অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
এ যেন আলাদিনের গল্প!
লোকাল ট্রেনের কয়েকটি কামরা সারাই হতে গিয়েছিল কাঁচড়াপাড়া রেল ওয়ার্কশপে। সেখানে একটি কামরার দরজা টেনে বার করতেই হতভম্ব কর্মীরা। দরজার সঙ্গেই বাইরে বেরিয়ে এল মানি ব্যাগ, মোবাইল এবং আরও কত কী!
কিন্তু কী করে? আসলে লোকাল ট্রেনের দরজার ফাঁকগুলোই এখন পকেটমারদের চুরির মাল রাখার গুদাম। বিভিন্ন স্টেশনে বা ট্রেনের কামরায় যে সব পকেটমারের দল ঘুরে বেড়ায়, এ কাজ তাদেরই। অনেক সময়ে ধরা পড়ার ভয়ে বা অপারেশন চালিয়ে টাকা বার করে খালি ব্যাগটি সেখানে রেখে দেয় তারা, যাতে পুলিশ তল্লাশি চালালেও তাদের কাছ থেকে ব্যাগ উদ্ধার করতে না পারে।
কী ভাবে জানা গেল এই তথ্য?
গত নভেম্বর মাসে এক সাংবাদিক রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন। শিয়ালদহ স্টেশনে লোকাল ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় ট্রেন কম ছিল। ফলে সকালেই থিকথিকে ভিড় প্ল্যাটফর্মে। ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে শান্তিপুর লোকালে ওঠার সময়ে ওই সাংবাদিকের মানিব্যাগটি কেউ তুলে নেয়। অগত্যা জিআরপি থানায় অভিযোগ জানিয়ে পরের ট্রেনে বাড়ি ফিরে যান তিনি। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও তথ্যই জানাতে পারেনি। ফলে ব্যাগ ফিরে পাওয়ার আশা কার্যত ত্যাগ করে দেন তিনি।
গত সোমবার কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপে লোকাল ট্রেনের ওই কামরাগুলি সারানোর কাজ শুরু হয়। তখনই দরজা টেনে বার করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে মানি ব্যাাগ। যাতে ছিল প্রেস কার্ড, প্যান কার্ড-সহ একাধিক ব্যাঙ্কের কার্ড। সেই কার্ড দেখে ফোন নম্বর জোগাড় করে ওয়ার্কশপের কর্মীরাই ওই সাংবাদিককে ফোন করে ব্যাগ উদ্ধারের খবর জানান।
ওয়ার্কশপের এক কর্মী গোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমনটা নতুন নয়। ইদানীং কামরা সারাই করতে এলেই আমরা ফাঁক-ফোকর দেখে নিচ্ছি। মাঝেমধ্যেই এ রকম ঘটনা ঘটছে। আমরা যাঁদের ফোন নম্বর পাই, তাঁদের খবর দিই।”
ওয়ার্কশপের কর্মীরা জানান, কিছু দিন আগেও বালিগঞ্জের একটি কলেজের এক ছাত্রীর ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। ওই কলেজে যোগাযোগ করে তাঁকেও ব্যাগ ফেরত দেওয়া হয়েছে। তার কিছু দিন আগে একটি মোবাইল ও একটি টাকা-ভর্তি ব্যাগও মিলেছে কামরার দরজার ফাঁক থেকে। পরে খবর নিয়ে জানা গিয়েছিল, টাকা-ভর্তি ব্যাগটি ছিল বিহারের এক ব্যক্তির। তাঁকেও খবর পাঠিয়ে ব্যাগ ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কর্মীদের এই সততার খবরে উত্সাহিত পূর্ব রেলের কর্তারা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “যাঁর পকেটমার হয়, তিনিই বুঝতে পারেন কী ঘটল। খোয়া যাওয়া জিনিসের কিছুটাও যদি তাঁকে ফেরত পাইয়ে দেওয়া যায়, সেটা তো বিরাট ব্যাপার।” তবে পকেটমারি যাঁদের আটকানোর কথা, সেই পুলিশের কিন্তু কোনও মাথাব্যথা নেই। উল্টে অভিযোগ উঠেছে, থানায় গিয়ে অভিযোগ লেখাতে গেলেও পুলিশ প্রথমেই বলতে শুরু করে, ‘পকেটমারি নয়, লিখুন হারিয়ে গিয়েছে।’
আর পকেটমারির তদন্ত, সে তো দূর অস্ত্! যদিও শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বেজ এই অভিযোগ মানতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “দিন দিন যাত্রীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে। স্বল্প পরিকাঠামো নিয়ে পুলিশ সর্বদাই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করে।”
বরং তাঁর দাবি, পুলিশের রেকর্ডে অপরাধের সংখ্যা নাকি কমেছে! পুলিশকর্তার এই দাবিতে যাত্রীরা অবাক হয়ে শুধু বলেছেন, ‘তাই?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy