বছরের শেষ রবিবার। ৩১ ডিসেম্বর কিংবা পয়লা জানুয়ারি সেই অর্থে ছুটি না থাকায় বছরের শেষ ছুটির দিনও বটে। সেই সঙ্গে নিম্নমুখী তাপমাত্রার পারদ। আর তিনে মিলেই রাস্তায় নেমে পড়ল কলকাতা। শীতের রোদ মেখে ছুটির মেজাজ জাঁকিয়ে বসল শহর জুড়ে। চিড়িয়াখানা থেকে ভিক্টোরিয়া, মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ইকো পার্ক সকাল থেকেই চলে গেল আট থেকে আশির দখলে। যুগলে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি, দলবেঁধে হইচই কিংবা সপরিবার মজায় মেতে চুটিয়ে ছুটি উপভোগ করলেন হাজার হাজার মানুষ।
দিনের শুরুতেই ম্যারাথন দৌড়। লেপ-কম্বলকে ‘গুডবাই’ করে সাতসকালেই পথে হাজির একঝাঁক টলি-তারকা, খেলোয়াড় এবং সাধারণ মানুষ। জিৎ, আবিরদের সঙ্গেই দৌড়ে পা মেলালেন লক্ষ্মী, দিন্দারা। সেই দৌড়ের রেশ কাটার আগেই ভিড় জমতে শুরু করেছে শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার কাছে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে নিম্নচাপ। যার জেরে বছরের শেষ দিকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। শীতের আমেজ পুরোদস্তুর উপভোগ করে নিতে তাই শেষ রবিবারের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে এতটুকু ছাড় দেয়নি বাঙালি।
আলসে দুপুরে ভিক্টোরিয়ার বাইরে টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ধৈর্য হারানো দূরে থাক, কচিকাঁচাদের সঙ্গে মজায় মাতলেন বড়রা। মূল ফটকের সামনে খাবারের দোকানে ঠাসাঠাসি ভিড়। আর ভিক্টোরিয়ার ভিতরে তখন সমস্ত বসার বেঞ্চ ‘হাউসফুল’। সংগ্রহশালাতেও উপচে পড়া ভিড়।
ভিক্টোরিয়ার বাইরে ঘোড়ার গাড়িতে প্রমোদ-ভ্রমণের লাইনও লম্বা হচ্ছিল ক্রমশ। টালিগঞ্জ থেকে এসে সপরিবার সেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বিবেক রায়। বললেন, “শীতের দুপুর মানেই ঘোড়ার গাড়ি মাস্ট। এ বছরটাও বাদ গেল না। তবে আজ অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হচ্ছে।” ময়দানে ঘোড়ার পিঠে চাপতে আসা বাবা-মায়ের হাত ধরে আসা খুদেদের ভিড়টাও কম ছিল না। ময়দান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলছিল মাদারি-কা-খেল। কোথাও সাইকেলের চাকায় উঠে দড়ির উপরে ব্যালান্স, কোথাও মাথায় ঘটি নিয়ে সরু দড়ির উপরে হেঁটে যাওয়া ভিড় জমল সর্বত্রই। সঙ্গে মাঠ জুড়ে ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন তো ছিলই।
শীতের ঘোরাঘুরি মানেই পছন্দের ঠিকানা চিড়িয়াখানা। সকাল থেকেই তাই চেনা চেহারায় জমাট বাঁধল ভিড়। সকাল থেকেই নানা কসরত দেখাতে তুমুল ব্যস্ত ‘বাবু’। লোহার জালের এ পারে দাঁড়িয়ে আশ মিটিয়ে শিম্পাঞ্জির কাণ্ড দেখলেন অসংখ্য মানুষ। দিনভর তার খাঁচার পাশে ভিড়ের চাপে পা ফেলা দায়। দুপুরে বিশ্রাম নিতে ঘরে ঢুকেছিল বাবু। দর্শকদের উৎসাহে অবশ্য ভাটা পড়েনি তাতেও। ফের তার বেরিয়ে আসার আশায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁরা। বারুইপুর থেকে আসা শমিতা মান্না বলেই ফেললেন, “সেলিব্রিটিকে না দেখে কি আর ফিরে যাওয়া যায়!”
নতুন অতিথিদের নিয়ে বেজায় খুশি ছিল দুই জেব্রার পরিবার। তাদের ঘিরেও ভিড় জমেছে দিনভর। সরীসৃপ ভবনেও লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন মানুষ। পিছিয়ে ছিল না দুই হস্তিশাবকও। খুদে হাতিদের দেখে উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছে খুদে দর্শকেরাও। ছোট্ট হাতির শুঁড় নাড়া দেখে মায়ের হাত ধরে লাফাতে লাফাতে ফিরেছে বছর ছয়েকের পুঁচকে। শুধু চিড়িয়াখানাতেই ভিড় এ দিন ষাট হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ বলেন, “গত বছরের শেষ রবিবারে দর্শক-সংখ্যা ছিল ৭৮,৩৭৫ জন। এ বছর তা ৭৮,৮১৩।”
বছরের শেষ রবিবারে সম্পূর্ণ অন্য চেহারায় রেলও। দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় অন্য ছুটির দিনের মতো ফাঁকা কামরার বদলে ছিল ঠাসা ভিড়। একই চেহারা মেট্রোরও। সকাল থেকে রাত ভিড় ছিল শপিং মল থেকে সিনেমা হল, সর্বত্রই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy