আনিস কান্ডে ‘ইনসাফ’ চেয়ে আইএসএফের মিছিল কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র।
ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনায় ‘ইনসাফ ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি’র দাবি ফের উঠল রাজপথে। মিছিল এবং সমাবেশ করে বামেরা আনিস-কাণ্ডে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলবন্দি যুব ও ছাত্র নেতৃত্বের মুক্তির দাবিও তুলল। আবার একই দিনে শহরে মিছিল করে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) জানাল, আনিস-কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বাম এবং আইএসএফের তিন মিছিল ও সমাবেশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
হাওড়ার আমতায় আনিসের মৃত্যুর পর থেকেই বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে চলেছে। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপারের দফতরে বিক্ষোভের কর্মসূচি ধুন্ধুমারের পরে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। খুনের চেষ্টা-সহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে, পুলিশ হেফাজতে তাঁদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগও আদালতে জানানো হয়েছে। সেই সূত্রেই এই ঘটনা নিয়ে এখন সর্বভারতীয় স্তরেও সরব হয়েছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বাহিনীকে বিরুদ্ধ স্বর দমন করতে কেমন বেপরোয়া ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনকারী আনিস খানের নৃশংস হত্যাই তা দেখিয়ে দিচ্ছে। যারা বিচার চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার লজ্জাজনক ভাবে বিজেপির কৌশল প্রয়োগ করছে!’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সময় নিজের দলের সরকারকে এ কথা বোঝাতে পারলে সীতারাম ইয়েচুরিরা এ ভাবে প্রত্যাখ্যাত হতেন না। বাংলায় সিপিএমের মুখে গণতন্ত্র, শান্তি, মানবিকতা, দমনপীড়নের মতো শব্দ মানুষ বিশ্বাস করবেন না। কারণ, এখনও হিংসাকে আশ্রয় করেই নতুন প্রজন্মকে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ওঁরা!’’
কলেজ স্ট্রিটের ছাত্র ও যুব সমাবেশে এ দিন রাজ্য সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারির সুরই শোনা গিয়েছে ময়ূখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক-উর রহমানদের গলায়। এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের সঙ্গে ছাত্র পরিষদ, আইসা-ও যোগ দিয়েছিল সমাবেশে। তার আগে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দু’টি বড় মিছিল এসে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে মিলিত হয়। সমাবেশের ভিড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তা। সমাবেশ চত্বরে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশের উদ্দেশে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উরের মন্তব্য, ‘‘ডিটারজেন্ট পাউডার আমরা কিনে দেব। সেটা গুলে জলকামান দিয়ে তাদের গায়ে স্প্রে করে দেবেন, যাদের জামায় ছাত্র মৃত্যুর রক্ত লেগে আছে!’’ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের হুঁশিয়ারি, ‘‘এই সরকারের এগোনো শুরু হয়েছিল আমাদের সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু দিয়ে। সরকারের শেষের শুরু হল আনিস খানের মৃত্যুতে!’’
শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই এ দিন ‘তোমার নাম, আমার নাম আনিস খান’ স্লোগান দিতে দিতে ধর্মতলায় আসেন আইএসএফের কর্মী-সমর্থকেরা। সামনে ছিলেন আইএসএফের চেয়ারম্যান ও বিধায়ক নওসাদউদ্দিন সিদ্দিকী-সহ দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলেন। মিছিল শেষে নওসাদ বলেন, ‘‘আনিস খানের হত্যাকারীদের যতক্ষণ না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’’ বিধায়কের প্রশ্ন, ‘‘আনিসের বাবা বলেছিলেন, রাতে বাড়িতে চার জন এসেছিলেন। কিন্তু দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জন কোথায় গেল? আনিসের বাবা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, সিবিআই তদন্ত চান। সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
আনিসের মৃত্যুর ‘সুবিচার’ ও জেলবন্দি প্রতিবাদীদের মুক্তির দাবিতে এ দিনই কলতাতা হাই কোর্ট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন আইনজীবীরা। ‘লয়ার্স ফর ডেমোক্র্যাসি’র ব্যানারে ওই মিছিলে ছিলেন সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য, রবিলাল মৈত্র, অরিন্দম ভট্টাচার্য, দিবাকর ভট্টাচার্য, সামিম আহমেদ, মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy