অরবিন্দ ঘোষ
বিরোধী পুরবোর্ড বা জেলা পরিষদ দখলের বাজারে মরূদ্যানের মতো বেঁচে রয়েছে শিলিগুড়ির বাম পুরবোর্ড। সম্প্রতি পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব হুমকি দিয়েছেন, পুজোর শেষের সঙ্গে ওই বোর্ডেরও বিসর্জন হয়ে যাবে। কিন্তু নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষের মৃত্যুর ফলে পুজোর আগেই সেই বিসর্জনের আশঙ্কা করছে শিলিগুড়ির বাম শিবিরের একাংশ।
নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ওরফে অমুবাবুর সমর্থন নিয়ে ২০১৫ সালের মে মাসে পুরবোর্ড গড়ে বামেরা। ৪৭ আসনের পুরসভায় বামেরা জিতেছিল ২৩টি আসন। তাঁদের সঙ্গে অরবিন্দবাবুকে নিয়ে বামেদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪। কিন্তু সম্প্রতি ফরওয়ার্ড ব্লকের এক কাউন্সিলর তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে বাম পুরবোর্ড। তৃণমূলের ১৮, কংগ্রেসের ৪ এবং বিজেপি-র ২ কাউন্সিলর মিলিয়ে বিরোধীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪। অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর পর বামেদের সংখ্যা আরও কমে ২২ হয়ে যাওয়ায় তাদের অস্তিত্বের সঙ্কট আরও বাড়ল। বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বামেরা এখন কংগ্রেসের মুখাপেক্ষী।
অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর দিনই অবশ্য পুরবোর্ড দখলের বিষয় নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েনি কোনও পক্ষই। কিন্তু বামেদের উপরে যে তৃণমূল চাপ বাড়াবে, তা তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল বলেন, ‘‘কাদের সমর্থনে পুরবোর্ড চলবে, মেয়র অশোক ভট্টাচার্য সেটা স্পষ্ট করুন।’’ অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমরা ২২ জন। কংগ্রেসের ৪ জনকে ধরে ২৬ জন রয়েছি। তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারও বলেন, ‘‘আমরা তো বামেদের সমর্থন করছি। তাদের সঙ্গে রয়েছি।’’ বিজেপি-র কাউন্সিলররা কিছু বলতে চাননি।
মেয়রের দাবি, আস্থা ভোটের কোনও ব্যাপার নেই। কেউ অনাস্থা আনলে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। তা ছাড়া যে কাউন্সিলর দলত্যাগ করে তৃণমূলে গিয়েছেন, পুর আইন মেনে তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের জন্য আবেদন করা হয়েছে। মামলাও হবে।
বস্তুত, বোর্ড বাঁচাতে প্রশাসন সাহায্য করবে না জেনেও পুরমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া থেকে শুরু করে রাজ্যপালের কাছে দরবার— সব দরজাতেই কড়া নাড়তে চাইছে সিপিএম। পাশাপাশি, দল ভাঙানোর সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে রাস্তায় নামবেন তাঁরা। সিপিএমের একাংশের যুক্তি, সিঙ্গুরের আন্দোলনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি কলকাতায় নিয়ে আসতে পেরে থাকেন, তা হলে তাঁরাই বা শিলিগুড়ির লড়াইকে রাজধানী শহরে টেনে আনবেন না কেন?
অশোকবাবুর বক্তব্য, অরবিন্দবাবুর মৃত্যুতে তাঁরা বোর্ড হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন না। তাঁরা বরং অন্য কারণে চিন্তিত। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘কেউ কেউ অপেক্ষা করে আছেন, অরবিন্দবাবু প্রয়াত হওয়ায় কী হবে তার জন্য। কিন্তু পুরবোর্ডের জন্য নয়, অরবিন্দবাবুর মৃত্যুতে শিলিগুড়ির মানুষের বড় ক্ষতি হল। তিনি মূল্যবোধের রাজনীতি মানতেন।’’ সম্প্রতি ফব কাউন্সিলর তৃণমূলে যাওয়ার পরেই বোর্ড সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছিল বিরোধী তৃণমূল। মেয়র সে সময় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে তৃণমূল অনাস্থা আনুক। দলের সব কাউন্সিলর তাদের দিকে রয়েছে কি না, তখনই তারা বুঝতে পারবে।
বামেদের সম্পর্কে অরবিন্দবাবুর অসন্তোষ জন্মেছিল, তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এমন দাবিও করতে শুরু করেছে তৃণমূল। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে অরবিন্দবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। বর্তমান পুরবোর্ডের কাজকর্ম ভাল হচ্ছে না বলেও তিনি অনেক কথা জানিয়েছিলেন। তবে ওঁর শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে আমরা তা নিয়ে কোনও রাজনীতি করতে চাইনি। এখনও করছি না।’’ নান্টুবাবুর দাবি, মাসখানেক আগে অরবিন্দবাবুর সঙ্গে পুরবোর্ডের কাজ নিয়ে তাঁদের কথা হয়। তবে তাঁরা তা নিয়ে রাজনীতি করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy