মেয়েকে। অনলাইন কেনাকাটা করলে ডেলিভারি দিতে যখন কেউ আসে, বাড়ির কাউকে সঙ্গে নিয়ে তবে মেয়েরা গিয়ে মালপত্র নেন।

কেন এখনও এই পরিস্থিতি কামদুনির গ্রামে?

কামদুনি গ্রামের থাকেন কলেজ পড়ুয়া গায়ত্রী মণ্ডল। তাঁর বাড়ি থেকে দেখা যায় পরিত্যক্ত সেই কারখানা চত্বর, যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁরই বয়সী কলেজ ছাত্রীর দেহ। দিনের বেলাতেও ওই চত্বরে লোকজন কম চলাচল করে। জমির উল্টো দিকে বিশাল মাছের ভেড়ি। গ্রামের লোকজন জানালেন, আগে রাস্তায় আলো ছিল না। এখন হয়েছে। তবে বেশ কিছু আলোর খুঁটি নষ্ট হওয়ায় সব আলো জ্বলে না। গায়ত্রী বলেন, "কলেজে যাওয়ার পর থেকে না ফেরা পর্যন্ত বাবা-মা চিন্তা করেন। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হয়। টিউশন পড়তে হয় সকালের দিকে। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। কিন্তু কী করব, পুরনো ঘটনাটার কথা কেউ ভোলেননি এখনও। আমরা তখন ছোট। কিন্তু বাড়ির বড়দের মনে কী যেন একটা ভয় বাসা বেঁধে আছে।" গ্রামের এক তরুণ ব্যবসায়ী বলেন, "বাড়ির মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বাইরে কাজে যাইনি। বাড়ির সামনে দোকান করেছি।"

গ্রামের অনেকেই জানালেন, আদালতের রায়ের পরে ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি বদলাবে। অপরাধীরা কঠোর শাস্তি পেলে হয় তো মনে সাহস ফিরবে। কিন্তু তেমনটা হল না বলে আক্ষেপ অনেকেরই। ভগবতী মণ্ডল নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘গ্রামের সকলে ওদের চরম সাজা চেয়েছিল। এই রায়ের পরে চিন্তা বাড়ল। মেয়েকে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ভয় কাটবে না। অল্প সময়ের জন্য বাইরে গেলেও মেয়েকে ঘরে তালা বন্ধ করে রেখে যাই। এখন তো দিনের বেলাতেও একা ছাড়তে ভয় লাগবে।" গত দশ বছরে কামদুনির বহু যুবকের বিয়ে হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে তরুণীরা এসেছেন গ্রামে। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘আদালতের রায় শোনার পরে ফোন করেছিলেন মা। চার জন ছাড়া পাচ্ছে শুনে ভয় পেয়েছেন।"

গ্রামের এক প্রবীণ মহিলার কথায়, ‘‘দোষীদের চরম শাস্তি চেয়ে এক সময়ে মিছিল করেছি, রাজনৈতিক নেতাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি। এত দিনের আন্দোলন সব যেন ব্যর্থ মনে হচ্ছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

kamduni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy