রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বামেদের ধর্না-বিক্ষোভ নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের নামে কলকাতায় ‘প্রহসন’ হয়েছে, এই অভিযোগে সামনে রেখে আরও বিক্ষোভে নামল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। রাজ্য নির্বাচন কমিশন চত্বরে সোমবার আলাদা করে বিক্ষোভ-অবস্থান করল দু’পক্ষ। ভোটের গণনা স্থগিত রেখে বেশ কিছু ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচন করানোর বাম দাবি অবশ্য কমিশন মানেনি। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে আরও আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা করেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট দিয়েছেন। বাজারে ভেসে থাকার জন্য ওঁরা শস্তার রাজনীতি করছেন!’’
কলকাতা পুরসভায় ভোট ‘লুঠ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে গোটা রাজ্যেই দু’দিনের অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বামেরা। কমিশনের দফতরের সামনে এ দিন বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন পুরভোটের বেশ কিছু বাম প্রার্থী ও এজেন্টরা। পুলিশ অবশ্য ব্যারিকেড করে কমিশন চত্বরে বিক্ষোভকারীদের ঢুকতে দেয়নি। পরে ভিতরে গিয়ে সিপিএমের শমীক লাহিড়ী ও কল্লোল মজুমদার, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকেকর হাফিজ আলম সৈরানিরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের ঘরের বাইরে অবস্থানে বসেন। রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সই করা দাবিপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা, যেখানে দাবি করা হয়েছিল গণনা স্থগিত রেখে আগে পুনর্নির্বাচন করাতে হবে। শহরের ১৬টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ ও আরও ১১টিতে আংশিক পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছে বামেরা। কয়েক ঘণ্টা পরে কমিশনের তরফে তাঁদের জানানো হয়, এমআরও এবং পর্যবেক্ষকদের সব রিপোর্ট এখনও খতিয়ে দেখা শেষ হয়নি। গণনা বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে গণনা ঘিরে বিরোধী এজেন্ট ও কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস কমিশন দিয়েছে বলে বাম নেতাদের দাবি।
সিপিএম নেতা শমীকবাবুর মন্তব্য, ‘‘কমিশন অপদার্থ! আদালত তাদের উপরে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু কমিশন ব্যর্থ।’’ বিক্ষোভ-অবস্থানে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কল্লোলবাবু বলেন, ‘‘ভোটের দিন অন্তত ৩০০ অভিযোগ আমরা ই-মেল এবং হোয়াট্সঅ্যাপ মারফত কমিশন ও পুলিশ-কর্তাদের জানিয়েছি। কেউ কোনও পদক্ষেপ করেননি। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, নাটুকেপনা হচ্ছে! বেলেঘাটায় আমাদের প্রার্থীর এজেন্ট পূরবীদি’র (পূরবী দে বিশ্বাস) মুখ ফেটেছে, সেটাও নাটক?’’ সিপিএম নেতা রবীন দেব জানিয়েছেন, গণতন্ত্র-হত্যার বিরুদ্ধে আরও ‘আক্রমণাত্মক’ কর্মসূচি হবে।
কমিশনের সামনের রাস্তারই অন্য দিকে বিক্ষোভ চলে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে। বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে জমায়েত করে মিছিল নিয়ে আসেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ প্রসাদেরা। কমিশন দফতরের আগেই তাঁদের পুলিশ আটকে দিলে সেখানে চলে অবস্থান। প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘যে ভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, মানুষকে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। এটা এক দিনের মিছিলের ব্যাপার নয়। বৃহত্তর আন্দোলন চলবে।’’ পরে রাজভবনে গিয়ে পুরভোটে ‘প্রহসন’ নিয়ে অভিযোগ জানান প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদেরা।
এরই মধ্যে ভোটের পরে গোয়াবাগান এলাকায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী রবি সাহাকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ চলতি বিতর্কে নতুন উত্তাপ যোগ করেছে। শাসক দলের দিকেই আঙুল তুলেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্র নয়, চলছে বর্বর দিদিতন্ত্র! এক জন মানুষকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করে বেধড়ক পেটানো হল কলকাতার রাজপথে। কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছে, এটাই তার অপরাধ?’’ তৃণমূলের উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি তাপস রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কখনওই এ সব অনুমোদন করেন না। কেউ কোনও অন্যায় করে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। আমরা আইনের শাসনের পক্ষে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy