Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ভিড় হচ্ছে, তবু ‘ভরসা’য় ঘাটতি বুঝছে বাম-কংগ্রেস

মানুষের রুটি-রুজি ও দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমে তাঁরা আন্দোলন গড়ে তুলে তৃণমূলের বিপরীতে বিরোধী পরিসর ফিরে পাওয়ার লড়াই করতে পারবেন।

ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর জন্মের দুশো বর্ষ পূর্তির সূচনা অনুষ্ঠানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক সূর্য্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু প্রমুখ। মহাজাতি সদনে বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর জন্মের দুশো বর্ষ পূর্তির সূচনা অনুষ্ঠানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক সূর্য্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু প্রমুখ। মহাজাতি সদনে বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

রক্তক্ষরণের ধারা অব্যাহত! তবু তারই মধ্যে সামনে এগোনোর রাস্তা দেখছে বাম ও কংগ্রেস।

লোকসভা ভোটে আলাদা লড়ে বেনজির ভরাডুবি হয়েছিল। তখন ফায়দা পেয়েছিল বিজেপি। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা করে লড়েও বাম ও কংগ্রেসের ফলে বিশেষ ফারাক হল না। তফাত বলতে, ৬ মাসের ব্যবধানে এ বার যাবতীয় লাভ গিয়ে উঠেছে তৃণমূলের ঘরে। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সিপিএমের ভোট খানিকটা ঘরে ফিরেছে। আবার জোটের ভোট খানিকটা চলেও গিয়েছে শাসক তৃণমূলের দিকে।

পাটিগণিতের হিসেবে জোট গড়ে রাতারাতি সাফল্যের আশা বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের ছিল না। তবে অঙ্কের হিসেবের বাইরে গিয়ে তাঁরা মনে করছেন, এ রাজ্যে বিজেপিকে ঘিরে যে উচ্ছ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, তাতে ধাক্কা লাগায় আখেরে তাঁদের সুবিধাই হবে। মানুষের রুটি-রুজি ও দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমে তাঁরা আন্দোলন গড়ে তুলে তৃণমূলের বিপরীতে বিরোধী পরিসর ফিরে পাওয়ার লড়াই করতে পারবেন। আত্মসমালোচনার সুরেই সিপিএম বলছে, সভা-সমাবেশে ভিড়ই যথেষ্ট নয়। সাধারণ মানুষের ‘ভরসা’র জায়গা ফিরে পেতে আরও পরিশ্রম দরকার।

লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে খড়গপুর সদর কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেস জোটের ভোট প্রায় ৫% বেড়েছে। লোকসভায় দু’পক্ষের ভোট যোগ করলে ১০.১৬% ছিল, যা এ বার জোটের খাতায় হয়েছে ১৪.৯%। কিন্তু করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জে বাম-কংগ্রেসের ভোট লোকসভার তুলনায় কমে গিয়েছে, বেড়েছে তৃণমূলের। লোকসভায় করিমপুরে বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ছিল ১৯.১৬% এবং কালিয়াগঞ্জে ১৬.৭৪%। যা এ বার হয়েছে যথাক্রমে ৯.০৯% এবং ৮.৬৫%। উপনির্বাচনের এই ফল থেকে ‘হতাশ’ না হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতে জোর দেওয়ার বার্তাই দিয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। চিত্তরঞ্জন থেকে কলকাতা পর্যন্ত ‘লং মার্চ’-এর মাধ্যমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই যৌথ ভাবে পথে নামতে তৈরি দু’পক্ষ।

ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই ছিল ফ্রেডারিক এঙ্গেলস-এর জন্মের দু’শো বছর পূর্তির সূচনা। মহাজাতি সদনে সেই অনুষ্ঠানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসুরা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মানুষের কাছে আরও নিবিড় ভাবে পৌঁছনোর কথাই বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতা বা অন্য প্রতিবাদে বামেদের ডাকে মিছিল-সভায় মানুষ এসেছেন। কিন্তু ভোটটা তাঁদের দেওয়ার ‘ভরসা’ পাননি। সেলিমের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার যখন মুখে বলে তারা এনআরসি মানবে না, আমাদের বলার চেয়ে সেটাকে মানুষ বেশি বিশ্বাস করেছেন। নীরবে কেন সেই তৃণমূল সরকারই এ রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করছে, তা নিয়ে মানুষ ভাবেননি। আমাদের আরও আন্তরিক ভাবে মানুষের কাছে ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে হবে।’’

কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘জোট এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। শুধু ভোটের জোট নয়, সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও বলেছেন, ‘‘জোট হওয়ার পরে পর্যাপ্ত সময় উপনির্বাচনে ছিল না। এর পরে স্থায়ী ভাবে জোটের কর্মসূচি নিয়ে আমরা আরও বেশি করে রাস্তায় থাকব।’’ পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ডের বক্তব্য, অ-বিজেপি এবং অ-তৃণমূল ছোট শক্তিগুলিকেও এক জায়গায় আনা দরকার। এই প্রস্তাবে একমত সেলিম বা ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়েরাও।

অন্য বিষয়গুলি:

By Election CPM TMC BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy