বাস ডিপো রেখে তার উপরে বহুতল গড়ে তুলে, তা লিজ চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। প্রাথমিক ধাপে সিএসটিসি-র তিনটি (ঠাকুরপুকুর, সরশুনা ও গড়িয়া পাঁচ নম্বর বাসস্ট্যান্ড) এবং সিটিসি-র একটি (গড়িয়াহাট) ডিপোকে ওই মডেলে লিজে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। ওই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভাও। আগামী বছরের শুরুতেই ওই চারটি ডিপো লিজ চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই রাজ্যের চারটি নিগম সিটিসি, সিএসটিসি, ডব্লিউবিএসটিসি এবং এসবিএসটিসি-র মোট ২৯টি ডিপোর প্রায় ৯০০ কাঠা উদ্বৃত্ত জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিজ চুক্তির ভিত্তিতে জমি হস্তান্তরের দু’রকম মডেল তৈরি করেছে পরিবহণ দফতর। প্রথম মডেলে ডিপোর ব্যবহারের জমি ছেড়ে দিয়ে বাকি জমি লিজ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় মডেলে জমি সরাসরি লিজ দেওয়া হবে না। পরিবর্তে তার উপরে বহুতল তৈরি করে তা লিজের মাধ্যমেই হস্তান্তর করা হবে।
প্রথম মডেলে সিটিসি-র ছ’টি ডিপোর (টালিগঞ্জ, কালীঘাট, বেলগাছিয়া, খিদিরপুর, শ্যামবাজার এবং গ্যালিফ স্ট্রিট) মোট ৩৭৩ কাঠা উদ্বৃত্ত জমি প্রাথমিক ভাবে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত বছর। এর মধ্যে কালীঘাট, খিদিরপুর এবং গ্যালিফ স্ট্রিটের জমি ২৫ কোটিরও বেশি টাকায় লিজ চুক্তিতে ছেড়েছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু শ্যামবাজার ডিপোর জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
প্রথম ধাপে সে ভাবে সাড়া না-মেলায় গত বছর নভেম্বরে বেশ কিছু শর্ত শিথিল করে ফের টালিগঞ্জ ও বেলগাছিয়া ডিপোর জন্য বিজ্ঞাপন দেয় সরকার। তাতে সাড়া মেলে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই বাড়ির উচ্চতা এবং পরিসর অনুযায়ী জমি ছাড়ার উর্ধ্বসীমা কমানোর জন্য আইন (এফএআর বা ফ্লোর এরিয়া রেশিও) সংশোধন করে কলকাতা পুরসভা। ফলে, ফের আইনি জটিলতায় আটকে গিয়েছে ওই দু’টি ডিপো লিজে ছাড়ার প্রক্রিয়া। আগামী বছরে ওই দু’টি ডিপোর জন্য ফের নতুন করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
লিজ চুক্তির ভিত্তিতে জমি ছাড়ার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই যে সব চুক্তির শর্ত শিথিল করার পরে সাফল্য মিলেছে, ‘মডেল টু’-এর ক্ষেত্রেও তা অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জমি কাকে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে চিহ্নিত সংস্থাকে। বাকি ৭৫ শতাংশ দিতে হবে জমি হস্তান্তরের ১৫ দিনের মধ্যে। জমি হাতে পাওয়ার পরে ডিপো রেখে তার উপরে বহুতল তৈরির জন্য ওই সংস্থাকে সময় দেওয়া হবে ১২ থেকে ২৪ মাস। ডিপোর জমির পরিমাণের ভিত্তিতে ওই সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
জমির উপরে বহুতল গড়ে লিজে ছাড়ার জন্য তিন ধাপের নিলাম প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছে পরিবহণ দফতর। প্রথম ধাপে সংস্থার অভিজ্ঞতা এবং আর্থিক ক্ষমতা খতিয়ে দেখা হবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ইচ্ছুক সংস্থা কী ধরনের বহুতল ওই ডিপোতে তৈরি করতে চায় এবং ডিপোর জমি তারা কী ভাবে রাখবে, তার বিস্তারিত মডেল খতিয়ে দেখবে সরকারের তৈরি করে দেওয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। মডেল চূড়ান্ত হলে আর্থিক প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হবে।
সারা দেশে এই ভাবে ডিপো বা সরকারি পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত জমি অক্ষত রেখে তার উপরে বহুতল গড়ে তোলার নজির সে ভাবে নেই। তবে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইয়ে এ ধরনের কয়েকটি মডেল আছে। সেগুলি ইতিমধ্যেই দেখে এসেছেন পরিবহণ দফতরের প্রতিনিধিরা। তার পরেই সিএসটিসি তিনটি এবং সিটিসি-র একটি ডিপোর জমিতে বহুতল গড়ে তা লিজ চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের ব্যাপারে শর্তাবলি তৈরি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy