বানিরুল ইসলাম
কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ডের পরে এ বার ছত্তীসগঢ়। ভিন্্রাজ্যে কাজে গিয়ে খুন হওয়া শ্রমিকের তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন বানিরুল ইসলাম (৪২)। তিনি জঙ্গিপুরের সম্মতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁপড়পাড়াপল্লির বাসিন্দা। পুলিশ ওই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্্রাজ্যে কাজে গিয়ে খুন হলেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার সাত জন শ্রমিক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছত্তীসগঢ়ের কঙ্কর জেলার কাপসিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন বানিরুল। সোমবার সকালে সেই বাড়ি থেকে মোটরবাইকে বেরিয়েছিলেন তিনি। ২০০ মিটার যাওয়ার পরেই তাঁকে বাঁশ দিয়ে মারতে শুরু করে এক যুবক। বাইক থেকে ছিটকে পড়েন বানিরুল। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বহু লোকের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসেনি বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরে দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। স্থানীয় কিছু লোকজন বানিরুলকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই একটি ঘরের মধ্যেই শুইয়ে রেখে খবর দেন বানিরুলের শ্যালক জামাল শেখকে। জামালও জঙ্গিপুর থেকেই ছত্তীসগঢ়ে কাজে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত জামালই গুরুতর জখম বানিরুলকে নিয়ে যান পাখানজোর ব্লক হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় রাইপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার রাত ৮টা নাগাদ সেখানেই বানিরুলের মৃত্যু হয়।
ছত্তীসগঢ়ের পুলিশ সোমবারেই ওই খুনের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম নেপাল দাস। বাঙালি হলেও তিনি ছত্তীসগঢ়েরই বাসিন্দা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে চলে এসে ছত্তীসগঢ়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। নেপাল চাউমিন ও অন্য খাবার বিক্রি করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
১৮ বছর ধরে ছত্তীসগঢ়ের কাপসি এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ ও শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদারি করতেন নিহত বানিরুল। এ বারেও ইদে মাসখানেক পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ফের ছত্তীসগঢ়ে ফিরে যান তিনি। বানিরুলের স্ত্রী মিনু বিবি বলেন, ‘‘কাপসিতেই অন্য পাড়ায় আমার ভাই জামাল থাকে। সে-ই খবর পেয়ে স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে ঘটনার পরেই স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে লোকটা হয়তো বেঁচে যেত! এক জনের কাছে বকেয়া বাবদ প্রায় প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পেত। সে টাকা আদায়ের জন্যও চেষ্টা করছিল দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়েছে বলে শুনিনি। তাই কী কারণে এমনটা ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।”
ছত্তীসগঢ়ের কঙ্কর জেলার এসডিপিও মহেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, “এই খুনের ঘটনায় নেপাল দাস নামে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।”
গ্রামেই ছোট্ট একতলা পাকা বাড়ি রয়েছে বানিরুলের। বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা ও দুই ছেলে। বানিরুলের বাবা জানান, ছত্তীসগড়ে এলাকার অনেকেই কাজ করেন। বানিরুলও প্রত্যেক বছর এখান থেকে রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকদের নিয়ে যেতেন। কিন্তু এ বারে তিনি একাই গিয়েছিলেন।
বানিরুলের এক আত্মীয় সুলতান শেখ বলছেন, “এ বার ইদের সময় নানা কথার ফাঁকেই বলেছিল, এক ব্যক্তি কাজ করিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আটকে রেখেছে। সে টাকার জন্য বার বার ওই ব্যক্তির কাছে তাগাদাও দিচ্ছিল সে। তা থেকেই এই খুনের ঘটনা বলে সন্দেহ আমাদের।”
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ছত্তীসগড়ে জঙ্গিপুরের এক শ্রমিক খুন হয়েছেন। পুলিশ ঘটনার উপর নজর রেখেছে। নিহত শ্রমিকের বাড়িতেও রাতে গিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ। এই ঘটনায় ছত্তীসগঢ়ে এক জন গ্রেফতারও হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy