প্রায় তিন বছর জেলে কাটিয়ে কি কানের অসুখ বাধালেন কুণাল ঘোষ! তাঁর নিজের দাবি অন্তত সে রকমই। আর সেই দাবি ঘিরেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনীতির অলিন্দে।
শনিবারের বারবেলায় সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন সদ্য জামিন পাওয়া তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ। পৌনে এক ঘণ্টা হাজিরা দিয়ে বেরোতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। কুণালের কাছে তাঁরা জানতে চান, জেলে বন্দি থাকাকালীন তিনি একাধিক বার বলেছেন, সারদা-কাণ্ডে জড়িত প্রভাবশালীদের নাম ফাঁস করে দেবেন। তার কী হল? তিনি কি রণে ভঙ্গ দিলেন? সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করার আগে পর্যন্ত দৃশ্যত স্বচ্ছন্দ ছিলেন কুণাল। কিন্তু বেমক্কা এমন প্রশ্ন শুনেই তিনি কানে হাত দেন। তার পর বলেন, ‘‘শুনতে পাচ্ছি না। অনেক দিন জেলে ছিলাম তো, তাই কানে শুনতে পাচ্ছি না।’’
কুণালের কানে কোনও সমস্যা রয়েছে বলে কিন্তু জানা নেই জেল কর্তাদের। প্রেসিডেন্সি জেলের এক জেল আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলে থাকতে অনেক শারীরিক সমস্যার কথা উনি বলেছেন। সে সবের চিকিৎসাও হয়েছে। কিন্তু কখনও কান নিয়ে কোনও সমস্যার কথা তো ওঁর মুখে শুনিনি!’’ প্রাক্তন এক পুলিশ কর্তাও বলছেন জেলে থাকার কারণে শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার নমুনা সচরাচর পাওয়া যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘জেল বন্দিদের নিজেদের মধ্যে মারামারিতে কেউ আহত না হলে এ রকমটা তো হওয়ার কথা নয়।’’
সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে। এবং কুণালকে বিদ্ধ করছেন বিরোধীরা। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কটাক্ষ, ‘‘আসলে কুণাল বুঝে গিয়েছেন, আপসে মিলায়ে বস্তু, বিদ্রোহে বহু দূর! সে কারণেই এখন কানে শোনেন না!’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘শুধু কুণাল কেন, মোদী-দিদি আঁতাঁতের ঠেলায় সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে সিবিআই পর্যন্ত চুপ করে গেছে! না হলে এত ঢক্কানিনাদ করে তদন্তে নেমেও এ ভাবে থমকে যেতে পারে?’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে জামিনে ছাড়ানোর জন্য শাসক দলের তরফে যখন কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছিল না, তখন বিদ্রোহের পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন কুণাল। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, সে সময় কুণাল ভেবেছিলেন, সব ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিলে শাসক দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ভয় পেয়ে তাঁকে জামিনে ছাড়ানোর জন্য সক্রিয় হবেন। কিন্তু দলের ভাবগতিক দেখে বুঝে যান, সেটা হওয়ার নয়। ওই নেতার কথায়, ‘‘কুণাল তখনই বুঝে যান যে, তাঁকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। তাই হতাশার চোটে এক সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছিলেন। এই হুমকিও দিয়েছিলেন যে, সারদা-কাণ্ডে জড়িত তৃণমূলের সব প্রভাবশালীর নাম ফাঁস করে দেবেন। কিন্তু তাতেও দলের কোনও হেলদোল হয়নি। উল্টে ওঁকেই দল সাসপেন্ড করে দেয়!’’
যে দলের তিনি সাংসদ, সেই দলেরই এমন মনোভাব টের পেয়ে এক সময় শান্ত হতে শুরু করেন কুণাল। আগে জেল থেকে তাঁকে আদালতে হাজির করার সময় নিত্য নাটক হতো! কুণাল সে সময় জেলের গাড়ি থেকে নামা বা ওঠার সময় চিৎকার করে সাংবাদিকদের বলার চেষ্টা করতেন যে, জেলে তাঁর ওপর অত্যাচার হচ্ছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও দিতেন। তাঁর কথা সাংবাদিকেরা যাতে শুনতে না পান, সে জন্য পুলিশ তুমুল চিৎকার করার পাশাপাশি ভ্যানের দরজায় চড়চাপড় মেরে বিকট শব্দ করত! গত মাস দশেক ধরে কুণালের সেই সব নাটক থেমে গিয়েছে। এখন অনেক বদলে গিয়েছেন কুণাল। অনেকে বলছেন, চুপ করে থেকে আসলে দলকে বার্তা পাঠাচ্ছেন কুণাল। তৃণমূলে ফেরার। সে কারণেই এখন অনেক কথা কানে ঢুকবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy