ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের দু’টি ভবনকে অবশেষে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট দিয়ে দিল দমকল দফতর। আমরি সূত্রের খবর, এই সংক্রান্ত ফাইলটি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আটকে ছিল। সম্প্রতি আমরির সর্বোচ্চ কর্তারা নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বিষয়টি সহানুভূতি সহকারে দেখা হবে বলে তখনই আমরি-কর্তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার দিন কয়েকের মধ্যেই দমকল দফতর ঢাকুরিয়ার দু’টি ভবনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে।
সোমবার আমরির সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ঢাকুরিয়ার ওই দু’টি ভবনের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্রের আবেদন করেছি। তবে ফায়ার লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ার পরে হেল্থ লাইসেন্স পেতে আমাদের সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না।” দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “আমরা ওদের যা যা করতে বলেছিলাম, তা ওরা করেছে। তাই আমরা ওদের ছাড়পত্র দিয়েছি। তবে যে ভবনটি পুড়ে গিয়েছিল, সেটিকে এখনও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “দমকলের লাইসেন্সের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে হেল্থ লাইসেন্সের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র বা হেল্থ লাইসেন্স পেলেই তাঁরা ঢাকুরিয়ার ওই দু’টি ভবনে রোগী ভর্তি শুরু করে দিতে পারবেন বলে আমরি-কর্তৃপক্ষের দাবি। ওই দু’টি ভবনে মোট ২০০ জন (মূল ভবনে ১৫০ এবং তার পিছনের বাড়িটিতে ৫০ জন) রোগী ভর্তি করা যাবে। তবে ঢাকুরিয়া আমরির যে ভবনটিতে ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর আগুন লেগেছিল, সেটি খোলার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই ঘটনায় ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
রূপকবাবুর দাবি, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে দমকল ঢাকুরিয়া আমরির তিনটি ভবনেরই ফায়ার লাইসেন্স বাতিল করে। বাতিল করা হয় হেল্থ লাইসেন্সও। পরে আদালতের নির্দেশে এ বছরের গোড়ায় আমরির মূল ভবনের আউটডোরটি খোলার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য দফতর। মূল ভবন এবং তার পিছনের ভবনের সংস্কার হলেও তারা এতদিন দমকলের ছাড়পত্র পায়নি। আর দমকলের ছাড়পত্র আটকে থাকায় স্বাস্থ্য দফতরও হেল্থ লাইসেন্স দেয়নি। রূপকবাবু বলেন, বারবার পরিদর্শনের সময়ে ঢাকুরিয়ার দু’টি ভবন নিয়ে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন দমকলের অফিসারেরা। সেগুলির সবই তাঁরা অনুসরণ করায় দমকল সন্তোষ প্রকাশ করেছিল বলে রূপকবাবুর দাবি। এর পরেও দমকলের ছাড়পত্র আটকে থাকায় আমরি-কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। কারণ, ওই সংক্রান্ত ফাইলটি যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই রয়েছে এবং তিনি ছাড়পত্র না দিলে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা যে এক চুলও এগোবেন না, তা সরকারি তরফে আগেই তাঁদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।
দীর্ঘ চেষ্টার পরে গত মঙ্গলবার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান। সেই অনুযায়ী গ্রুপ সিইও রূপক বড়ুয়াকে নিয়ে নবান্নে যান ইমামি গ্রুপের যুগ্ম চেয়ারম্যান আর এস অগ্রবাল ও আর এস গোয়েনকা এবং তাঁদের ছেলে আদিত্য অগ্রবাল এবং মণীশ গোয়েনকা। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই বৈঠকের পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজারহাটে ৪৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল এবং একটি নার্সিং কলেজ খুলতে চান আমরির কর্তারা। সেই বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। সরকারি হাসপাতালের বিপুল রোগীর চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে আমরি কী ভাবে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, সে ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ভাবনাচিন্তা করতে বলেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই সাক্ষাতের সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দমকলের লাইসেন্স হাতে পেলেন আমরি কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দমকলের ছাড়পত্র দেওয়া আদতে আমরির জট খোলারই সূচনা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বহু দিন পর্যন্ত আমরি-কর্তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতেই রাজি ছিলেন না। ওই তরফের নিরন্তর চেষ্টায় বরফ গলেছে। ফায়ার লাইসেন্স আসলে হেল্থ লাইসেন্স পাওয়ারই আগের ধাপ। অল্প দিনেই তা দেওয়া হবে।”
তবে ওই হাসপাতালের উপরে সরকারের নজরদারি জারি থাকবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। হাসপাতালের পরিচালন সমিতির তরফে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য ভবনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy