Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
State News

দিদিকে ‘বলে’ বিপদে, পুলিশের মার খেয়ে মমতারই শরণাপন্ন তরুণী

আগরপাড়ার আজাদ হিন্দ নগরের বাসিন্দা পিয়া মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত।

পিয়াকে গ্রেফতার করার সময়কার ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি। (বাঁ-দিকে) পিয়া দাস। —নিজস্ব চিত্র।

পিয়াকে গ্রেফতার করার সময়কার ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি। (বাঁ-দিকে) পিয়া দাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ১৯:২২
Share: Save:

পারিবারিক একটি সমস্যা নিয়ে ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেছিলেন। তার জেরে পুলিশের হাতে মারধর, এমনকি যিনি ফোন করেছিলেন সেই তরুণীর পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠল। দিদিকে বলো-তে ফোন করে চরম হেনস্থার মুখোমুখি হয়ে শেষে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে ওই পরিবার। গত শনিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পিয়া দাস নামে বছর বাইশের ওই তরুণী এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

আগরপাড়ার আজাদ হিন্দ নগরের বাসিন্দা পিয়া দাস মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো লিখিত অভিযোগে পিয়া জানিয়েছেন, তাঁর বাবা রঞ্জিৎ দাস আগরপাড়ার ঊষুমপুর বটটলা বাজারে ছোট একটি মাছের দোকান চালান। সেই ব্যবসার আয়েই সংসার এবং তাঁর চিকিৎসা চলে। দোকানটি পিয়ার দাদু (মায়ের বাবা)-র নামে নথিভুক্ত। কিন্তু, গত ২০ বছর ধরে পুরসভাকে কর দিয়ে ওই দোকান চালাচ্ছেন পিয়ার বাবা রঞ্জিৎ। পিয়া জানিয়েছেন, ওই দোকান নিয়ে রঞ্জিতের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যা চলছিল পিয়ার মামা রতন দাসের। ওই এলাকায় রতনের একটি সোনার দোকান আছে। পাশাপাশি তিনি নির্মাণ ব্যবসায়ীও।

পিয়ার অভিযোগ, আদালত রঞ্জিতকে দোকান চালানোর নির্দেশ দিলেও গায়ের জোরে গত পাঁচ মাস ধরে ওই দোকান বন্ধ করে রাখতে বাধ্য করেছেন রতন। ফলে, রোজগার বন্ধ রঞ্জিতের। সে ব্যাপারেই সুবিচার চাইতে ‘দিদিকে বলো’তে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ফোন করেছিলেন পিয়া। তাঁর অভিযোগ, ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেই বিপদ হয়। সোমবার তিনি ফোনে বলেন, ‘‘গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎই মামা রতন দাস আমার মা অঞ্জনা দাস এবং আমাকে দোকানের বিষয়ে আলোচনার জন্য মামাবাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানে গেলে ধমকানো শুরু হয় আমাকে— কেন আমি দিদিকে বলোতে ফোন করেছি? এর পরই আমার মা-কে গালিগালাজের পাশাপাশি মারার চেষ্টা করা হয়।”

আরও পড়ুন: জামিন হল না ‘গোলি মারো’ স্লোগান দিয়ে ধৃত বিজেপি কর্মীদের ২ জনের

পিয়ার অভিযোগ, এর পরেই রতন ঘোলা থানার ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজকে ফোন করলে ওই থানার সাব ইনস্পেক্টর সিদ্ধার্থ মিশ্র-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী হাজির হন। পিয়াকে দিদিকে বলো-তে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র দত্ত নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববন্ধু চট্টরাজের সঙ্গে রতন দাসের ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্ক রয়েছে। এলাকার সবাই তা জানেন।” অভিযোগ, পুলিশ এসেই পিয়া এবং তাঁর মা-কে টেনে হেঁচড়ে পুলিশের ভ্যানে তোলে। পিয়া এ দিন বলেন, ‘‘আমি নড়়াচড়া করতে পারি না। আমাকে প্রায় চ্যাংদোলা করে ভ্যানে তোলে পুলিশ। মাকেও তোলা হয়।” পিয়ার কথায়, ‘‘আমাদের ঘোলা থানায় না নিয়ে গিয়ে, প্রথমে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের একটি ফাঁকা জায়গায় থামিয়ে পুলিশের ভ্যানেই মারধর করা হয়। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারাকপুর মহিলা থানায়। সেখানে আমার অবস্থা দেখে পুলিশকর্মীরা হাজতে রাখতে রাজি হননি। আমাকে ফিরিয়ে আনা হয় ঘোলাতে।”

আরও পড়ুন: ভাষা ‘ভদ্র’ হলে ‘গোলি মারো’য় আপত্তি নেই দিলীপের

পরের দিন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান অঞ্জনা। জামিন নিতে হয় পিয়া এবং তাঁর বাবাকেও। পিয়া বলেন, ‘‘ওই দিন মামা আমাদের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে জোর করে ঢোকা, মারধর, ভাঙচুর এবং জোর করে টাকা আদায়ের মিথ্যা অভিযোগ করেন। আর মামার বন্ধু পুলিশ অফিসার সেই মিথ্যা মামলায় আমাদের গ্রেফতার করে মারধর করেন। কারণ, আমরা দিদিকে বলোতে ফোন করেছিলাম।”

গোটা ঘটনার পর ধৃতরাষ্ট্রবাবুর প্রশ্ন, ‘‘যে পরিবার রতন দাসের ভয়ে নিজেদের দোকান খুলতে পারল না, যে মেয়েটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না, তাঁরা রতন দাসের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাল, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করল— এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?”

আজাদ হিন্দ নগর পানিহাটি পুরসভা এলাকার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশিস দেবরায়। তাঁকে এ বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দোকানের বিষয়টি নিয়ে পিয়ার পরিবার আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ওটা বাজার কমিটির আওতাভুক্ত হওয়ায় আমি কিছু করতে পারিনি। তবে পুলিশের বিষয়টি আমি ঠিক জানি না।”

পিয়ার মামা, রতন দাসকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কোনও কিছু বলতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘থানার বড়বাবু আমাকে এই ব্যাপারে কথা বলতে বারণ করেছেন।’’ তার পরে তিনি দাবি করেন, পিয়ার পরিবার তাঁর বাড়িতে হামলা করেছিল।

ঘোলা থানার ওই আধিকারিক বিশ্ববন্ধু চট্টরাজকে ফোন করা হলে তিনি কোনও জবাব দিতে চাননি। শুধু বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো তদন্ত করছি।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, অভিযোগ থাকলেই কি প্রায় চলচ্ছক্তিহীন তরুণীকে ওই ভাবে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়? তারও জবাব দিতে চাননি বিশ্ববন্ধু।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয় খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Didi Ke Bolo Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy