মহকুমা শাসক বাজেয়াপ্ত করছেন প্লাস্টিক ব্যাগ। নিজস্ব চিত্র
সকালের বাজার জমে উঠেছে। মাছ থেকে শুরু করে আনাজ বাজারে ক্রেতার ভিড়। সেই ভিড়ের ভিতরে মিশে থেকে এক জন চারদিকে নজর রাখছিলেন। মাছের বাজার, আনাজের পসরার সামনে দাঁড়িয়ে নাইলনের থলি এগিয়ে দিয়ে দরদাম করছেন আর পাঁচ জন খরিদ্দারের মতোই। কিন্তু তাঁর চোখ ঘুরছে।
প্রথম ঘটনাটা ঘটল মাছের বাজারে। উপরে কাপড়ের ব্যাগ রাখা। কিন্তু নীচ থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বের করে মাছ ভরে খরিদ্দারের হাতে তুলে দিতেই ভিড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন মানুষটা। চেপে ধরলেন দোকানিকে।
প্রশ্ন করলেন— কেন ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন?
প্রথমে কেউ বুঝতে পারেননি যে আসলে মানুষটি কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক সৌমেন দত্ত। তত ক্ষণে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আরও এক জন ‘সাধারণ’ ক্রেতা। মহকুমাশাসকের নিরাপত্তারক্ষী। দোকানিকে জরিমানা করা হল পাঁচশো টাকা। খরিদ্দারের কাছে টাকা নেই। তাই এ বারের মতো তাঁকে ছাড় দেওয়া হল।
সেখানে দাঁড়িয়েই সৌমেনবাবু জানিয়ে দিলেন, “এত দিন প্রচার করা হয়েছে। সতেচন করা হয়েছে। কিন্তু আর সময় দেওয়া হবে না। এ বার থেকে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রথমে টানা প্রচার চলেছে। তার পর বাজারে বাজারে, দোকানে দোকানে গিয়ে অভিযান চালিয়েছে পুরসভার ছ’টি দল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিক ও থার্মোকলের থালা, বাটি। কিন্তু জরিমানা করা হয়নি। সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কৃষ্ণনাগরিকদের। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে মহকুমাশাসক নিজে রাস্তায় নামলেন। প্লাস্টিক ব্যবহারে জরিমানা করলেন।
এ দিন সকালে তিনি নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে নিজেই হাজির হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের অন্যতম বড় বাজার বেলেডাঙা বাজারে। খরিদ্দার সেজে চারদিকে নজর রাখছিলেন। গোটা বাজার ঘুরে ঘুরে দরদাম করছিলেন প্রথমে। উদ্দেশ্য ছিল— কোনও দোকানি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছে কিনা, সেটা দেখা। তখনই ঘটে যায় প্লাস্টিকে জিনিস দেওয়ার ঘটনাটি। মাছের দোকানির পাশাপাশি এ দিন এক ফলের দোকানিকেও হাতেনাতে ধরে ফেলেন মহকুমাশাসক। তাঁকেও পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি চলে আসেন জোরাকুঠির বাজারে। সেখানেও এক মাছ ব্যবসায়ীকে ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে দেখে পাঁচশো টাকা জরিমানা করেন সৌমেনবাবু।
জগদ্ধাত্রী পুজোর পর থেকেই শহরের বাজারে বাজারে প্রশাসনিক অভিযানে ভাটা পড়তে শুরু করেছিল। প্রথম দিকে যতটা উৎসাহ নিয়ে প্লাস্টিক বন্ধ অভিযান শুরু চলছিল, পরে তা স্তিমিত হওয়ার ফলে একটু একটু করে ক্যারিব্যাগ ফিরে আসে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বাজারে। আমিনবাজরের দুই মুরগির মাংসের দোকানিকে ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে দেখে প্রতিবাদও করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। একই পরিস্থিতি শুরু হয় পাত্রবাজার থেকে শুরু করে গোয়াড়িবাজার, শক্তিনগর, ঘূর্ণীর বাজারেও। গোটা বিষয়টি কানে আসে মহকুমাশাসকের। তিনি তাই এ দিন কাউকে কিছু না জানিয়ে আচমকা হানা দেন বাজারে।
সৌমেনবাবু বলছেন, “কেউ যদি মনে করেন অভিযান থেমে গিয়েছে, আমরা ভুলে গিয়েছি, তা হলে কিন্তু ভুল করছেন। কৃষ্ণনগরকে প্লাস্টিকমুক্ত করে ছাড়ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy