ভোটের ফল ঘোষণার পর উল্লাস। নিজস্ব চিত্র
হার-জিতের হিসেবে মোটের উপর বহাল রইল স্থিতাবস্থাই। তিন বছর আগে হওয়া শেষ ছাত্র ভোটে যে বিভাগের ছাত্র সংসদ যে সংগঠনের দখলে ছিল, এ বারও সেই সব সংগঠনই জিতল বা এগিয়ে রইল। কিন্তু তার মধ্যেই রয়ে গেল চমক। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চমক দিয়ে শক্তিবৃদ্ধি দেখাল সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। প্রথম বার লড়েই সেখানে এসএফআই-কে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল এবিভিপি। আর প্রায় সব বিভাগেই চার নম্বরে বা তারও নীচে নেমে গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
গোটা রাজ্যের অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যাদবপুরেও বছর তিনেক বন্ধ ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এ বছর ফের নির্বাচন হল। বুধবার ভোটগ্রহণ হয়। আজ বৃহস্পতিবার ভোট গণনা হল।
বিজ্ঞান বিভাগের গণনাই সবার আগে শেষ হয় এ দিন। বেলা ১টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় সেখানকার ফলাফল। ৩৯টি আসনের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) মধ্যে মাত্র ৮টিতে ভোট হয়েছিল বিজ্ঞান বিভাগে। কারণ অন্যগুলিতে ‘উই দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট’ (ডব্লুটিআই) প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন আগেই। যে ৮ আসনের জন্য ভোট হয়, সেগুলিতেও এ দিন দাপট দেখান ডব্লুটিআই প্রার্থীরাই।
আরও পড়ুন: আগরা যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, দুর্গন্ধ ঢাকতে যমুনায় ছাড়া হল ৫০০ কিউসেক জল
বিজ্ঞান বিভাগে কেন্দ্রীয় প্যানেলের ভোটেও ডব্লুটিআই প্রার্থীদেরই জয়জয়কার। সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনও দলের সঙ্গেই যোগ না রাখা ছাত্র সংগঠন ডব্লুটিআই-এর চেয়ে অনেক পিছনে তারা। বিজ্ঞান বিভাগে কেন্দ্রীয় প্যানেলে ডব্লুটিআই পেয়েছে ১ হাজার ১৩টি ভোট। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসএফআই পেয়েছে ২১৬। তৃতীয় স্থানে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও। তারা পেয়েছে ৩০টি ভোট। আর রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি পেয়েছে ৮টি ভোট।
বিজ্ঞান বিভাগে সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে ডব্লুটিআই পেয়েছে ১ হাজার ১টি ভোট। এসএফআই ২৩১, ডিএসও ৩০, টিএমসিপি ১০। সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ডব্লুটিআই পেয়েছে ৯০৬টি ভোট। এসএফআই ২০৬। সান্ধ্য বিভাগের সহ সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে ডব্লুটিআই পেয়েছে ১১২টি ভোট। এসএফআই ৩৬। বিজ্ঞান বিভাগে এবিভিপি কোনও প্রার্থী দেয়নি।
আরও পড়ুন: চাবি গ্রাহকের কাছে, গড়িয়াহাটে লকার থেকে উধাও ৩০০ গ্রাম সোনার গয়না!
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জয়ী হয়েছে ডিএসএফ। নকশালপন্থী এই ছাত্র সংগঠন বরাবরই শক্তিশালী ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। শেষ নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংসদের দখল ডিএসএফের হাতেই ছিল। এ বারও তারা দখল ধরে রাখল।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কেন্দ্রীয় প্যানেলে জয়ী ডিএসএফ প্রার্থী পেয়েছেন ৩ হাজার ৩০৪ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি। তারা পেয়েছে ৫০৮টি ভোট। তৃতীয় স্থানে এসএফআই, পেয়েছে ২৮৮টি ভোট। চতুর্থ টিএমসিপি। তারা পেয়েছে ৭৭টি ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ডিএসএফ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৩২০। দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি, ৫২৮। তৃতীয় স্থানে এসএফআই, ২৬৫। চতুর্থ হয়েছে টিএমসিপি, ৭৬।
তিনটি সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদেও ডিএসএফ প্রার্থীরাই জিতেছেন। দু’টিতে দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি। একটিতে দ্বিতীয় হয়েছে এসএফআই।
কিন্তু এই বিভাগে চমকে দিয়েছে সঙ্ঘ তথা বিজেপি ঘনিষ্ঠ এবিভিপি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্যানেলে এই প্রথম বার প্রার্থী দিয়েছিল এবিভিপি। প্রথম বারেই তাদের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এ বারের ভোটে এবিভিপি দু’নম্বরে উঠে এসে যে ভাবে এসএফআই-কে পিছনে ফেলে দিয়েছে, তাতে অনেকেই বিস্মিত। শুধু এসএফআই-কে নয়, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনকেও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবিভিপি পিছনে ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ৭০ লাখ নয়, এক লাখ লোক হবে মোদী-ট্রাম্পের রোড শোয়ে, মত প্রশাসনের
এ রাজ্যে বহু বছর ধরেই বামপন্থী এবং অতি-বামপন্থী রাজনীতির অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে চিহ্নিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-ও সেখানে কখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি। সিপিএমের সংগঠন এসএফআই, নকশালপন্থী ডিএসএফ এবং কোনও দলের সঙ্গে যোগ না রাখা কয়েকটি সংগঠন বরাবর যাদবপুর ক্যাম্পাস শাসন করে এসেছে। সিএএ এবং এনআরসি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই সব সংগঠন বিজেপির বিরুদ্ধেও সুর তুঙ্গে তুলেছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় হন বা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়— বার বার যাদবপুরে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পদাধিকারীকে। যে সংগঠন সিএএ বা এনআরসির সমর্থক, যাদবপুর সেই এবিভিপির কোনও স্থান নেই— এ কথাও বলতে শুরু করেছিল ক্যাম্পাস শাসন করা বামপন্থী সংগঠনগুলি।
এই রকম এক পরিস্থিতিতেই যাদবপুরের কেন্দ্রীয় প্যানেলে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবিভিপি। সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠনটি কোনও আসনে জিততে পারবে, এমন আশা এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদেরও ছিল না। কিন্তু এবিভিপি কতটা ভোট পায় যাদবপুরে, সে দিকে সব শিবিরেরই নজর ছিল। এসএফআই, টিএমসিপি-কে পিছনে ফেলে যে ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল এবিভিপি, তাতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই কিছুটা বিস্মিত।
আরও পড়ুন: পাক সন্ত্রাস ইস্যুতে ভারতের দলে এল চিন, ইমরানকে কড়া বার্তা দিচ্ছে এফএটিএফ
কলা বিভাগের দখল অবশ্য ধরে রাখছে এসএফআই। আর এক বামপন্থী সংগঠন ডিএসএ-র সঙ্গে সেখানে এসএফআই-এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ক্লাস ভিত্তিক লড়াই বা সেন্ট্রাল প্যানেল, সবেতেই কিছুটা করে এগিয়ে রয়েছে এসএফআই। তবে কলা বিভাগের ভোট গণনা মাঝ পথে থেমে গিয়েছে। এসএফআই এবং ডিএসএ-র সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার জেরে সেখানে বন্ধ করে দিতে হয়েছে গণনা।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা টিএমসিপির। যাদবপুরে টিএমসিপি আগেও লড়েছে, এ বারও লড়ছে। কিন্তু এ বার টিএমসিপির প্রাপ্ত ভোট যেখানে নেমেছে, রাজ্যের শাসক শিবিরের পক্ষে তা খুব একটা স্বস্তির খবর নয়। তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে এবিভিপির আচমকা শক্তিবৃদ্ধি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy