নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে সিউড়িতে বামেদের অবস্থান। — নিজস্ব চিত্র
বিজেপির রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বা কংগ্রেস বিধায়ক শামিমা ইয়াসমিন ছাড় পেলেও আটকে গেলেন বাম বিধায়কদের প্রতিনিধি দল। সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারে বৃহস্পতিবার সাত্তোরের নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হল না প্রাক্তন বামমন্ত্রী আনিসুর রহমান, সুভাষ নস্করদের। ঘণ্টাখানেক তাঁরা বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কারামন্ত্রীকে ফোন করেও জেলে ঢোকার অনুমতি পেলেন না। ফেরার পথে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্যাডে চিঠি দিয়ে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি পেলাম না। শুধু জেলাপ্রশাসন নয়, খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও কারামন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের আটকানো হল। আমরা এ নিয়ে বিধানসভায় সরব হব।’’
এ দিকে, বুধবার পাড়ুই থানার পুলিশ কেস ডায়েরি জমা না দেওয়ায় নির্যাতিতাকে জামিন দেয়নি আদালত। ১৩ জুলাই কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। বৃহস্পতিবার সিজেএমের কাছে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে আবেদন করেন, কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার তারিখ এগিয়ে আনার জন্য। বিচারক তা মঞ্জুর করে আজ শুক্রবার পুলিশকে তা জমা করতে নির্দেশ দেন। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘যে যে ধারায় মামলা রুজু হয়েছে, সেক্ষেত্রে জামিনের আবেদন করতে হলে কেস ডায়েরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই আবেদন করেছিলাম। শুক্রবার জামিনের আবেদন জানাব।’’
বিজেপি কর্মী সাত্তোরের ওই নির্যাতিতার সঙ্গে সোমবারই জেলে গিয়ে দেখা করেন রূপা। বুধবার জেলে গেলে আটকে দেওয়া হয় তাঁর দলের লকেট চট্টোপাধ্যায় ও জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে দেখা করতে দেওয়া হয় মালদার মোথাবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শামিমা ইয়াসমিনকে। তা হলে এ দিন বাম বিধায়কদের কেন দেখা করতে দেওয়া হল না। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দিন জেল সুপারিনটেনডন্ট সরোজ ঘোষ ছিলেন না। ফোনে চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে সংশোধনাগারের একটি সূত্রের খবর, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সোমবার নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার পর বুধবার একটি কাগজে প্রকাশিত হয় তিনি সংশোধনাগারের নিয়ম মানেননি। যত্রতত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। জেল সুপার তাতে আপত্তিও জানাননি। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে বোলপুরে আসেন সোমবার রাতে। কাগজে এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই তা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে বলে জানা গিয়েছে। এবং তারপরেই জেল সুপারকে সমঝে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। তাই বুধবার তিনি বিধায়ক হিসেবে শামিমাকে জেলে ঢোকার ছাড়পত্র দেন। কিন্তু লকটে বা জয়কে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। বিধায়ককে অনুমতি দেওয়া নিয়েও জলঘোলা হওয়ায় বৃহস্পতিবার আর কোনও বিতর্কে জাড়াতে চাননি জেল কর্তৃপক্ষ। আটকে দেওয়া হয় বাম প্রতিনিধিদের।
বেলা একটা নাগাদ বৃষ্টি মাথায় সিউড়িতে জেলা সংশোধানাগারে আসেন সুভাষ নস্কর, অনিসুর রহমান, অপর্ণা সাহা, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, বিজয় বাগদি প্রমুখ বামনেতা-নেত্রী। আট বিধায়ক-সহ ১০ জন দলে ছিলেন ভিতর থেকে তাঁদের জানানো হয়, নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার অমুমতি নেই। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় জেলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। পরে কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সাফিকে ফোন করে বামনেতারা জানতে চান, ‘‘বিরোধী দলের বলেই কি তাঁদের এ ভাবে আটকানো হল? যখন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা বা বিধায়কদের নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে, তখন তাঁদের বেলায় অন্যথা কেন?’’ অনুমতি অবশ্য মেলেনি। তাঁরা জানান, দেখা করেই যাবেন। সে জন্য অবস্থান করবেন। ঘণ্টা দুয়েক তাঁরা অবস্থান করার পরেও জেল কর্তৃপক্ষ নরম না হওয়ায় বামদলটি জেল কর্তৃপক্ষকে বলেন, ‘‘আমরা না হয় অন্য জেলার, কিন্তু জেলার তিন বাম বিধায়ক বিজয় বাগদি, আশোক রায় ও দীপক চট্টোপাধ্যায়দের নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হোক।’’ কিন্তু সেই অনুমতিও পাওয়া যায়নি। এরপরেই তাঁরা ফিরে যান। পুরো ঘটনায় স্পষ্টতই বিরক্ত বাম নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত শনিবার সাত্তোরে তৃণমূল কার্যালয়ে বোমা রয়েছে বলে তা উদ্ধারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করছিল বিজেপি। পুলিশের দাবি, সেখানেই ছিলেন নির্যাতিতা, তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি-সহ অনেকে। সেই অবরোধ তুলতে গেলে নির্যাতিতা সহ সকলেই নাকি সরকারি কাজে বাধা দেয়, পুলিশ কর্মীদের হেনস্তা করে এবং বোমাও ছোড়ে বলে পুলিশের দাবি। সেই সব অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় ওই ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই কারণে রবিবার থেকে আদালতের নির্দেশে জেলে রয়েছেন নির্যাতিতা। সঙ্গে বছর চারেকের শিশুটিও। মাসখানেক আগে ওই বধূর ভাসুরপোকে ধরতে গিয়ে তাঁর উপরে পুলিশ ও তৃণমূলের কয়েকজন অমানুষিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ। সেই বধূকেই এখন পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ‘ঝাল মেটাল’ বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা।
কিন্তু মখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার জেলায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকে নির্যাতিতাকে গ্রেফতার করাকে কার্যত সমর্থন করার পর থেকেই চিত্রনাট্যে বদল এসেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, লকেট চট্টাপাধ্যায়রা। প্রায় একই অভিযোগ ছিল নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা না করতে পারা ‘সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামে’র সদস্যদেরও। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ক্ষুব্ধ বামপ্রতিনিধি দলের সদস্য আনিসুর রহমান ও সুভাষ নস্কাররা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘সাত্তোরে এক মহিলার উপর অমানুষিক নির্যাতন হয়েছে। ফের সেই মহিলাকে অন্যায় ভাবে জেলে ঢুকিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে তাঁর শিশুটিও রয়েছে। আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, জেলে তঁদের উপর আর কোনও অত্যাচার হয়েছে কি না। কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে বিরোধী দলের বিধায়ক বলে আমাদের আটকানো হল। সত্যি কথা যাতে প্রকাশ্যে না আসে সেই চেষ্টা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy