—প্রতীকী ছবি।
শরীরে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মেছিল হতদরিদ্র পরিবারের কিশোরী। নারীত্বের পরিচয়বাহক সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গই তার ছিল, কিন্তু ছিল না যৌনাঙ্গ। জরায়ুর নীচের কিছুটা অংশও তার ঠিকমতো তৈরি হয়নি। আর অনুপস্থিত ছিল ‘ইউটেরো-ভ্যাজাইনাল ক্যানেল।’ ফলে কিশোরীর পক্ষে ভবিষ্যতে কোনওদিন স্বাভাবিক জীবনযাপন বা সংসার করা সম্ভব নয় বলে এক রকম হাল ছেড়ে বসেছিলেন আত্মীয়েরা। দফায়-দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কৃত্রিম যোনি তৈরি করে সেই কিশোরীকে নতুন জীবন উপহার দিলেন কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
সরকারি হাসপাতাল বিশেষ করে জেলার সরকারি হাসপাতাল থেকে সামান্য অস্ত্রোপচারের কেসও কলকাতায় ‘রেফার’ করাটা দস্তুর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ অনেক দিনের। সেখানে এত জটিল কেস জেলার চিকিৎসকেরা এত দিন ধরে দায়িত্ব নিয়ে সম্পন্ন করেছেন, একে দৃষ্টান্ত এবং বিশেষ কৃতিত্ব হিসাবে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। কৃষ্ণগঞ্জের বানপুর এলাকার বছর চোদ্দার এই কিশোরীর বাবা-মা থাকলেও সে ছোটবেলা থেকে রয়েছে মামাবাড়িতে। হাসপাতালে তার সঙ্গে সব সময় ছিলেন তার দিদিমা। বৃহস্পতিবার নাতনির শয্যার পাশে বসে কপালে হাত ঠেকিয়ে ধরা গলায় বৃদ্ধা বলেন, ‘‘সবাই ভয় দেখিয়েছিল, কয়েক লক্ষ টাকা লাগবে অপারেশনে। আমরা এত গরিব, টাকা পাব কোথায়? শেষে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের জন্য আমার নাতনি সুস্থ হল। কী করে ওঁদের ঋণ শোধ করব জানি না।’’
হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ভবতোষ ভৌমিকের নেতৃত্বে তৈরি মেডিক্যাল টিম এই অস্ত্রোপচার করেছে কয়েক দফায়। প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছে আড়াই মাস আগে, আর দ্বিতীয়টি গত বুধবার। ভবতোষবাবু বলেন, “যৌনাঙ্গ তৈরি তেমন কঠিন নয়। জটিল ছিল ‘ইউটেরো ভ্যাজাইনাল ক্যানেল’ ও জরায়ুর অংশবিশেষ তৈরি করা। একটু এ দিক ও দিক হলেই মূত্রনালি ও মূত্রাশয় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।” তাঁর কথায়, “অস্ত্রোপচার পুরোপুরি সফল। মেয়েটি এ বার স্বাভাবিক জীবন পাবে।” জেলা হাসপাতালে সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারও বলেন, “আমরা গর্বিত। আমরা চাই, হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসক এগিয়ে এসে এমন নজির তৈরি করুন।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাস চারেক আগে ওই কিশোরী চিকিৎসকদের কাছে আসে পেটে মারাত্মক যন্ত্রণা নিয়ে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, তার ঋতুস্রাব হচ্ছে, কিন্তু যৌনাঙ্গ না-থাকায় ঋতুকালীন রক্ত শরীরের বাইরে বেরোতে পারছে না। পেটের ভিতরেই জমা হচ্ছে। তাতেই পেটে প্রবল ব্যথা হচ্ছে। তখনই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো শুরু হয় প্রস্তুতি। চিকিৎসকেরা রীতিমতো পড়াশোনা শুরু করেন, ইন্টারনেটে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের খুঁটিনাটি দেখতে থাকেন।
আড়াই মাস আগে জেলা সদর হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে ঘণ্টা দু’য়েকের অস্ত্রোপচারে কিশোরীর যৌনাঙ্গ ও ‘ইউটেরো ভ্যাজাইনাল ক্যানেল’ তৈরি হয়। ক্যানেলের মধ্যে পিচ্ছিল একটি মেমব্রেন্ট লাগানো হয়। তার পর আড়াই মাস ধরে চলে পর্যবেক্ষণ। এই আড়াই মাস কখনও তাকে কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে, কখনও বাড়ি থেকে এসে সে দেখিয়ে গিয়েছে। বুধবার আবার তার অস্ত্রোপচার হয়। জরায়ুর উপরের অংশের মাংসপেশি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জরায়ুর নীচের অংশ। ‘ইউটেরো ভ্যাজাইনাল ক্যানেল’কে জুড়ে দেওয়া হয় জরায়ুর সঙ্গে। অসম্পূর্ণ নারীত্ব সম্পূর্ণ হয় তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy