Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা

......

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

নব্বই পেরিয়েও বিস্মৃত ‘আপনজন’

তপনবাবুর ছবির বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তিনি বাংলা সাহিত্যকে আশ্রয় করে ছবি তৈরি করেছেন। এই ধারাটা কিন্তু একদম কমে গেছে। বাংলা সাহিত্যকে আশ্রয় করে ছবি করার ফলে ক্রমাগত নতুন নতুন বিষয় এসেছে, ক্রমাগত নতুন নতুন চরিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি এবং মানুষের ও সমাজের ভেতরের সত্যিকারের রূপের যে বাহার তা খুব সুন্দর ভাবে আমরা তপনবাবুর ছবিতে লক্ষ করেছি।’ কথাগুলি তরুণ মজুমদারের। তপন সিংহকে (১৯২৪-২০০৯) নিয়ে চিত্রভাষ-এর বিশেষ সংখ্যায় বলছিলেন: ‘আমার সঙ্গে তপনবাবুর সম্পর্ক অনেকটা দাদা আর ছোট ভাইয়ের।... আমি মাঝে মাঝে স্টুডিওতে তপনবাবুর ঘরে যেতাম; তপনবাবুও কখনও কখনও আমার ঘরে আসতেন, আড্ডা হত।’ তেমনই এক স্মৃতি তোলা রয়েছে সুকুমার রায়ের স্থিরচিত্রে (বাঁ দিকে তরুণবাবুর ‘সংসার সীমান্তে’র মহরতে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে তপনবাবু, সঙ্গে সন্ধ্যা রায়, সামনে বসে সত্যজিত্‌ রায়)। নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল সাহিত্যস্নাত এই চলচ্চিত্রকারের নব্বই বছর, বাঙালি বড়ই আত্মবিস্মৃত জাতি! সত্যিই, রবীন্দ্রনাথের কথা যদি ছেড়েও দিই, শরত্‌চন্দ্র প্রেমেন্দ্র মিত্র থেকে শংকর প্রফুল্ল রায় কেউই প্রায় বাদ নেই, যাঁর কাহিনি নিয়ে তপনবাবু ছবি করেননি।

অবশ্য নিজের কাহিনি নিয়ে ছবি করেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি গল্প হলেও সত্যি, হারমোনিয়াম, আদালত ও একটি মেয়ে, আতঙ্ক, হুইলচেয়ার। মাঝের ছবিতে ‘আতঙ্ক’র শ্যুটিংয়ে তাঁর সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি বলেন ‘মানিকদা ছাড়া তপনদাই হাতে ধরে অভিনয় শিখিয়েছেন।’ এ ছবিও সুকুমার রায়ের, তপনবাবুর কর্মকাণ্ড ঘিরে তাঁরই তোলা ছবি, পোস্টার, বুকলেট, লবিকার্ড নিয়ে উইভার্স স্টুডিয়োয় ২১-২৩ নভেম্বর (৩.৩০-৮.৩০) সেনসোরিয়াম-এর প্রদর্শনী: ‘আপনজন’; ভাবনা ও প্রয়োগ: শৌনক চক্রবর্তী। প্রথম দিন সন্ধে সাড়ে ৬টায় উদ্বোধন করবেন গৌতম ঘোষ। দ্বিতীয় দিনে সাঙ্গীতিক সন্ধ্যা, থাকবেন তপনবাবুর ছবির গায়িকারা, বনশ্রী সেনগুপ্ত হৈমন্তী শুক্লা। এবং প্রসেনজিত্‌ চট্টোপাধ্যায়। শেষ দিনে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনেমাটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর তথ্যচিত্র ‘পদাতিক’।

ভারতবন্ধু

কবিতা ছাড়া সমাজ হতে পারে না, লিখেছিলেন তিনি। মেক্সিকোর নোবেলজয়ী সাহিত্যিক অক্তাভিও পাজ-এর জন্মশতবর্ষ এ বছর। লিখতেন স্প্যানিশে, মেক্সিকো সিটি থেকে প্যারিস, বার্কলে থেকে কেমব্রিজ, কবিতাযাপনে কেটেছে দীর্ঘ সময়। ১৯৬২-তে ভারতে আসেন মেক্সিকোর দূত হয়ে। স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে ভারতের বন্ধুতার নেপথ্যে তিনিই। সেই সূত্র ধরেই কিছু স্প্যানিশ ভাষাবিদ গড়লেন ‘লস ইস্পানোফিলোস’, অনুবাদ, আলোচনা, জার্নাল, ওয়ার্কশপ-এর মধ্যে দিয়ে স্প্যানিশ ভাষা-সাহিত্যের চর্চা ও প্রসার যার লক্ষ্য। তাদের উদ্যোগেই এ বার ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটেয় আইসিসিআর-এ অক্তাভিও স্মরণে অনুষ্ঠান। তাঁর কবিতার অনুবাদ পড়ে শোনাবেন সংস্থার সদস্যরা।

উত্‌সবের সূত্রে

সিনেমা-উত্‌সবের ধরতাই রেখেই আরও ছবির পরব শহরে। স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি ও প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট-এর আয়োজনে শুরু হচ্ছে অষ্টম কলকাতা আন্তর্জাতিক এলজিবিটি ফিল্ম ও ভিডিয়ো উত্‌সব ‘ডায়ালগ্‌স’। ১৯-২৩ নভেম্বর, ম্যাক্সমুলার ভবনে। উত্‌সবের আবহেই প্রকাশিত হল সুগত সিংহের বই বাস্তবোত্তর চলচ্চিত্র এবং আরও কিছু (সহজ পাঠ)। সেলুলয়েড থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি-পথে সিনেমার যাত্রা ধরা আছে এ বইতে। চলচ্চিত্রোত্‌সবে অতিথি হয়ে আসার সুবাদে নিজের হাতেই তাঁর জীবন-মৃত্যুর আত্মকথন টেলস ফ্রম দ্য ক্যানসার ওয়ার্ড প্রকাশ করলেন পল কক্স, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাদপ্রতিম পরিচালক। বাংলা আকাদেমিতে, প্রকাশক ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্যোগে। এ দিকে এ শহরে আজও সিনেমার পুস্তিকা, পোস্টার ইত্যাদির কোনও সংগ্রহশালা নেই, ব্যক্তিগত সংগ্রাহকরাই ভরসা। রুদ্রজিত্‌ মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি সংগ্রহ করেছেন প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘মুক্তি’র (১৯৩৭) দুর্লভ পোস্টার (সঙ্গের ছবি)। এটিও ১৯৩৭-এই প্রকাশিত।

রবীন্দ্র-আদর্শ

খুব অল্প লোকেই জানেন, কবি-সুরকার-সংগীতজ্ঞ জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্বপ্ন দেখতেন গ্রামোন্নয়নের, একটি আদর্শ পশুপালন ও কৃষিকর্ম কেন্দ্র গড়ে তুলতেও উদ্যোগী হন। অনুপ্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ। সৃজনকর্ম ও সমাজকর্মের এই মেলবন্ধই রবীন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের সঙ্গে মার্টিন কেম্পশেন-এর যোগসূত্র। এ দেশের সঙ্গে মার্টিনের সম্পর্ক তিন দশকেরও বেশি। জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রসাহিত্য এবং রামকৃষ্ণ কথামৃত। সম্পাদনা করেছেন রবীন্দ্রচর্চা সংক্রান্ত গ্রন্থ। দুই দশক ধরে শান্তিনিকেতনের কাছে ঘোষালডাঙা ও বিষ্ণুবাটি গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। এখানকার সাঁওতাল বাসিন্দাদের সঙ্গেও তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। এ বছরের জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্মারক বক্তৃতাটি দিচ্ছেন তিনিই। শিল্পচর্চা ও সমাজচর্চা উভয় ক্ষেত্রেই রবীন্দ্র-আদর্শ কী ভাবে মানুষকে প্রাণিত করেছে, তা-ই তাঁর বক্তৃতার বিষয়: ‘রবীন্দ্রনাথস রিসেপশন: গ্লোবাল অ্যান্ড লোকাল: সাম নিউ ইনসাইটস’। ত্রিগুণা সেন হল-এ (যাদবপুর), ১৮ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়।

প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে

ঝাড়গ্রামের হেমন্তকুমার মাহাতো স্পঞ্জ আয়রন দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। এই দূষণের প্রতিবাদে গ্রামের মানুষদের সংগঠিত করে দূষণ প্রতিরোধ কমিটি তৈরি করে জেল খেটেছেন ঝাড়গ্রামের উপাংশু মাহাতো। শান্তিপুরের পম্পা দাস লড়াই করে চলেছেন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই সব মানুষের কাজকে স্বীকৃতি জানাচ্ছে নাগরিক মঞ্চ। মঞ্চের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২২ নভেম্বর বিকেল তিনটেয় সুবর্ণবণিক সমাজ হলে আলতাফ আমেদ, তহমিনা মণ্ডল, ঘাসিরাম হেমব্রম, কার্তিক বান্দাদের মতো ২৫ জন প্রান্তিক সমাজকর্মীকে সম্মান জানানো হবে।

নাট্য-অর্ঘ্য

তেইশ পেরিয়ে চব্বিশে পা। তবে, শুধু ফিরে দেখা নয়, বরং নিত্যনতুন ‘এক্সপেরিমেন্ট’-এর মাধ্যমে ‘কসবা অর্ঘ্য’র নাট্য-পরিক্রমা চলছেই। এই উপলক্ষে ২৪-৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ‘অর্ঘ্য উইক’। এই নাট্য সপ্তাহেই এ দেশে প্রথম তাঁদের প্রযোজনা ‘মেমোরিয়া’ নিয়ে আসছেন আন্তর্জাতিক নাট্যব্যক্তিত্ব ইউজেনিও বারবা, আছে ছ’টি শো। ‘মেমোরিয়া’ নাতসি ক্যাম্প থেকে পালানো এক মেয়ের কাহিনি। তাঁর নাট্যদল ‘ওডিন থিয়েট্রেট’-এর কর্মকাণ্ড ডেনমার্কে। অর্ঘ্য-র মণীশ মিত্র জানালেন, গত দু’বছর ধরেই তাঁরা ডেনমার্কে বারবা-র দলের প্রযোজনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও মঞ্চস্থ হবে ‘মালদহ থিয়েটার প্ল্যাটফর্ম’-এর ‘নানা ঘর’ এবং ‘মহিষাদল শিল্পকৃতি’র ‘চাণক্য’। থাকছে ‘অর্ঘ্য-র নিজস্ব চারটি প্রযোজনাও। রোটারি সদন, মিনার্ভা, অ্যাকাডেমি, শিশির মঞ্চে।

অনমনীয়

বেআইনি ভাবে জলাভূমি বুজিয়ে বহুতল নির্মাণের বিরোধিতা এবং ওই ঘটনায় পদস্থ সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়ায় বামফ্রন্ট জমানায় তাঁকে বদলি করা হয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে পরিবেশ দফতরে। কিন্তু সেখানেও বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় সমান সক্রিয়। পরে অবশ্য তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় পর্ষদের মুখ্য আইন আধিকারিক করে। বর্তমান শাসক দল ক্ষমতায় আসার তিন মাস আগে, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে তাদের জনসভায় মাইক বাজানোর অনুমতি দেননি বিশ্বজিত্‌বাবু। পালাবদলের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ছুটিতে যেতে বাধ্য হন। সরকারি ভাবে অবসর ২০১২-র এপ্রিলে, কিন্তু দূষণ রুখতে এগিয়ে চলা থামেনি। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০১২-র ইন্দিরা গাঁধী পর্যাবরণ পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি। ওঁর কথায়, ‘এই স্বীকৃতি পশ্চিমবঙ্গ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের।’

অন্য কলকাতা

কত কাল ধরেই তো দেখে আসছি কলকাতাকে, কিন্তু নিমাইদার (ঘোষ) তোলা ছবিগুলো দেখে নতুন করে আবার চিনতে পারলাম কলকাতাকে, এ যেন আর একটা কলকাতা। নাখোদা মসজিদ তো আগেও দেখেছি, কিন্তু নিমাইদার ছবিতে ফের তা নতুন... বলছিলেন সুজয় ঘোষ, ‘কহানি’-র পরিচালক। সুজয়ের ছবিতে যে কলকাতা উঠে এসেছে, তারও প্রেরণা নিমাই ঘোষ।

ক্যালকাটা ক্লাবে, তাদের ও হার্পার কলিন্স-এর উদ্যোগে সুজয় ও নিমাই ঘোষের কথোপকথন জমে উঠেছিল বুধবার সন্ধেয়। উপলক্ষ: নিমাই ঘোষের ছবির অ্যালবাম ‘কলকাতা’ (হার্পার কলিন্স) প্রকাশ। শঙ্করলাল ভট্টাচার্য বইটিতে গদ্য লিখেছেন কলকাতা নিয়ে। সঙ্গে নিমাইবাবুর তোলা সেই নাখোদা মসজিদ, পুরনো কলকাতা, ফুটপাথের ভিড়, আর ট্রাম।

বাঁচার লড়াই

গণবিজ্ঞান আন্দোলন শুকিয়ে কাঠ! কথাটা হজম করা কষ্ট হলেও সত্যি, অন্তত কিছু মানুষ তা হাড়ে-হাড়ে বোঝেন। তবু বিজ্ঞানমনস্কতাকে বুকে আগলে আজও মুষ্টিমেয় কিছু সংগঠন ও পত্রিকা টিকে আছে। প্রয়াত অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আমৃত্যু কুসংস্কার ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের ঝান্ডা উঁচু রেখেছিলেন। ‘উত্‌স মানুষ’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সে কাজই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাঁর অকালপ্রয়াণের পর পত্রিকা চালু রেখেছেন ক’জন সহযাত্রী। তাঁকে মনে রেখে প্রতি বছর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এ বারের আমন্ত্রিত বক্তা বোলান গঙ্গোপাধ্যায়। বিষয় ‘অসংগঠিত মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই’। ২২ নভেম্বর বিকেল ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে।

কলকাতার প্রত্নতত্ত্ব

কলকাতা শহরটা ক’দিনের, যে তার আবার প্রত্নতত্ত্ব? অবাক লাগতেই পারে। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব তো শুধু মাটির তলার কথা নয়, মাটির উপরেও অনেক কিছু আজও রয়েছে চোখের আড়ালে। সে দিকেই এ বার নজর দিয়েছে এ শহরের প্রত্নতত্ত্ব চর্চার সুখ্যাত প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। ২০-২১ নভেম্বর অবনীন্দ্র সভাগৃহে তাদের ঊনবিংশ বার্ষিক অনুষ্ঠানে নানা বিশিষ্ট গবেষকের কথায় উঠে আসবে বৃহত্তর কলকাতার অজানা অতীত। প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে তপতী গুহঠাকুরতা, প্রধান অতিথি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়।

নয়নচাঁপা

সাতসকালে নয়নচাঁপা, চম্পা, মালতিরা ভিড় ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে এসে ছড়িয়ে পড়ে শহরের বাড়িগুলোয়। ওদের ছাড়া চোখে সর্ষেফুল শহুরে গিন্নিদের। অথচ চলতেই থাকে মুখঝামটা, কোথাও মাইনে বাকি, কোথাও বাবুদের লালসা। সন্ধ্যায় নিজের সংসার, স্বামীর অত্যাচার। ভোর থেকে রাত এটাই ‘নয়নচাঁপা’দের রোজনামচা। এই মেয়েদের জীবন কি এই ভাবেই চলবে, পরিচালক শেখর দাশ প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর ‘নয়নচাঁপার দিনরাত্রি’তে। একের পর এক প্রান্তিক মানুষজনকে নিয়ে ছবি করে চলেছেন শেখর। এটির নামভূমিকায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ওঁদের জীবনের দুঃসহ দিকগুলো আগে এত বিস্তারিত ভাবে এ বঙ্গের কোনও ছবিতে উঠে আসেনি।” রূপার মতো গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী কেন ‘নয়নচাঁপা’? শেখরের কথায়, “অনেক বছর আগে এমন চরিত্রের কথা রূপা বলেছিলেন। মনে হয়েছিল ও চরিত্রটা ডিজার্ভ করে। প্রচুর খেটেছে রূপা।” প্রচুর পরিশ্রমেও মানসিক ভাবে একেবারেই ক্লান্ত হননি, চরিত্রটা তাঁর ভয়ানক শখের বলছিলেন রূপা। সঙ্গে জানালেন মেকি গয়নায় জৌলুসহীন মানুষগুলোর প্রতি নিজের দুর্বলতার কথাও। “ঠিক-বেঠিক নিয়ে অনেককে বকাবকি করলেও পাড়ার নয়নচাঁপারা আমায় পছন্দ করে। কাজের ফাঁকে বাটিতে কিছু দিয়ে খেতে বলা বা বাড়িতে কিছু এলে ওদের ভাগ করে দেওয়া, ছোট থেকেই আমার অভ্যাস।” ছবি নিয়ে রূপা আশাবাদী। “ছবিটা হার্ডকোর সত্যি। ছবি দেখে বাড়ির ‘নয়নচাঁপা’দের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে লোকে দু-বার ভাববে আশা করি।” ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২৮ নভেম্বর।

স্মরণ

অনেক কঠিন বিপদ পার করে, নির্মম পুলিশি অত্যাচার সয়ে, মৃত্যুর গা ঘেঁষে বেরিয়ে এসেছিল মেয়েটি। অথচ ভরা জীবনের মাঝখান থেকে এমন হঠাত্‌ তার চলে যাওয়া। মীনাক্ষী সেন-এর (১৯৫৪-২০১৪) আত্মীয়বন্ধু, পাঠকরা এখনও বেদনাস্তব্ধ। একমাত্র সন্তান, সদ্যতরুণ সম্ভব যেন এখনও ঠিক বুঝে নিতে পারছে না বাস্তবকে। ন্যাশনাল কনফারেন্সেও মা তো তাকে ছেড়ে যায়নি কখনও। হলের একপাশে চেয়ারে তাকে বসিয়ে রেখেছে। তা হলে এখন সে কী করে... মীনাক্ষী সেনের জেলের ভিতর জেল বইটি বাংলার পাঠকদের প্রবল নাড়া দিয়েছিল। মনোচিকিত্‌সক মহলেও রীতিমত চর্চিত হয় জেলে বন্দি মনোরোগী বা ‘পাগল’দের নিয়ে লেখা এই তথ্যসমৃদ্ধ বই।

রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে প্রেসিডেন্সি জেলে দীর্ঘ কারাবাসকালে যে মমতা দিয়ে সামাজিক অন্যায় ও সহানুভূতিহীনতার শিকার এই মেয়েদের দেখেছিলেন মীনাক্ষী, সেই মমতাই যেন তাঁর সমগ্র সংক্ষিপ্ত জীবনটির অভিজ্ঞান। দিল্লির ‘কথা পুরস্কার’ পাওয়া অসামান্য গল্প ‘স্নেহলতা’ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা লেখা, ত্রিপুরার মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষতা, সাহিত্য একাডেমির নর্থ-ইস্ট সেন্টার অব ওরাল লিটারেচার-এর অধ্যক্ষতা। প্রতিটি কাজই একটি নির্দিষ্ট পথে একনিষ্ঠ ভাবে চলার চিহ্ন। নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে সে সব কাজেও, কিন্তু তেজি ও জেদি স্বভাবের শান্ত মেয়েটি হার মানেননি। ২০০২ সালে জীবনসঙ্গীকে হারানোর পর থেকে যেন বড় একা হয়ে যাচ্ছিলেন মীনাক্ষী। তবু তাঁকে সর্বদা ঘিরে ছিল বন্ধুদের সযত্ন হাত। শেষ প্রহরে তাঁরাই ছিলেন কাছে। ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ‘কারিগর’-এর উদ্যোগে বাংলা আকাদেমি সভাঘরে ও ২৯ নভেম্বর ‘খোঁজ এখন’-এর উদ্যোগে সুবর্ণবণিক সমাজ সভাঘরে মীনাক্ষীকে স্মরণ করবেন তাঁর প্রিয়জনেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy