হাইকোর্টেও জট কাটেনি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। জট কাটার পথে একটি বড় বাধা ছিল বাড়তি খরচ। সেই খরচ জোগানোর উপায় হিসেবে এ বার জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর গতিপথ ছেঁটে দেওয়ার প্রস্তাব দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। যদিও রাজ্য সরকারের এই প্রস্তাব আদৌ বাস্তবসম্মত কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নতুন প্রস্তাবে জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পকে এসপ্ল্যানেডেই শেষ করার কথা বলেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফ এই প্রস্তাবে বলেছে, এই মেট্রো বি বা দী বাগের বদলে এসপ্ল্যানেডে শেষ হলে ওই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার কমে যাবে। সেই বেঁচে যাওয়া খরচ দিয়ে বিকল্প রুটের কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের বাড়তি ১.৮ কিলোমিটারের অতিরিক্ত খরচ খানিকটা হলেও জোগানো যাবে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে ইস্ট-ওয়েস্ট, জোকা-বি বা দী বাগ এবং বর্তমান নিউ গড়িয়া-দমদম রুটের কেন্দ্র হয়ে উঠবে এসপ্ল্যানেড। পরিবহণ দফতরের দাবি, এর ফলে এসপ্ল্যানেড থেকে কলকাতার যে কোনও দিকে যাওয়ার মেট্রো পরিবহণ ব্যবস্থা থাকবে।
বৃহস্পতিবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জট কাটাতে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে রাজ্য সরকার। সেখানে ছিলেন সিইএসসি, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ, পূর্ত দফতর, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, সিটিসি, আরভিএনএল এবং গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের পরিবর্তিত রুট নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে রেলের সমীক্ষা সংস্থা রাইট্স। ইতিমধ্যেই সব পক্ষকে ওই রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ দিনের বৈঠকে জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দেয় সরকার। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, নয়া প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তার আশ্বাস দিয়েছে মেট্রো।
কিন্তু কেন এই প্রস্তাব?
রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত গতিপথে প্রকল্প তৈরির পথে মূল বাধা অতিরিক্ত খরচ। রাজ্যের প্রস্তাবে গতিপথের দৈর্ঘ্য বাড়ছে বলে খরচও বাড়ছে। আমাদের বক্তব্য, জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্প এসপ্ল্যানেডে শেষ হলে এক কিলোমিটার পথের খরচ কমবে। ওই খরচ দিয়ে খানিকটা হলেও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর অতিরিক্ত খরচ পূরণ হবে।” পাশাপাশি, কলকাতা শহরের যে কোনও দিকে মেট্রোয় যাওয়ার জন্য এসপ্ল্যানেডই অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে, যা নিত্যযাত্রীদের পক্ষেও সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
প্রসঙ্গত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প সময়ে শেষ না হওয়ায় ইতিমধ্যেই প্রকল্পের খরচ সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মেনে গতিপথ বদলানো হলে খরচ আরও ৩০ শতাংশ বাড়বে। এত খরচ বাড়ায় প্রকল্পের আর্থিক সাহায্যে ইতিমধ্যেই গড়িমসি করছে মেট্রোয় ঋণদানকারী জাপানি সংস্থা জাইকা। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পের এক কিলোমিটারের খরচ কমিয়ে তা যদি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে ঢোকানো যায়, তাতে প্রকল্প-খরচ অনেকটাই কমানো যাবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এসপ্ল্যানেডে কেন্দ্রীয় স্টেশন এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর গতিপথ তৈরি করতে বেশ কিছু দিন ধরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ বন্ধ রাখতে হবে। সে জন্য ওয়াই চ্যানেলের দিকে সমান্তরাল রাস্তা তৈরি করা যায় কি না, তা রাইট্সকে সমীক্ষা করে সাত দিনে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য বি বা দী বাগের মিনিবাস স্ট্যান্ড ও ট্রামলাইন কোথায় সরানো যায়, সময় নিয়ে তা রাইট্সকে বিস্তারিত সমীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
যদিও রাজ্য সরকার প্রস্তাব দিলেও ইস্ট-ওয়েস্ট এবং জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পের অন্যান্য বাধা কাটিয়ে প্রকল্পগুলি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান প্রশাসনের কর্তারা। আরভিএনএল-এর এক কর্তার কথায়, “এখনও পর্যন্ত মাঝেরহাটের পরে জোকা মেট্রো প্রকল্প আদৌ এগোতে পারবে কি না, সেটাই চূড়ান্ত নয়। সেনার আপত্তিতে জমি মেলেনি। তার পরে তো এসপ্লানেড না বি বা দী বাগে শেষ হবে, সেই প্রশ্নে আলোচনা হবে!” মেট্রোকর্তাদের একই বক্তব্য ইস্ট-ওয়েস্ট নিয়েও। এক রেলকর্তার কথায়, “এখনও তো দত্তাবাদের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের অন্যান্য বেশ কিছু বাধাও কাটেনি।”
যদিও পরিবহণ দফতরের কর্তারা দু’টি প্রকল্পেরই জট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী। এক পরিবহণ কর্তার কথায়, “জোকা প্রকল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই রেল মন্ত্রকের সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে জমি-জট কাটার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরও অনেকগুলি জট আমরা কাটানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছি। শুধু দত্তাবাদটাই বড় বাধা। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।”
তবে কি তিন মেট্রো প্রকল্পের কেন্দ্র হতে চলেছে এসপ্ল্যানেড? আশা দেখছেন না মেট্রো-কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, “সরকার তো সবে মৌখিক প্রস্তাব দিয়েছে। বিস্তারিত প্রস্তাব আসুক। তার পরে এ নিয়ে মন্ত্রক যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy