চেতলার সেই জমায়েত। ১৮ বছর আগে এখানেই গলায় শাল জড়িয়ে মমতা বলেছিলেন, “আমি কিন্তু ফাঁস লাগিয়ে মরে যাব।” —ফাইল চিত্র।
আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ তাঁকেই ফিরিয়ে দিলেন কুণাল ঘোষ। শুক্রবার কলকাতার বিচার ভবনে সিবিআই আদালতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ ও সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত কুণাল বলেন, “কেউ বলছে, আত্মহত্যা মহাপাপ। তা হলে গোপালনগর মোড়ে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়াটা কি অপরাধ নয়? আমাকে এখন কটাক্ষ শুনতে হবে?”
কারও নাম না করলেও কুণালের নিশানা যে তৃণমূল নেত্রী মমতাই, সেটা স্পষ্ট। আদালতে কুণাল এ দিন জানান, মানসিক ভাবে হতাশ হয়েই তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। তার পরেই টেনে আনেন গোপালনগর মোড়ের প্রসঙ্গ।
আঠারো বছর আগে, মমতা তখন কংগ্রেসের সাংসদ, যুব কংগ্রেস নেত্রী। দলের চার জনকে ১৯৯৬-এর বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করার তীব্র বিরোধিতা করছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সমাজবিরোধীদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপরে চাপ তৈরির জন্য নিজের প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছিলেন তিনি। অনুগামীদের প্রবল আপত্তির মুখে চেতলার গোপালনগর মোড়ে দাঁড়িয়ে মমতা আত্মহত্যার হুমকিও দেন। একটি শাল গলায় জড়িয়ে ফাঁস টানতে টানতে অনুগামীদের শাসাতে থাকেন, “আমি কিন্তু ফাঁস লাগিয়ে মরে যাব।” ১৯৯৬-এর ৬ এপ্রিলের ওই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে, সংবাদমাধ্যমে কম সমালোচনা ও কটাক্ষ শুনতে হয়নি মমতাকে। এ বার সেটা এল তাঁরই এক সময়ের প্রিয়পাত্রের কাছ থেকে। ঘটনা হল, কংগ্রেসে থাকার সময় যে সমাজবিরোধীদের টিকিট দেওয়া রুখতে আত্মহত্যার ওই হুমকি দিয়েছিলেন মমতা, তাঁদের এক জন এখন তৃণমূলেরই সাংসদ!
কুণাল আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর এ দিনই প্রথম তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। গত ১০ নভেম্বর আদালতে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। ১৩ তারিখ রাতে প্রেসিডেন্সি জেলে ১৫টি ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পর দিন বিধানসভায় এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আত্মহত্যা করা সামাজিক পাপ, আইনত অপরাধও।” বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর আরও কটাক্ষ, “যাঁরা গরিব মানুষের পয়সা নিয়েছেন, তাঁরা আজ মহাপুরুষ হয়েছেন।... উনি (কুণাল) বলেছেন যে, অনেক বেশি ট্যাবলেট খেয়েছেন। তবে এটা খুব ইন্টারেস্টিং যে, যিনি ওষুধ খেয়েছেন, তিনিই বলছেন খেয়েছেন।” তৃণমূল নেতাদের একাংশ কবুল করছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে মমতার ওই খোঁচারই জবাব দিয়েছেন কুণাল। এ নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধিতে আত্মহত্যা অপরাধ সেটাই বলা আছে।”
নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষই শুধু নয়, আদালতে কুণাল এ দিন দাবি করেন, জেল বা সংশোধনাগার এখন রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জায়গা হয়ে উঠেছে।” কুণালের কথায়, “জেল যদি রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসার মঞ্চ হয়ে ওঠে তা হলে মুশকিল।” কুণালের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে জেলে ফিরে তিনি দেখেন, যেখানে তাঁর নিজস্ব কিছু জিনিস থাকত সেখান থেকে লেখার বড় একটি খাতা উধাও। তার বদলে রাখা আছে কোনও এক মাওবাদীর ব্যবহার করা একটি খাতা। ওই খাতার দু’টি পাতা ছেঁড়া। এই বিবরণ দেওয়ার পর সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের উদ্দেশে কুণাল বলেন, “স্যার, এ বার তো যে কোনও দিন আমার সেলে মাদক বা অস্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হবে! যে জিনিস আমার নয়, সেই জিনিস আমার সেলে কী করে এল?” কুণাল জানান, মাওবাদীদের দর্শন আলাদা হলেও জেলবন্দি কয়েক জন মাওবাদীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছে।
কুণালের আরও অভিযোগ, জেলে কার্যত খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়েছে তাঁকে। কোনও সহবন্দির সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সে কারণে মানসিক ভাবে আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিচারকের কাছে কুণালের আবেদন, “স্যার, আপনি আপনার কোনও প্রতিনিধিকে জেলে পাঠিয়ে আমার পরিস্থিতি দেখার ব্যবস্থা করুন।” এই সব অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে এডিজি (কারা) অধীর শর্মা বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
কারা দফতরের বিরুদ্ধে কুণাল এ দিন আরও একটি অভিযোগ জানান বিচারকের কাছে। কুণাল বলেন, “এই কথা আমি এর আগে কোনও দিন আপনাকে বলিনি। চলতি বছরের ১ অগস্ট সন্ধে পৌনে সাতটায় কারা দফতরের অফিসার বিচিত্রা ভট্টাচার্য প্রেসিডেন্সি জেলের ২০ নম্বর সেলে আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানান, একটি বিষয়ের তদন্ত করতে এসেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি করি, কোন বিষয়ের তদন্ত? বিচিত্রা ভট্টাচার্য আমার কাছে জানতে চান, কারা দফতরকে আগাম নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও আমি কেন চলতি বছরের ২০ জুন আত্মহত্যা করিনি?”
কারা দফতরের এআইজি বিচিত্রা ভট্টাচার্য অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা রুটিন ভিজিট করি। সে রকমই গিয়েছিলাম। তবে ওঁর (কুণাল) সঙ্গে এ রকম কোনও কথাই হয়নি।”
সিবিআই এ দিন আদালতে সারদা ট্যুর্স অ্যান্ড ট্র্যাভেল্স সংক্রান্ত মামলার চার্জ গঠনের আবেদন জানায়। ওই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে কুণাল ছাড়াও রয়েছেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ও সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়। তিন অভিযুক্তের আইনজীবীরাই বিচারক অরবিন্দ মিশ্রকে জানান, সিবিআই-ই বলছে তদন্ত শেষ হয়নি, তবে চার্জ গঠনের আবেদন জানানো হচ্ছে কী করে? বিচারক এ দিন সুদীপ্ত, দেবযানী ও কুণালকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy