স্কুল তো চলছে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়াচ্ছেন। কিন্তু পড়ুয়ারা কতটা কী শিখছে? বর্তমান শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ঠিক কতটা উন্নতি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের?
এ বার সেই পুরো প্রক্রিয়ার উপরে নজর রাখবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদ জানিয়েছে, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব পড়ুয়ার পরীক্ষার এবং ‘লার্নিং আউটকাম’-এর রিপোর্ট পর্ষদের কাছে পাঠাতে হবে। তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পর্ষদ।
শিক্ষণ প্রক্রিয়া ঠিকঠাক আছে কি না, তার রিপোর্ট স্কুলেরই তৈরি করার কথা। এত দিন স্কুল পরিদর্শনের সময় পরিদর্শকেরা সেগুলি খতিয়ে দেখতেন। শিক্ষা সূত্রের খবর, অনেক স্কুলই সেই রিপোর্ট তৈরি করে রাখে না। ‘লার্নিং আউটকাম’ ঠিক আছে কি না, তার যথেষ্ট প্রামাণ্য নথিও রাখা হয় না। তাই পড়ুয়াদের যোগ্যতা যাচাইয়ে খামতি থেকে যায় বলে জানান বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শকেরা। স্কুলশিক্ষা সচিব সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্কুলে পরিদর্শন করেছন। তিনিও ওই সব রিপোর্ট দেখতে চান। এ বার বিষয়টি হাতে নিচ্ছে পর্ষদ।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এখন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি ‘ফরমেটিভ’ (প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন) এবং তিনটি ‘সামেটিভ’ (পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন) হয়। তিন মাস অন্তর সামেটিভ পরীক্ষার আগে নেওয়া হয় ফরমেটিভ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা মূলত মৌখিক। অর্থাৎ কোনও পড়ুয়া প্রশ্ন করতে পারছে কি না, কোনও বিষয়ে সে আদৌ নিজে থেকে যোগ দিচ্ছে কি না, তা যাচাই করা হয়। কনটিনিউয়াস কমপ্রিহেন্সিভ ইভ্যালুয়েশন (সিসিই) বা নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়ন করার পরে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ রয়েছে।
এখন স্কুলে পঠনপাঠন চালানো হয় মূলত ‘পিকক মডেল’-এ। পিকক মডেল আসলে পাঁচটি সূচক বা মাপকাঠি। মূল্যায়ন হয় তার ভিত্তিতেই। সেগুলি হল: ১) পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ, ২) প্রশ্ন করা ও জানা এবং শেখার জন্য আগ্রহ, ৩) ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের সামর্থ্য, ৪) সহানুভূতি ও সহযোগিতা এবং ৫) নান্দনিকতা ও সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ। তার পরে পুরো বিষয়ের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরির কথা। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সেই রিপোর্টেরই দেখা মেলে না।
পর্ষদের এক কর্তা জানান, অফিসে বসেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। কোনও ক্লাসে পড়ুয়ারা কী রকম শিখছে, তার রূপরেখা নির্ধারণ করে একটি বই তৈরি করেছে স্কুল স্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই বই অনুযায়ী বিচার করে দেখা হবে, এ রাজ্যে পড়ুয়াদের অগ্রগতি কতটা। তাঁর মতে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আগের থেকে অনেকটা এগিয়েছে। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করা হচ্ছে গোটা শিক্ষণ কৌশলকে। ফলে আশা করা যায়, ভাল রিপোর্টই পাওয়া যাবে।
এখনই রাজ্যে পাশ-ফেল চালু হচ্ছে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরামর্শের জন্য যে-কমিটি গঠিত হয়েছিল, তারা পাশ-ফেল চালু করার পক্ষেই মত দিয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই আপাতত সেই জটিলতায় না-গিয়ে লার্নিং
আউটকামের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেবে, কোন ছাত্র বা ছাত্রীর উপরে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার উপরে কী ভাবে নজর রাখবে পর্ষদ?
‘‘শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর উন্নতির জন্য এটা তো আমাদের করতেই হবে,’’ বলেন পর্ষদের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy