Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Leprosy

করোনায় নজর, ব্যাহত কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা প্রতিরোধ

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

আগ্রাসী কোভিড এমন ভাবে অগ্রাধিকার-তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে যে, অন্যান্য অসুখের চিকিৎসা প্রাপ্য মনোযোগ পাচ্ছে না বলে মাস ছয়েক ধরে অভিযোগ প্রবল হয়েছে। এই অবস্থায় কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা কী ভাবে পূরণ হবে, সেটা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট দুই বিভাগের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, প্রতি বছর ১,৪০,০০০ রোগী চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোয় যক্ষ্মা বিভাগ। কিন্তু এ বার অতিমারির আবহে এ-পর্যন্ত তার অর্ধেকের কিছু বেশি চিহ্নিত করা গিয়েছে। অন্য দিকে, নভেম্বরের শেষে দেখা যাচ্ছে, অঙ্গ বিকৃত হয়ে যাওয়া মাত্র ছ’জন কুষ্ঠরোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ২৬৩। ২০১৯-২০ সালে ছিল ১৭০।

কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা বিচার করে বিভিন্ন জেলায় প্রতি বছর শিবির গড়ে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়। যোগ দেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। কিন্তু করোনার দরুন এ বার শিবিরের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। জাতীয় কুষ্ঠ দূরীকরণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক-আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনার কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিল। আবার তা শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে।’’ তবে তাঁর মতে, অঙ্গবিকৃতির অস্ত্রোপচারের থেকেও নতুন কুষ্ঠরোগী খুঁজে বার করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বার প্রায় ৫০% কম কুষ্ঠরোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এ রাজ্যে অন্তত ১৯ হাজার কুষ্ঠরোগী অঙ্গবিকৃতির শিকার। তাঁদের পাঁচ শতাংশের অস্ত্রোপচার করতে হবে। নতুন রোগী চিহ্নিতকরণের জন্য কেন্দ্র একটি প্রকল্প শুরু করতে চলেছে।

‘‘কুষ্ঠরোগীদের অস্ত্রোপচার এ বার কম হলেও যে-হিসেব দেওয়া হচ্ছে, সেটি ঠিক কি না, তা না-জেনে বলা সম্ভব নয়। করোনা সামলে এখন আবার সেই কাজে গতি আনা হচ্ছে। যক্ষ্মা চিহ্নিতকরণের কাজ কমেছে সারা দেশেই। বাংলায় সেই প্রবণতা দেখা গেলেও তা খুব বেশি নয়,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।

করোনার চিকিৎসা অগ্রাধিকার পাওয়ায় যক্ষ্মারোগী চিহ্নিতকরণের কাজ যে ব্যাহত হয়েছে, তা স্বীকার করে মাস দুয়েক আগে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সেই ছবি বদলাতে একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই দফতরের এক আধিকারিক জানান, বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর হার হল ১.৭৪%। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মায় প্রতি বছর গড় মৃত্যুর হার ৫%।

এই পরিস্থিতিতে করোনার ধাঁচেই যক্ষ্মার মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যের ৪৬৪টি ব্লকে ‘টিবি চ্যাম্পিয়ন’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গোড়ায় অসুখ ধরা পড়লে রোগমুক্তি যে সম্ভব, এই কর্মসূচিতে সেই বিষয়ে প্রচার করবেন যক্ষ্মা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাই। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে যুক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, যক্ষ্মার সম্ভাবনা দেখা দিলেই গ্রামের রোগীরা প্রাথমিক ভাবে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে যান। সেই সব চিকিৎসকের প্রথাগত শিক্ষা না-থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা সুফল পান না। তাই গ্রামীণ চিকিৎসকেরা যাতে সম্ভাব্য যক্ষ্মারোগীদের স্বাস্থ্য দফতরের নজরে আনতে উৎসাহী হন, সেই জন্য রোগী-পিছু ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যক্ষ্মা পজ়িটিভ হলে গ্রামীণ চিকিৎসক ওই টাকা পাবেন। প্রাথমিক ভাবে কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, রামপুরহাট, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে এই কর্মসূচি চালু হয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণে যক্ষ্মারোগীদের বিনামূল্যে মাস্ক, থুতুদানি দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের যক্ষ্মা রোধে আঞ্চলিক উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে।

অন্য বিষয়গুলি:

Leprosy Tuberculosis Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy