Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘বললাম চল নামি, রাজি হল না কুন্তল’

শৃঙ্গ জয়ের পরে ফেরার পথে কুন্তল কাঁড়ারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বাংলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় যাওয়া পঞ্চম বাঙালি অভিযাত্রী শেখ সাহাবুদ্দিনের। ১৫ মে, বুধবার সকাল তখন ৮টা-সাড়ে ৮টা।

কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষে (বাঁ দিক থেকে) রুদ্রপ্রসাদ হালদার, রমেশ রায় এবং বিপ্লব বৈদ্য।

কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষে (বাঁ দিক থেকে) রুদ্রপ্রসাদ হালদার, রমেশ রায় এবং বিপ্লব বৈদ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

‘‘আমি যখন দেখি, কুন্তলের চোখে তখনও চশমা ছিল, মুখে অক্সিজেন মাস্ক ছিল। হাতের গ্লাভসটা খোলা। তবে ওর শেরপা সেখানে ছিল না।’’

শৃঙ্গ জয়ের পরে ফেরার পথে কুন্তল কাঁড়ারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বাংলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় যাওয়া পঞ্চম বাঙালি অভিযাত্রী শেখ সাহাবুদ্দিনের। ১৫ মে, বুধবার সকাল তখন ৮টা-সাড়ে ৮টা। বুঝিয়েসুজিয়ে ক্যাম্প ফোরে নামিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজি হননি হাওড়ার কুন্তল। নেপাল থেকে ফেরার পথে রবিবার সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘ওকে জল খাওয়ালাম। বারবার করে বোঝালাম, আমার সঙ্গে যেন নেমে আসে। কিন্তু ও রাজি হল না। কুন্তল বলছিল, ‘ওরা এক্ষুনি ফিরবে। ওদের সঙ্গেই নামব’।’’ বাকিরা যে শৃঙ্গের পথে গিয়েছে, ফিরতে সময় লাগবে— এ কথা বলেও কুন্তলকে ফেরাতে পারেননি ইছাপুরের সাহাবুদ্দিন।

গত বুধবার বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার পথে রুদ্রপ্রসাদ হালদার-বিপ্লব বৈদ্যদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন সাহাবুদ্দিন। সকাল ৫টা নাগাদ শৃঙ্গে পৌঁছেও যান। ফেরার পথে দেখা হয় বাংলার বাকি তিন অভিযাত্রী— বেঙ্গল পুলিশের কর্মী রুদ্রপ্রসাদ, মাদুরদহের বিপ্লব এবং দমদমের রমেশ রায়ের সঙ্গে। ওঁরা তখন শৃঙ্গের দিকে এগোচ্ছেন। তার পরে ‘রাস্তা’র পাশে বসে থাকতে দেখেন কুন্তলকে। সাহাবুদ্দিন বলছেন, ‘‘শুধু আমি নয়, পুণের একটি দলের সব অভিযাত্রীই কুন্তলকে তাঁদের সঙ্গে নেমে আসতে বলেছিলেন। ও রাজি হয়নি। তখন ও সুস্থ ছিল বলেই মনে হয়।’’ তবে সুস্থ মস্তিষ্কে এক পর্বতারোহী কেন আট হাজারি উচ্চতায় বসে থাকতে চাইবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

রবিবার কাঠমান্ডুতে এসে পৌঁছেছে বিপ্লব-কুন্তলের দেহ। এ দিন সকালে হেলিকপ্টারে ক্যাম্প টু থেকে দুই অভিযাত্রীর দেহ নিয়ে এসে কাঠমান্ডুর একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আজ, সোমবার বা কাল, মঙ্গলবার ময়না-তদন্ত হবে। তার পরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বাড়িতে। এ দিনই কাঠমান্ডুর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রমেশ-রুদ্রপ্রসাদ। আজ, সোমবার তাঁদের কলকাতায় ফেরার কথা।

মাকালু অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের জন্যও হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মাকালু শৃঙ্গে আরোহণের পরে ফেরার পথে আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায় তুষারঝড়ের মুখে পড়ে নিখোঁজ হন তিনি। তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশাও প্রায় শেষের মুখে। দিন দুয়েক আগে নেপালে পৌঁছনো রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা দেবদাস নন্দী এখন দীপঙ্করের উদ্ধারকাজের তত্ত্বাবধান করছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আবহাওয়া খারাপ থাকায় আজ (রবিবার) হেলিকপ্টার যেতে পারেনি। সোমবার আবহাওয়া ভাল থাকলে দীপঙ্করের খোঁজে ওই এলাকায় তল্লাশি চালাবে হেলিকপ্টার। আমিও সঙ্গে থাকতে পারি। দীপঙ্কর কোথায় রয়েছেন, হেলিকপ্টার সেটুকু দেখে নিলে বেস ক্যাম্প থেকে শেরপাদের দল উদ্ধার করতে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kangchenjunga Mountaineering Kuntal Karar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE